সানস্ক্রিনের ব্যবহার ও সতর্কতা

একেকজনের ত্বক যেমন একেক রকম, তেমনি ত্বকের সমস্যাও ভিন্ন। একজনের ত্বকে যা দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, আরেকজনের ক্ষেত্রে হয়ত হিতে বিপরীত। তবে ত্বকের যত ধরনের সমস্যা দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার পেছনে অনেকটাই দায়ী সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি।

এছাড়াও ত্বকের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল সানবার্ন বা পোড়াত্বক। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। এই অতিবেগুনী রশ্মি বা সানবার্ন থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখাই মূলত সানস্ক্রিনের কাজ।

প্রতিদিন আমাদের ত্বক ২ ধরনের সূর্য রশ্মির মুখোমুখি হয়। একটি ইউভি-এ অন্যটি ইউভি-বি। ইউভি-এ রশ্মি ত্বকের ভেতর পর্যন্ত যেয়ে ত্বকের কোলাজেন প্রোডাকশন কমিয়ে দেয়। যার ফলে চামড়া কুঁচকে যায়, বলিরেখা দেখা দেয়, ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যায়, ফাইন লাইনের মতো সমস্যা এবং রিংকেল তৈরি হয়। ইউভি-বি রশ্মি মূলত সানবার্নের মতো সমস্যার জন্য দায়ী। এছাড়া ত্বকের কালো দাগ বা পিগমেন্টেশনের সমস্যাগুলো হয় ইউভি-বি এর কারণে।

কানাডিয়ান ডার্মাটোলজি অ্যাসোসিয়েশন এবং আমেরিকান একাডেমি অফ ডার্মাটোলজি উভয় সংগঠনই মেলানোমা এবং ননমেলানোমা উভয় ত্বকের ক্যান্সারের প্রকোপ কমাতে এবং প্রতিরোধের জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহারের সুপারিশ করে। কেননা কানাডায়, প্রতি বছর ৮০ হাজারেরও বেশি ত্বকের ক্যান্সার ধরা পড়ে। যার ৮০-৯০ শতাংশ অতিবেগুনী রশ্মি বিকিরণের সংস্পর্শে হয় বলে অনুমান করা হয়।

ইউভি-এ এবং ইউভি-বি দুরকম সূর্য রশ্মিই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই সানস্ক্রিন কেনার আগে সেটি ইউভি-বি এর পাশাপাশি কত ভালো ইউভি-এ রশ্মি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে তা বিবেচনা করতে হবে। কেনার আগে লেবেলে পিএ+, পিএ++, পিএ + + + এরকম কিছু লেখা আছে কিনা দেখে নিতে হবে যতগুলো প্লাস চিহ্ন থাকবে ত্বক তত সুরক্ষিত থাকবে।

সানস্ক্রিন বাছাই

সানস্ক্রিন কিংবা যেকোনো প্রসাধনী ত্বকের ধরন অনুযায়ী ব্যবহার করলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। সাধারণত মানুষের ত্বকের ধরণকে ৪টি ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, সংবেদনশীল ও শুষ্ক। বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ধরনের ত্বকের জন্য আর্দ্রতা বজায় রাখবে এমন সানস্ক্রিন বাছাই প্রয়োজন।

সানস্ক্রিন ব্যবহার করলে যদি ঘাম হয় বিশেষত তৈলাক্ত ত্বক যাদের, তারা সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে ম্যাটিফাইং সানস্ক্রিন, জেল সানস্ক্রিন, কিংবা স্প্রে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারে। এতে ত্বক সহনশীল থাকবে এবং ঘামও কম হবে। অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকলে ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। সমুদ্রের পানিতে নামতে অথবা সুইমিং পুলে গোসল করতেও ওয়াটারপ্রুফ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। তা নাহলে পানি এবং ঘামের সঙ্গে সানস্ক্রিন উঠে যাবে। অর্থাৎ তেলতেলে ত্বক হলে জেল বেসড বা ওয়াটার বেসড সানস্ক্রিন। শুষ্ক ত্বক হলে অয়েল বেসড সানস্ক্রিন ভালো কাজ করবে।

সানস্ক্রিন বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অপশন থাকে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে বিষয় লক্ষ্য করা প্রয়োজন তা হচ্ছে এসপিএফ। এসপিএফ হল সান প্রটেক্টর ফ্যাক্টর। সানস্ক্রিন ক্রিম ছাড়া রোদে গেলে ত্বক মাত্র ২০ মিনিটেই ত্বক পুড়ে যায়। এই পুড়ে যাওয়ার সময়টুকুকে বর্ধিত করে দেয় এসপিএফ। মূলত এসপিএফ এর উপরেই নির্ভর করে সানস্ক্রিন একজনের ত্বককে কত সময়ের জন্য সুরক্ষা দিতে পারে।

এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি থাকলে তা ত্বককে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত করতে পারে। এসপিএফ-৩০ আল্ট্রাভায়োলেট-বি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত ব্লক করে দেয়। আবার এসপিএফ-৫০ আল্ট্রাভায়োলেট-বি ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ব্লক করে দেয়।

কেউ যদি এসপিএফ-১৫ এর একটি সানস্ক্রিন ব্যবহার করে সেক্ষেত্রে এসপিএফ-১৫ কে ১০ দিয়ে গুন করে যত মিনিট পাওয়া যাবে তত সময় সূর্য রশ্মি থেকে সুরক্ষিত থাকবে। এক্ষেত্রে ফলাফল আসে ১৫০ মিনিট অর্থাৎ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের জন্য নিশ্চিন্ত। এভাবে যে যত এসপিএফ এর সানস্ক্রিন ব্যবহার করছেন তা ১০ দিয়ে গুন করলে পেয়ে যাবে কতক্ষণ ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষিত আছে। মূলত এজন্যই সানস্ক্রিন বাছাই করার সময় অনেকেই বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন পছন্দ করেন।

সানস্ক্রিনগুলো প্রায়শই ২টি বিভাগে বিভক্ত হয়: রাসায়নিক ও খনিজ। রাসায়নিক সানস্ক্রিনগুলোতে অ্যাভোবেনজন, অক্টিসালেট, অক্টোক্রাইলিন, হোমোসালেট এবং অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। খনিজ সানস্ক্রিনে জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে। রাসায়নিক এবং খনিজ উভয় সানস্ক্রিন একইভাবে কাজ করে (অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে এবং সেই শক্তিকে অল্প পরিমাণে তাপে রূপান্তর করে) ।

কারো কারো জন্য, রাসায়নিক সানস্ক্রিন ত্বকে জ্বালাপোড়া তৈরি করতে পারে। সংবেদনশীল ত্বকে, ঘন ঘন প্রতিক্রিয়া হলে খনিজ সানস্ক্রিন সেদিক থেকে ভাল হতে পারে।

সানস্ক্রিন ব্যবহার

বাইরে বের হওয়ার ২০ থেকে ৩০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এতে ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় পাওয়া যায়। না হলে সূর্যের আলোতে বের হওয়ার পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করে কোনো লাভ হয় না।

রোদ না থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে কারণ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রায় ৮০ ভাগই আটকাতে পারেনা মেঘ। তাই মেঘাচ্ছন্ন এমনকি বৃষ্টির দিনেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়।

শুধু মুখে নয় বরং শরীরের যেসব অংশ রোদের সংস্পর্শে আসতে পারে, সেখানেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়। প্লাস ওয়ানের জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রায় ২০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী তাদের চোখের পাতায় সানস্ক্রিন প্রয়োগ করেননি। অংশগ্রহণকারীদের ধারণাও ছিল না তারা এই স্থানটি বাদ দিয়েছেন। কিন্তু এটি ছিল তাদের জন্য ভীষণ উদ্বেগজনক কেননা চোখের পাতার ত্বকে প্রতি একক জায়গায় স্কিন ক্যান্সারের ঘটনা সর্বোচ্চ।

দিনের বেলায় বাসায় যেখানে সূর্যের আলো পৌঁছায় সেখানেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। বাসায় থাকলে কম এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেও চলবে কিন্তু বাইরে বের হলে বেশি এসপিএফ যুক্ত বাছাই করতে হবে।

কোন সানস্ক্রিনই পুরোপুরি সুরক্ষা দিতে পারে না। তাই সানস্ক্রিনের এসপিএফ এর উপরই কেবল নিশ্চিন্ত না থেকে ২ ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করার অভ্যাস করা উচিত।

সতর্কতা

১) সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে নিতে পারেন। এতে করে এলার্জি কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রভাব প্রথমেই চেহারার পড়বে না।

২) সানস্ক্রিন ব্যবহারের পর অতিরিক্ত ঘাম হলে প্রয়োজনমত সানস্ক্রিনের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলে ঘামের সমস্যা কমে যাবে।

৩) সানস্ক্রিনের কাজ শেষ হলে অবশ্যই ভালো করে ক্লিনজিং করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
compensation for uprising martyrs families

Each martyr family to get Tk 30 lakh: Prof Yunus

Vows to rehabilitate them; govt to bear all expenses of uprising injured

6h ago