দেশের বিদ্যুৎ খাত আদানির হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে: টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

শেয়ার ও হিসাব জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত ভারতের আদানি পাওয়ার থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অসম, অস্বচ্ছ ও বৈষম্যমূলক চুক্তির বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই বিতর্কিত কোম্পানির হাতে জিম্মি হয়ে পড়তে পারে জানিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। 

জাতীয় স্বার্থে, বিশেষ করে এই চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা দেশের জনগণকে বইতে হবে বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট খাতে বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে চুক্তির শর্তসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণ, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সংশোধন এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।  

টিআইবি জানায়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় অবস্থিত আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনতে দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের তুলনায় প্রায় ৩ গুণ বেশি দাম দিতে হবে। আবার এই বেশি দামে আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনতে হবে- এমন বাধ্যবাধকতার কথাও রয়েছে পাওয়ার পারচেজ অ্যাগ্রিমেন্টে (পিপিএ)।'

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'শেয়ারবাজারে ফাঁকিবাজি এবং হিসাবপত্রে কারসাজি ও জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত আদানি গ্রুপের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে পিডিবির এই চুক্তি আন্তর্জাতিকভাবে নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণে অসম ও অস্বচ্ছ এবং বাংলাদেশের জন্য অভূতপূর্বভাবে বৈষম্যমূলক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, চুক্তিটিতে বাংলাদেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে আদানি গোষ্ঠীর স্বার্থকে এমনভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত এই প্রতিষ্ঠানের হাতে জিম্মি হয়ে যেতে পারে, যার বোঝা এ দেশের জনগণকে বইতে হবে।'  

অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক 'আদানি ওয়াচ'সহ নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সূত্রে প্রকাশিত তথ্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে কয়লা ব্যবহৃত হবে তা আসবে আদানির মালিকানাধীন ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিতর্কিত খনি থেকে ও আদানির জাহাজে করে, যা খালাস হবে আদানির মালিকানাধীন বন্দরে এবং পরিবহণ করা হবে আদানির মালিকানাধীন রেলে করে। আবার উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবহণ করা হবে আদানিরই নির্মিত সঞ্চালন লাইনে। আরও জানা যাচ্ছে, জ্বালানি খরচসহ এই পুরো প্রক্রিয়ার ব্যয় বইতে হবে বাংলাদেশকে, যা বৈশ্বিক বিদ্যুৎ খাতের অভিজ্ঞতায় অভূতপূর্ব। ফলে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের জন্য দেশের অন্য যেকোনো সরবরাহকারী থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি হারে মূল্য দিতে হবে। একইভাবে, আদানির গোড্ডা প্রকল্পের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দিতে হবে দেশি-বিদেশি উদ্যোগে পরিচালিত অন্য যেকোনো প্রকল্পের তুলনায় অগ্রহণযোগ্য বেশি হারে।' 

এই বৈষম্যমূলক চুক্তির চূড়ান্ত বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার কারও নেই উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পিডিবি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকদের প্রতি আহ্বান, অনতিবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে এই চুক্তির সব শর্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণপূর্বক সংশোধন করা হোক এবং দেশের ও জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে প্রয়োজনে এই চুক্তি বাতিল করা হোক। পিডিবি তথা দেশের জনগণকে জিম্মি করে বাংলাদেশকে আদানি গ্রুপের জালিয়াতিনির্ভর ব্যবসা প্রসারের অভয়ারণ্যে রূপান্তর করার দৃশ্যমান ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করার বিকল্প নেই।' 

 

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

8h ago