চিনি সংকটের পেছনে ৭ কারণ দেখছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

ছবি: স্টার

বাজারে চিনির সংকট এবং দাম বৃদ্ধির পেছনে ৭টি কারণ চিহ্নিত করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এসব কারণের মধ্যে আছে গ্যাস সংকট, চিনি বেচা-কেনায় মুদ্রিত ভাউচার না দিয়ে কারসাজি এবং ব্যাংকে এলসি খোলার জটিলতা।

বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকটি রিফাইনারি এবং ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।

সোমবার তৈরি করা প্রতিবেদনটিতে ১১টি সুপারিশের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

চিনির বাজারে অস্থিরতার প্রেক্ষিতে ২৪ অক্টোবর চিনির মিল মালিক, পরিবেশক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা, ক্যাব, বাজার ব্যবসায়ী সমিতি, ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি এবং পেট্রোবাংলার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে চিনির মজুদ পর্যালোচনা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

বৈঠকের বরাতে রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশে চিনির ঘাটতি নেই। অপরিশোধিত চিনির মজুদ ও পাইপ লাইনে সর্বমোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টন চিনি মজুদ আছে।

সংকটের কারণ

বাজারে চিনি সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে গ্যাস সংকট ও ব্যাংকের এলসি খোলার জটিলতার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, চিনি কেনা-বেচায় মুদ্রিত (পাকা) ভাউচার দেওয়া হচ্ছে না। এতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি লাভের সুযোগ পাচ্ছেন মিল মালিক, ডিলার ও পাইকাররা।

পণ্য সরবরাহের জটিলতা সম্পর্কে বলা হয়, চিনি সরবরাহ নিতে ট্রাকগুলোকে ৭-৮ দিন পর্যন্ত মিল গেটে অপেক্ষা করতে হয়। দীর্ঘ অপেক্ষার ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়।

ঢাকার মৌলভীবাজার, কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউনহল মার্কেট, মিরপুর শাহআলী মার্কেট, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি করতে গিয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দেখেছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে খোলা চিনি বিক্রি করা হচ্ছে না। বাজারে প্যাকেটজাত চিনির সংকট আছে। কোথাও কোথাও চিনির প্যাকেট কেটে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। প্যাকেটের গায়ে মুদ্রিত দাম মুছে বেশি দামে বিক্রি করার কথাও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

চিনি উৎপাদন ও মজুদের তথ্য সংগ্রহের জন্য গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর ৫টি চিনির মিল পরিদর্শন করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মেঘনা সুগার রিফাইনারি, সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল মোনেম সুগার রিফাইনারি, দেশবন্ধু সুগার মিল ও এস. আলম সুগার রিফাইনারি পরিদর্শনে উঠে আসা চিত্র সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন, সাপ্লাই অর্ডার স্লিপে পণ্যের মূল্য উল্লেখ না করা, মিল গেট মূল্য উল্লেখ না করা, পাকা রশিদ/চালানে পণ্যের একক মূল্য উল্লেখ না করার মতো অনিয়ম দেখা গেছে। এর মধ্যে ২টি মিল সক্ষমতার তুলনায় অর্ধেক উৎপাদন করছিল।

সুপারিশ

বাজার স্থিতিশীল করতে চিনির মিলগুলোতে গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ বজায় রাখা, মিলগুলোকে সর্বোচ্চ সক্ষমতায় উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া, এলসি খোলার জটিলতা দূর করা, মিল গেটে দ্রুত পণ্য সরবরাহ করা, এলাকা ভিত্তিক ডিলার নিয়োগ, মিল মালিক থেকে খুচরা পর্যায়ে কেনা-বেচায় মুদ্রিত ভাউচার দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া, বাজারে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি চালানোসহ মোট ১১টি সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ব্যপারে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, 'গ্যাস ও এসলি খোলায় সমস্যাসহ যেসব সংকট আছে তা ১ সপ্তাহের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস পেয়েছি। আমাদের যে বিষয়গুলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে আমরা সেগুলো করারও চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, 'গ্যাস সংকট ও এলসি জটিলতা নিরসন হলে সংকট থাকবে না বলে আশা করছি।'

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সারাদেশে ১০৩টি অভিযান চালিয়ে ২৭৮ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

If consensus commission fails, it will be a collective failure: Ali Riaz

He made the remarks in his opening statement during the 14th day of the second phase of dialogues with political parties

28m ago