‘রাশিয়াকে অস্ত্র দিতে পারে চীন’, যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি নাকচ করল বেইজিং
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, চীন ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র পাঠিয়ে সহায়তা করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। বেইজিং এ দাবির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আজ সোমবার বার্তাসংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, 'চীন নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রই নিরবচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র পাঠাচ্ছে'।
নিয়মিত ব্রিফিং এ ওয়াং আরও বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাবো তাদের নিজেদের কার্যকলাপের দিকে নজর দিতে এবং অন্যের ওপর দোষ না চাপিয়ে ও মিথ্যে তথ্য না ছড়িয়ে পরিস্থিতির উন্নয়নে শান্তি ও আলোচনার পথ সুগম করতে।'
'আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার, কোন পক্ষ আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে ও শান্তির স্বপক্ষে লড়ছে, এবং কোন পক্ষ জ্বলন্ত আগুনে তেল ঢেলে প্রতিপক্ষকে আগ্রাসন চালিয়ে যেতে আরও উৎসাহিত করছে', যোগ করেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন জানান, চীন রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধে 'প্রাণঘাতী সহায়তা' দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে, যার মাঝে অস্ত্র ও গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত।
ব্লিঙ্কেনের মন্তব্যের পরই এলো চীনের উত্তর।
এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় চিনের 'গুপ্তচর বেলুন' উড়তে দেখা যায়। যুদ্ধবিমান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে এই বেলুন ভূপাতিত করে ওয়াশিংটন। এরপর থেকেই চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপড়েন দেখা দেয়। সে সময় বেইজিং সফরের পরিকল্পনা থাকলেও তা স্থগিত করেন ব্লিঙ্কেন।
শনিবার জার্মানির মিউনিখে বৈশ্বিক নিরাপত্তা সম্মেলনে চীনের ওয়াং ই'র সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন ব্লিঙ্কেন। এর কয়েক ঘণ্টা আগে ওয়াং চীনের বেলুন ভূপাতিত করার জন্য ওয়াশিংটনকে 'হিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত' বলে অভিহিত করেন।
ব্লিঙ্কেন জানান, তিনি ওয়াংকে বলেছেন যে এ ধরনের কোনো উদ্যোগ 'আমাদের সম্পর্কের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে'।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালানোর অল্প সময় আগে রাশিয়া চীনের সঙ্গে 'সীমাহীন' অংশীদারিত্বের চুক্তিতে সই করে। পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি হলেও বেইজিংয়ের সঙ্গে মস্কোর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে চীনের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি পশ্চিমের দেশগুলো গভীর মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেন, এ যুদ্ধে রাশিয়া জয়ী হলে তা তাইওয়ানের প্রতি চীনের আচরণকে বৈধতা দিতে পারে। চীন এখন পর্যন্ত এ যুদ্ধকে 'আগ্রাসন' বলতে অস্বীকার করেছে এবং এর নিন্দাও জানায়নি।
সম্মেলনের এক প্যানেলে বক্তব্য রাখার সময় চীনের ওয়াং আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ অবসানের আহ্বান জানান। তিনি ইউরোপের নেতাদের 'ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা' করে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার উপদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, 'অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কিছু মহল আলোচনায় সাফল্য আসুক, তা চায় না বা খুব শিগগির যুদ্ধের অবসান হোক, তাও চায় না।' তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে জানাননি 'বিশেষ মহল' বলতে কাদের কথা বোঝাচ্ছেন।
এই বৈঠকের মাধ্যমে ২ দেশের সম্পর্কে স্থিতাবস্থা ফিরে আসবে, এটাই ছিল ওয়াশিংটনের প্রত্যাশা। গত আগস্টে তাইওয়ানে তৎকালীন মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাইওয়ান সফরে গেলে ২ দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
মিউনিখে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেন, 'যুদ্ধের শুরু থেকে বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে, যা ওয়াশিংটনের জন্য উদ্বেগের বিষয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আগামীতে চীন যদি রাশিয়াকে প্রাণঘাতী সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়, তবে এর রেশ হিসেবে আসবে আরও আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞ ও নিয়মতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা।'
Comments