ধানখেতে এই টিনের ছাউনিটি একটি সরকারি স্কুল

উত্তর মাঝেরচর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
উত্তর মাঝেরচর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের উত্তর মাঝেরচর। এলাকাটির চারদিকে ফসলি জমি, খেতের আইল ছাড়া যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। কৃষকরা জমিতে বোরো ধান চাষে করতে ব্যস্ত। এর মাঝে চোখে পড়ে বাঁশের খুঁটির ওপর তৈরি একটি টিনের ছাউনি।

কোনো রকম দেয়াল-বেড়া বা দরজা-জানালাহীন এই ছাউনিটি দেখে আর যাই হোক, কোনোভাবেই স্কুল মনে হবে না কারো। তবে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি সত্যিই একটি সরকারি স্কুল, যার নাম উত্তর মাঝেরচর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বেহাল দশার এই স্কুলে কাগজে-কলমে ৮৪ জন শিক্ষার্থী আছে, আছেন ৫ জন শিক্ষক। স্কুলের পক্ষ থেকে দ্য ডেইলি স্টারের কাছে বলা করা হয়েছে, যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় এখন ৮৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০-১৫ জন স্কুলে আসে। তবে স্থানীয় অভিভাবকরা বলছেন, ওই স্কুলে কোনো শিক্ষার্থীকে যাওয়া-আসা করতে দেখেন না তারা।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উত্তর মাঝেরচর আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় ২০০৪ সালে কৃষ্ণপুর গ্রামের একটি স্থানে। নদী ভাঙনের কারণে ২০১১ সালে ওই গ্রামের আরেকটি স্থানে স্কুলটিকে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সালে স্কুলটির জাতীয়করণ হয়। এরপর আবারও নদী ভাঙনের কবলে পড়লে ২০২২ বছর জুলাই মাসে স্কুলটিকে বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টায় এই প্রতিবেদক যান স্কুলটিতে। এই সময়ে ক্লাস চলার কথা থাকলেও সেখানে তখন কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি। ৫ জনের মধ্যে ৩ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় একজনকে বসে থাকতে দেখা গেছে।

স্থানীয় অভিভাবক শিউলি আক্তার ও জসিমউদ্দিন জানান, কোনো শিক্ষার্থীকে স্কুলটিতে আসতে দেখেন না তারা। ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে ২-৩ জন মাঝেমাঝে উপস্থিত থাকেন। স্কুলটিতে যাতায়াতের রাস্তা বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় তারা তাদের সন্তানদের অন্য স্কুলে ভর্তি করেছেন।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮৪ জন। যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় এখন ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। গেল বছর স্কুলে প্রবেশের জমি ফাঁকা পড়ে ছিল বলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসতে সমস্যা হয়নি। এ বছর কৃষকরা জমিতে চাষাবাদ করায় সমস্যা তৈরি হয়েছে।'

খেতের আইল ছাড়া স্কুলটিতে যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, 'স্কুলটির জন্য সরকারি ভবনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু জমি জটিলতার কারণে ভবন নির্মাণ হচ্ছে না। দ্রুত জমি জটিলতার অবসান করে ভবন নির্মাণ শুরু করা হবে।'

'জানুয়ারি মাস থেকে পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে। তবে আগে যথারীতি পাঠদান চলেছিল,' দাবি করেন তিনি।

এদিকে স্কুলটির জমিদাতা ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ১ বিঘা জমি দান করেছি। স্কুলটির জমির কোনো জটিলতা নেই। শুধু প্রধান শিক্ষকের গাফিলতির কারণে স্কুলের এই বেহাল দশা হয়েছে।' 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম বলেন, 'স্কুলটি আগের স্থানে স্থানান্তর করে ভবন নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। স্কুলটিতে কতদিন ধরে পাঠদান করা হচ্ছে না এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যায় কেমন গড়মিল আছে সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। শিক্ষকদের গাফিলতি পাওয়া গেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Ending impunity for crimes against journalists

Though the signals are mixed we still hope that the media in Bangladesh will see a new dawn.

14h ago