চীনা গুপ্তচর বেলুনটি আবহাওয়া গবেষণার জন্য নয়: যুক্তরাষ্ট্র

সাউথ ক্যারোলাইনার মার্টল বিচ থেকে মার্কিন নৌবাহিনীর নাবিকরা চীনের গুপ্তচর বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে। ছবি: রয়টার্স
সাউথ ক্যারোলাইনার মার্টল বিচ থেকে মার্কিন নৌবাহিনীর নাবিকরা চীনের গুপ্তচর বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে। ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি মার্কিন আকাশসীমায় চীনের একটি বেলুন দেখা যাওয়ার পর ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে একে ভূপাতিত করা হয়। বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের পর এ বিষয়ে কূটনীতিকদের ব্রিফিং দিয়েছে ওয়াশিংটন।

গতকাল মঙ্গলবার বার্তাসংস্থা রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, দেশটি ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ে ৪০ দেশের বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে এই বেলুনের বিষয়ে ব্রিফিং দিয়েছে।

কর্মকর্তা জানান, মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েনডি শেরম্যান সোমবার ৪০ দূতাবাসের প্রায় ১৫০ বিদেশী কূটনীতিককে এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। এছাড়াও বেইজিং এ স্থাপিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সোমবার ও মঙ্গলবার বিদেশী কূটনীতিকদের সামনে বেলুনের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যত বেশি সম্ভব তথ্য ভাগ করে নিচ্ছি যাতে তারাও এ ধরনের অভিযানের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারে'।

গত সপ্তাহে মার্কিন আকাশে চীনের বেলুন দেখা যাওয়ার পর ওয়াশিংটন ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তার পরিকল্পিত বেইজিং সফর বাতিল করেন।

১ সপ্তাহ মার্কিন আকাশসীমায় বিচরণ করার পর শনিবার একটি জঙ্গি বিমান থেকে ছোঁড়া সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বেলুনটি ভূপাতিত হয়। এরপর আটলান্টিক মহাসাগরে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের যৌথ অভিযানে বেলুনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে ওয়াশিংটন।

চীন এটিকে আবহাওয়া গবেষণার কাজে ব্যবহৃত বেলুন বলে দাবি করে। তাদের মতে এটি ভুলক্রমে মার্কিন আকাশসীমায় ঢুকে গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে সামরিক সক্ষমতা ব্যবহার করে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই এটিকে 'গোয়েন্দা বেলুন' হিসেবে অভিহিত করে এবং জানায়, চীনারা একে নজরদারির কাজে ব্যবহার করছিল।

বেইজিং এর ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, যে এই বেলুনটি আবহাওয়া গবেষণা বেলুন ছিল না।

বেলুনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পরের মুহূর্তের ছবি। ছবি: রয়টার্স
বেলুনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পরের মুহূর্তের ছবি। ছবি: রয়টার্স

ব্রিফিংয়ে তারা কিছু তথ্য উপস্থাপন করে, যা থেকে ধারণা করা যায় এটি গুপ্তচরবৃত্তির কাজে ব্যবহার হচ্ছিল। এই আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এরকম কিছু কূটনীতিক রয়টার্সকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওয়াশিংটন জানায়, বেলুনটি চীনের সামরিক বাহিনী 'পিপলস লিবারেশন আর্মি' নিয়ন্ত্রণ করছিল।

বেইজিং এর ব্রিফিং এ উপস্থিত কূটনীতিকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে জানিয়েছে, বেলুনে থাকা সৌর প্যানেলের শক্তিমত্তা থেকে প্রমাণ হয় যে, সাধারণ আবহাওয়া বেলুনের চেয়ে এর বেশি জ্বালানির প্রয়োজন হত, এবং এর উড্ডয়ন-পথ বাতাসের স্বাভাবিক গতিপথের সঙ্গে সমন্বিত ছিল না। মার্কিন কর্মকর্তারা আরও জানান, বেলুনটিতে রাডার ও প্রপেলার সংযুক্ত করা হয়েছিল।  

একজন বেইজিং ভিত্তিক এশিয়ান প্রতিরক্ষা কূটনীতিক বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিফিং এবং আমাদের নিজস্ব বোধবুদ্ধি থেকে আমাদের অনুমান, এটা বেসামরিক আবহাওয়া বেলুন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।'

তিনি আরও জানান, চীন সরকার বেলুনের সত্ত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা আরেকটি সন্দেহের কারণ।

এ ঘটনার পর পেন্টাগন সাংবাদিকদের জানিয়েছে, এই বেলুনটি একটি 'চীনা আকাশযান বহরের' অংশ এবং এরকম আরও অনেক বেলুন আছে যেগুলো অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এখনও বিশ্লেষকরা জানেননা এই বেলুন বহরে কতগুলো বেলুন বা অন্যান্য আকাশযান রয়েছে। তবে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালের পর থেকে 'কয়েক ডজন' বেলুন গুপ্তচরবৃত্তির সঙ্গে জড়িত আছে এবং এগুলো চীনের একটি বেসামরিক প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিতে নির্মিত।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh exports to EU

RMG exports to EU rise by 2.99% in Jan-Nov

In the 11 months, Bangladesh shipped garments worth $18.15 billion, second highest after China

1h ago