অস্থির বাজারে দর্শকের ভূমিকায় চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন

চিনি। ছবি: স্টার

সরবরাহ সংকটের মুখে প্রায় প্রতিদিনই চিনির দামে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। চিনির ব্যবহার আছে এমন খাবারেরও দাম বাড়ছে। এই সংকটজনক পরিস্থিতিতেও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) দেশের মানুষকে স্বস্তি দিতে বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে পারছে না।

উৎপাদন কম থাকায় সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের কাছে মজুদের পরিমাণও কম।

২০২১-২২ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোতে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদন হয়েছে, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।  আগের অর্থবছরের উৎপাদন ছিল ৪৮ হাজার টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৮২ হাজার টন।

বর্তমানে বিএসএফআইসির কাছে ২ হাজার ৩৫০ টন চিনি মজুদ আছে। কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী মাসে আখ মাড়াই মৌসুমের শুরুতে এই মজুদ বাজারে ছাড়া হবে। দেশে বছরে ২৫ লাখ টন চিনির চাহিদা আছে।

মজুদ কম থাকার কারণে সংস্থাটি ১৩ অক্টোবর পাইকারি বিক্রেতাদের মাধ্যমে বাজারে চিনি বিক্রি স্থগিত করে।

বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, 'আমরা এই মুহূর্তে অসহায়, কারণ আমাদের চিনির মজুদ এখন ন্যুনতম পর্যায়ে আছে।'

চাহিদা মেটাতে বিএসএফআইসির চিনি আমদানির কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সংকট নিরসনের প্রয়োজনীয় চিনি আমদানির জন্য আমাদের কাছে তহবিল নেই।'

চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় এখন পূর্ণ সক্ষমতায় চিনি পরিশোধন করা যাচ্ছে না। চিনির দাম বাড়ার পেছনে এ বিষয়টিকে তারা মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এক মাস আগে চিনির দাম কেজিতে ৮৪ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন বেড়ে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

তবে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, কিছু বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, 'বাজার স্থিতিশীল করতে বিএসএফআইসির উচিত তাদের চিনির মজুদ বাজারে ছেড়ে দেওয়া।'

চিনির দাম কমাতে আমদানির ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য সরকারকে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নিতে হবে।'

ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে সরকার ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর ৬টি চিনি কল বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই দেশে চিনির উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এই ৬টি চিনিকল আধুনিকায়নের পর আবার উৎপাদন শুরু হবে।

তবে এখন পর্যন্ত, চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন ও  উৎপাদন শুরুর বিষয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

উল্লেখ্য, বিএসএফআইসি একটি লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা ২০২২ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সংস্থাটি ২০২১-২২ সালে ৮৮০ কোটি টাকা লোকসান করেছে (প্রোভিশনাল)।

তবে এই লোকসানের আগের বছরের ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা থেকে ১৫ শতাংশ কম ছিল।

বাংলাদেশের বার্ষিক ২৫ লাখ টন চিনির চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া ও জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে সারা বিশ্বেই চিনির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

 

Comments

The Daily Star  | English

Over 102,000 annual deaths in Bangladesh linked to air pollution

Study also finds air pollution behind 266 million sick days every year hurting the economy

9m ago