চিনির পর এবার লবণ সংকট

স্টার ফাইল ছবি

কয়েকদিন ধরেই বাজারে চিনির সংকট চলছে। অনেক দোকানে চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও প্রতি কেজিতে দাম নিচ্ছে ১১০-১২০ টাকা। চিনির পর এবার লবণের সংকট দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গ্যাস সংকট ও যথাসময়ে আমদানি না করতে পারায় দেশে লবণের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে।

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে কয়েকটি খুচরা দোকানে গিয়ে লবণ পাওয়া যায়নি। কারণ জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলেন তারা লবণ পাচ্ছেন না।

বিষয়টি যাচাই করতে কারওয়ান বাজারের লবণ কোম্পানির পরিবেশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা মিল থেকে লবণ পাচ্ছেন না।

এসিআইয়ের লবণ পরিবেশক শোভন এন্টার প্রাইজের কর্মকর্তা মো. রনি দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, 'এই মহূর্তে আমাদের কাছে কোনো লবণ নেই। তাই সাধারণ বিক্রেতাদের লবণ সরবরাহ করতে পারছি না। আমরা নিজেরাই লবণ পাচ্ছি না।'

কনফিডেন্স লবণের পরিবেশক সিরাজ জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারি রবিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আজকে কোনো লবণ সরবরাহ করতে পারিনি। যোগাযোগ করা হলে আমাদেরকে বলা হচ্ছে গ্যাস সংকটরে কারণে নাকি উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে।'

তিনি বলেন, 'জুলাই মাসে আমরা ২৫ কেজির বস্তা কিনেছিলাম ৭৬০ টাকায়, আগস্টে ছিল ৭৭০ টাকা। ২ দিন আগে একই বস্তার দাম পড়েছে ৮০০ টাকা। এর সঙ্গে পরিবহন ও মজুরি বাবদ ১০ টাকা খরচ আছে। এ কারণে লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর প্রভাব বাজারেও পড়েছে। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লবণ পাওয়া যাচ্ছে না।'

এ ব্যাপারে এসিআই লিমিটেডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এসিআই, কনফিডেন্স, ফ্রেশ, তীর এমন কিছু প্রতিষ্ঠান ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধিত লবণ বাজারজাত করে। অন্যদের চেয়ে আমাদের গ্যাস বেশি লাগে। গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের নিজেদের উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। অন্যদেরও উৎপাদন কমার কথা।'

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'সরকারি হিসাব মতে আমাদের দেশে লবণের উৎপাদন হয় প্রায় ১৮ লাখ টন। কিন্তু চাহিদা ২৩ লাখ টনের মতো। বাকি ৫ লাখ টন লবণ আমদানি করা হয়। চলতি বছর আমদানি করা হয়েছে দেড় লাখ টন। এই যে সাড়ে ৩ লাখ টন ঘাটতি, মূলত সেই কারণেই লবণের সংকট তৈরি হয়েছে। তবে ডিসেম্বরে দেশে উৎপাদিত নতুন লবণ বাজারে আসা শুরু করলে সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি। তার আগে কিছুদিন একটু সংকট হতে পারে।'

বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সংগঠনের সভাপতি নুরুল কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশে মূলত ডিসেম্বর থেকে মধ্য মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদন হয়। এই সময়ে দাম তুলনামুলক কম থাকে। আমাদের উদপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি। এই যে একটা ঘাটতি একারণেই মূলত লবণের সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের মিলগুলোর কাছে কাঁচামাল নেই যে আমরা লবণ সরবরাহ করব।'

তিনি বলেন, 'চলতি বছরের মে মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখের দিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) সঙ্গে আমাদের সভা হয়েছিল। সেখানে আমরা ৫ লাখ টন লবণ ঘাটতির কথা বলেছিলাম। কিন্তু জুনের শেষে দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর আমি সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকবার চিঠি দিয়েও লবণ আমদানির অনুমোদন পাইনি। এ কারণেই লবণের সংকট দেখা দিয়েছে এবং দাম বাড়ার সম্ভাবনা আছে।'

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরে দেশে লবণের উৎপাদন হয়েছে ১৮ দশমিক ৩ লাখ টন। চাহিদা ২৩ দশমিক ৩৫ লাখ টন। ঘাটতি ৫ লাখ টনের কিছু বেশি।

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমানের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'বাজারে লবণের সংকট বা মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমাদের মতে বাজারে লবণের কোনো সংকট নেই।'

ব্যবসায়ীদের লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি কেন জানতে চাইলে মাহবুবর রহমান বলেন, 'এই বিষয়ে আমরা কী করব তা মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।' 

 

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

5m ago