সুপারিশ আমলে না নিয়ে নির্বাচন আইন সংশোধনের প্রস্তাব ইসির

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন আইন সংশোধনের আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অথচ দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ আমলে না নিয়েই আইনটি সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠিয়েছে ইসি।

গত ১৭-৩১ জুলাই ইসির সঙ্গে আলোচনায় অনেক রাজনৈতিক দল কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেছিল। অনেকের সুপারিশ ছিল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালুর।

বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটার-ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেইল (ভিভিপিএটি) যোগ করার দাবি জানিয়েছিল, যার মাধ্যমে ইভিএমে ভোট দেওয়ার পর তা কাগজে ছাপা হয়ে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে জমা হবে।

কিছু দল রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে ইসি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেছিল। পাশাপাশি সব ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং 'না ভোট' আবার চালু করার সুপারিশ করেছিল।

কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হলে ওই আসনে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিল কয়েকটি দল।

তবে এসব সুপারিশ আমলে না নিয়ে নির্বাচন আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। 

নির্বাচন কমিশনার রাশিদা সুলতানা গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা কয়েকদিন আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) একটি সংশোধনী প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন।

কেন এ প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা শিগগির সব রাজনৈতিক দলকে জানিয়ে দেবো যে তাদের কোন সুপারিশগুলো গ্রহণ করা হয়েছে, আর কোনটি গ্রহণ করা হয়নি।'

'কয়েক ধাপে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হয়,' যোগ করেন তিনি।

এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'যদি রাজনৈতিকভাবে আমাদের কাছে সিদ্ধান্ত আসে, তবে আমরা আবার আরপিওতে পরিবর্তন আনতে ব্যবস্থা নেবো।'

তবে ইভিএম ও পেপার অডিট ট্রেইল ব্যবহার নিয়ে কমিশন কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান রাশিদা। ভিভিপিএটি যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত হলে, আরপিও পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া বর্তমান আইনেই সম্ভব বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, সিসিটিভি বসানোর বিষয়ে তারা ইতিবাচক। তবে তা সব কেন্দ্রে বসানো হবে বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বসানো হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

ইসির প্রস্তাবনা

রাশিদা সুলতানা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোট নিয়ে অভিযোগ থাকলে এবং তদন্ত করে তা প্রমাণিত হলে ফলাফল গেজেট হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসি নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।'

বর্তমানে বেসরকারি ফলাফল ঘোষণার পর ইসি নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা রাখে না বলে জানান তিনি।

বর্তমান আইনে অসদাচরণ ও পেশী শক্তি ব্যবহারের প্রমাণ পেলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারে কমিশন।

তবে ইসি কর্মকর্তারা জানান, নতুন প্রস্তাবনায় নির্বাচন বাতিল হওয়ার পর উপনির্বাচনে প্রশ্নবিদ্ধ প্রার্থী যেন অংশ নিতে না পারে, তার সুপারিশ করা হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে ভোটগ্রহণ বন্ধ করতে প্রিসাইডিং অফিসারদের ক্ষমতায়নের প্রস্তাবও করেছে ইসি।

আইন প্রয়োগে শিথিলতা দেখালে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানার সুপারিশ করেছে ইসি।

ইসির প্রস্তাবনায় সব প্রার্থীদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে এবং মনোনয়ন জমা দেওয়ার অন্তত একদিন আগ পর্যন্ত প্রার্থীরা খেলাপি ঋণ নিয়মিতকরণ ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করার সুযোগ পাবেন।

কমিশনের প্রস্তাবনায় ২০৩০ সালের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের সব কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য থাকতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ২০২০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল।

ইসির এসব প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রিসভায় পাঠাবে। মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিলে বিলটি পাসের জন্য সংসদে যাবে।

জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা

২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির শুরুতে আসন্ন ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসি তার নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করেছে কমিশন।

এসবের মধ্যে আছে কমিশনের ওপর কিছু রাজনৈতিক দলের আস্থাহীনতা, ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত, ভোটের সময় মাঠ প্রশাসন ও পুলিশের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং ভোটার ও প্রার্থীদের এজেন্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, কমিশনাররা প্রাথমিক পরিকল্পনা পর্যালোচনা করছেন এবং আগামী মাসের প্রথম দিকে একটি খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সব রাজনৈতিক দলের সুপারিশ পর্যালোচনা করছি। পর্যালোচনার পর একটি বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করব।'

তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Comments

The Daily Star  | English

US welcomes Bangladesh election plan

The US yesterday welcomed plans by Bangladesh's interim leader to hold elections next year or in early 2026

42m ago