নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার থাকবে, সেটাই প্রধান সংকট: মির্জা ফখরুল

মির্জা ফখরুল
সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে রাজনীতিবিদের সম্মানে আয়োজিত ইফতারে বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ছবি: সংগৃহীত

আগামী নির্বাচন ইভিএমে নয় ব্যালটে হবে, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে 'বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই' বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইস্কাটনে রাজনীতিবিদের সম্মানে আয়োজিত এক ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

এর আগে দুপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট না নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায় নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে নাকি নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে যে ইভিএমে নয়, সব ব্যালটেই নির্বাচন হবে। এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক আমাকে প্রশ্ন করলে আমি তাকে বলেছি যে আমাদের এতটুকু আগ্রহ নেই এই বিষয়গুলো নিয়ে।'

'কারণ আমরা কাছে যেটা মনে হয়, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে আজকে জাতির যে সংকট সেই সংকট হচ্ছে নির্বাচনকালীন সময়ে কোন সরকার থাকবে, কি ধরনের সরকার থাকবে সেটা প্রধান সংকট। সে কারণে আজ গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছে। এ কারণে আমাদের যে মূল লক্ষ্য ছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের সে জায়গা থেকে আমরা বহুদূর সরে এসেছি,' বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, 'আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে আমরা অনেকগুলো রাজনৈতিক দল একমত হয়েছি যে এই সরকার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হয়। তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের পদত্যাগ করতে হবে। এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতেই ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা এই রাষ্ট্রের কাঠামো যে জায়গাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সংবিধান, বিচারালয়, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, সেগুলো আবার ‍পুনরায় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের উপযোগী করে গড়ে তুলবার জন্য আমরা সেগুলো সংস্কারের কথা বলেছি এবং সেভাবে আমরা কাজ করছি। আমরা বিশ্বাস করি এ দেশের জনগণ কখনোই কোনো একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। বরাবর বাংলাদেশের বীর জনগণ তাদের অধিকারের জন্য, তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে এবং সফল হয়েছে।'

আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'আজ বাংলাদেশের মানুষ যে সংগ্রাম শুরু করেছে, আমরা বিশ্বাস করি, সেই সংগ্রামে দেশের সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি এবং মানুষ তাদের অধিকার আদায়ে তারা শরিক হবেন এবং তাদের অধিকার আদায় করে নেবে।'

দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাসহ এবং নির্যাতনের বিষয় ‍তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই এ দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ, সংগঠক, রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ভিন্নমত পোষণকারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দেওয়া হচ্ছে।

'আজকে সারা দেশে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। আমরা শুধু বিএনপির কথা বলছি না, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কথা বলছি না, সাধারণ মানুষও নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। নওগাঁয় এক নারীকে বেআইনিভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে ৩৬ ঘণ্টা পর মিথ্যা মামলা দেখিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসকে তুলে নেওয়া হলো, দেখলাম সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হলো,' বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও জাতীয় পার্টি সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবুল হোসেন বাবলা, ফখরুল ইমাম অংশ নেন। এছাড়া এলডিপির অলি আহমেদ, জেএসডির আসম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মোহসিন মন্টু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, ফোরকান ইব্রাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, সাহাদাত হোসেন সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণঅধিকার পরিষদের রাশেদ খান, বাংলাদেশে এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিকল্পধারা বাংলাদেশের নুরুল আমিন বেপারী, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, এনডিপির আবু তাহের, ইসলামিক পার্টির আবু তাহের চৌধুরী, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, পিপলস লীগের গরীবে নেওয়াজ, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডল, সোশ্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির আবুল কালাম আজাদ, সাম্যবাদী দলের নুরুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

2h ago