বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি: ডেইলি স্টারের প্রশ্নের জবাবে যা বলল আদানি গ্রুপ

গৌতম আদানি। ছবি: রয়টার্স

ভারতের ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তির (পিপিএ) কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেতে আদানি গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দ্য ডেইলি স্টার। ভারতের আহমেদাবাদের সদর দপ্তর থেকে ইমেইলে পাঠানো ডেইলি স্টারের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

দ্য ডেইলি স্টার: আদানি পাওয়ার কি অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কেজিপ্রতি ৪ হাজার ৬০০ কিলোক্যালোরির কয়লা আমদানি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে কেজিপ্রতি ৬ হাজার কিলোক্যালোরি মানের কয়লার দাম নেবে?

আদানি গ্রুপ: একটি স্বার্থান্বেষী মহল ভুল তথ্য ছড়ানোর কারণে কিংবা কয়লার দাম নির্ধারণে সম্যক ধারণা না থাকায় এ ধরনের প্রশ্ন এসেছে।

কেজিপ্রতি ৬ হাজার ৩৩২ কিলোক্যালরি কয়লার দামের বৈশ্বিক সূচকের সঙ্গে আনুপাতিকভাবে সামঞ্জস্য রেখেই কেজিপ্রতি প্রকৃত কিলোক্যালরি কয়লার দামের বিল করা হবে।

৪ হাজার ৬০০ কিলোক্যালরি মানের কয়লা বয়লারের জন্য উপযোগী এবং আসলে নিম্নমানের নয়। বৈশ্বিক সূচকের হারেই এই মানের কয়লার দাম ধরা হবে, যা চুক্তিপত্রে স্পষ্টভাবে বলা আছে।

যেমন: ২০২৩ সালের মার্চের এইচবিএ সূচক অনুযায়ী, প্রতি মেট্রিক টন ৬ হাজার ৩৩২ কিলোক্যালোরি কয়লার দাম ১৯৭ ডলার। যেহেতু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৪ হাজার ৬০০ কিলোক্যালরির কয়লা ব্যবহার হবে, এর ফ্রি-অন-বোর্ড মূল্য হবে প্রতি মেট্রিক টন ১৪৩ ডলার, এর বেশি নয়।

ডেইলি স্টার: আদানি পাওয়ার পর্যাপ্ত কর ছাড় সুবিধা পেলেও পিডিবিকে সেই বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে না।

আদানি গ্রুপ: এই প্রসঙ্গটি তোলার জন্য ধন্যবাদ। আদানি এখনো পিডিবির কাছ কোনো চার্জ নেয়নি। কাজেই এসব বক্তব্য স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গোড্ডা প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ তুলনামূলকভাবে অন্যান্য প্রকল্পের চেয়ে কম হবে।

কারণ, চুক্তি অনুযায়ী মার্চে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন খরচ হবে ১০ দশমিক ৪ ডলার, যা অন্যান্য অনুরূপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের তুলনায় অনেক কম। পাস-থ্রু নিয়মের কারণে অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহন খরচ এর প্রায় দ্বিগুণ হয়।

গোড্ডা প্রকল্পটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ায় এখান থেকে বিদ্যুৎ কিনতে বাংলাদেশকে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী প্রযোজ্য কর, শুল্ক ও সেস দিতে হবে না।

ফলে, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের তুলনায় গোড্ডা প্রকল্পের বিদ্যুতের দাম আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণকে আরও প্রতিযোগিতামূলক দামে বিদ্যুৎ দিতে পারবে এই প্রকল্পটি।

ডেইলি স্টার: অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ নেওয়ার তো কোনো যুক্তি নেই।

আদানি গ্রুপ: এটাও ছড়িয়ে দেওয়া ভুয়া তথ্যের আরেকটি উদাহরণ। অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো কর আদানির বিদ্যুতে থাকছে না। আপনি আগেও যেটা বলেছেন, এই প্রকল্পকে বেশ কিছু কর সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী আদানি পাওয়ারের ক্যাপাসিটি চার্জ রামপাল, এস আলম ও মাতারবাড়ির মতো বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক।

উপরন্তু, আদানি পাওয়ার নিজেদের সুনামের খাতিরে ফিক্সড চার্জ ছাড় দিয়েছে এবং বগুড়ার গ্রিড স্টেশন ও সংশ্লিষ্ট ট্রান্সমিশন সিস্টেম চালু না হওয়া পর্যন্ত কোনো ক্যাপাসিটি চার্জ নিচ্ছে না।

বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ায় পর ২০২৩ সালের মার্চ থেকে আদানি পাওয়ার ঝাড়খণ্ড চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফিক্সড চার্জ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে।

ডেইলি স্টার: শুল্ক ছাড়াও রাজনৈতিক দিক থেকেও আদানিকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

আদানি গ্রুপ: লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, এই ক্ষেত্রে চুক্তির শর্তগুলো বাংলাদেশের রামপাল, এস আলম ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুরূপ।

ডেইলি স্টার: বছর শেষে সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।

আদানি গ্রুপ: সমন্বয় হবে প্রতি ইউনিটের দাম ও সরবরাহ করা মোট বিদ্যুতের হিসাবে, যেটা আগেও বলেছি। পিডিবি কর্মকর্তারা গোড্ডায় এবং বাংলাদেশে যথাযথভাবে সিল করা মিটারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে এবং এর ডেটা বাংলাদেশের ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচে থাকবে। এসব তথ্য অনলাইনেও পাওয়া যাবে।

ডেইলি স্টার: টেস্ট রিডিংয়ের ব্যর্থতায় পিডিবির কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ নেই চুক্তিতে।

আদানি গ্রুপ: বিদ্যুৎ সরবরাহ ও গ্রহণের মিটারিংয়ের ওপর ভিত্তি করে মিটারিং কাউন্টার পরীক্ষা করার সম্পূর্ণ অধিকার আছে পিডিবির। এসব মিটার তাদের প্রকৌশলীরা ব্যবহার উপযোগী করে পুরোপুরি সিল করে দিয়েছেন।

কাজেই, অনুগ্রহপূর্বক আপনাদের তথ্যে এটা সংশোধন করে নিবেন। এ ছাড়া, মিটার রিডিংয়ে ভুলের ক্ষেত্রে চুক্তিপত্রে যথেষ্ট শাস্তির বিধান আছে, যেমনটি আছে রামপাল, এস আলমসহ অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তিতে।

ডেইলি স্টার: চুক্তিপত্রের বিতর্কিত দিক নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলে আদানি পাওয়ার কি এর জন্য রাজি হবে?

আদানি গ্রুপ: আগেও স্পষ্ট করেছি যে, এই চুক্তির শর্তগুলো শুধু ন্যায্যই নয়, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণও।

চুক্তিপত্র একটি আইনি নথি। একাধিক অংশীদার ও ঋণদাতাদের মধ্যে অনেক আলোচনার পরে এটি তৈরি করা হয়।

তবে, আমরা এটা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, পায়রা বা রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক দামে কিংবা তাদের চেয়ে কম দামে আমরা বিদ্যুৎ সরবরাহ করব।

এর কারণ হচ্ছে, আমরা প্রতিযোগিতার বিষয়ে অবগত এবং একটি স্বার্থান্বেষী মহল নানা ধরনের ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের গ্রাহকদের স্বার্থে সবকিছু করব।

বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো প্রস্তুত করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেরি হলেও আমরা কোনো ফিক্সড চার্জ নেইনি। এটা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের অঙ্গীকারের উদাহরণ। চুক্তির প্রতিটি ধারা গ্রহণযোগ্যতা ও সমতার ভিত্তিতে করা হয়েছে।

আদানি পাওয়ার অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কাজ করে এবং সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের নিয়মিত পরিচালন ও আর্থিক বিবরণীর তথ্য জানিয়ে থাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Crowd control: Police seek to stop use of lethal weapon

The police may stop using lethal weapons and lead pellets for crowd control as their widespread use during the July mass uprising led to massive casualties and global criticism.

8h ago