রংপুর অঞ্চলে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ

রংপুর অঞ্চলে কুমড়া চাষ
ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলার চরে কুমড়া চাষ বাড়ছে। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

গত বছর বালুচরে কুমড়া চাষ করে আশানুরূপ লাভবান হওয়ায় এ বছর বৃহত্তর রংপুরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় বেড়েছে কুমড়ার চাষ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর রংপুরের এই ৫ জেলায় কুমড়া চাষ হয়েছে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে।

২০২২ সালে কুমড়া চাষ হয়েছিল ১২ হাজার হেক্টর ও ২০২১ সালে কুমড়া চাষ হয়েছিল ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

এ বছর কুমড়ার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।

এই ৫ জেলায় ৯০ শতাংশ কুমড়া চাষ হয়েছে চরাঞ্চলে। চর এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার কৃষক কুমড়া চাষের সঙ্গে জড়িত।

এ বছর কুমড়ার বাম্পার ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা।

ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ প্রায় ২৬ নদ-নদীর বুকে এখন বিস্তীর্ণ বালু চর। বালু মাটিতে ফসল তেমন ফলানো যায় না বলে চরের ভূমিহীন কৃষকরা চরের উপযোগী ফসল ফলাচ্ছেন।

কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে বালু মাটিতে কুমড়া চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। চরের ভূমিহীন কৃষকদের কারিগরি ও বীজ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা। তবে অধিকাংশ কৃষকই নিজ উদ্যোগে বালু মাটিতে কুমড়া চাষ করছেন।

রংপুর অঞ্চলে কুমড়া চাষ
এ বছর কুমড়ার বাম্পার ফলন ও আশানুরূপ দাম পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের কুমড়া চাষিরা ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৮০০ থেকে ১ হাজারটি কুমড়া হয়। প্রতিটি কুমড়ার ওজন ৫ থেকে ১০ কেজি হয়ে থাকে।

আরও জানান, গত বছর তারা খেত থেকেই প্রতি কেজি কুমড়া ১০ টাকা দরে বিক্রি করেছিলেন। কুমড়া চাষে তারা লাভবান হচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের ব্যাঙমারা চরের আয়শা বেওয়া (৫৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর ২০ শতাংশ জমি থেকে ৪ হাজার ৩০০ কেজি কুমড়া পেয়েছিলাম। সেগুলো ৪৩ হাজার টাকায় বিক্রি করি। খরচ হয়েছিল ১০ হাজার টাকা।'

'এ বছর ২০ শতাংশ জমিতে কুমড়া চাষ করেছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'একটি বেসরকারি সংস্থা বীজ, সার ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।'

'আশা করছি গত বছরের তুলনায় এ বছর ভালো ফলন ও দাম পাবো,' যোগ করেন তিনি।

ব্রহ্মপুত্রের চর জোরগাছ এলাকার সালেহা বেগম (৫০) ডেইলি স্টারকে বলেন, '৫ জন মিলে চরে এক একর জমিতে কুমড়া চাষ করেছি। গত বছর এই জমিতে কুমড়া চাষ করে প্রত্যেকে ৪০ হাজার টাকা করে ভাগ পেয়েছি। আশা করছি, এ বছর আয় আরও বাড়বে।'

'কুমড়া চাষে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হয়' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'ঠিকমতো পরিচর্যা করা গেলে কুমড়ার ভালো ফলন পাওয়া যায়। সবজি বিক্রেতা ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি আমাদের কাছ থেকে কুমড়া নেন।'

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের স্বল্প আয়ের পরিবারের লোকজনকে কর্মমুখী রাখতে সহযোগিতা করছে সাসটেইনড অপরচুনিটিজ ফর নিউট্রিশন গভর্নেন্স (সঙ্গো) প্রকল্প। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ ও কর্ডএইড।

প্রকল্পটির চিলমারী উপজেলা ব্যবস্থাপক আহসানুল কবির বুলু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবারে পুষ্টি-চাহিদা মেটাতে চরের স্বল্প আয়ের মানুষকে কুমড়াসহ বেশকিছু সবজি উৎপাদনে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তারা কুমড়া উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়েও তা বিক্রি করে আশানুরূপ আয় করছেন। তাদেরকে বীজ-সার ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছি।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্রের চর পার্বতীর মিজানুর রহমান (৫৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর চরে ৫৫০টি কুমড়া চারা লাগিয়েছি। খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকা। আশা করছি ৫০-৫৫ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করতে পারবো। গত বছর ৫ হাজার টাকা খরচ করে ২০০টি চারা লাগিয়ে কুমড়া বিক্রি করেছি ৩২ হাজার টাকা।'

'জৈব সার ব্যবহার করে চরে কুমড়া চাষ করছি। সেচের পানি পেতে বেগ পেতে হয়,' যোগ করেন তিনি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তার চর গোকুন্ডা এলাকার আহাদুল ইসলাম (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত কয়েক বছর ধরে নিজ উদ্যোগে চরে কুমড়া চাষ করে আসছি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর কুমড়া বিক্রি করে ৬০-৭০ হাজার টাকা আয় করি। সঠিকভাবে যত্ন নিলে বালু মাটিতে কুমড়ার ফলন খুবই ভালো হয়।'

এ বছর তিনি প্রায় ২ বিঘা জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন বলেও জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরের বালু মাটিতে বেশির ভাগ কুমড়া হচ্ছে। গত বছর কুমড়া চাষে চরের কৃষকরা লাভবান হওয়ায় এ বছর কুমড়া চাষ বেড়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েক বছর আগে উৎপাদিত কুমড়া বিক্রি নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তা করতেন। এখন কুমড়ার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তাদেরকে দুশ্চিন্তা করতে হচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English

4.8 lakh narcotics cases pending despite deadline

Despite legal provisions for quick resolution, more than 4.8 lakh narcotics cases have been pending across the country as of March 31 this year, according to a Supreme Court report.

5h ago