বরগুনায় ছাত্রলীগকে লাঠিপেটা: যে যেভাবে দেখছেন

জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষের সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পুলিশের এই লাঠিচার্জ নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিশেষ করে সরকার দলীয়দের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

কিন্তু বিরোধী দল-মতের কর্মসূচিতে পুলিশকে প্রতিনিয়তই লাঠিচার্জ করতে দেখা যায়। গত ৭ আগস্ট জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। ভোলায় বিএনপির সমাবেশে গুলি চায়, ২ জন নিহত হয়। বরগুনায় ছাত্রলীগের ওপর লাঠিচার্জের ঘটনায় যারা কথা বলছেন, অন্য সময় তাদের নীরব থাকতে দেখা গেছে। অনেকে পুলিশের পক্ষে কথা বলেছেন।

বরগুনায় ঘটনা বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে পুলিশের সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব কুমার বড়ুয়া এবং বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমানের সঙ্গে।

শহীদুল হক, মোজাম্মেল হক ও বিপ্লব কুমার বড়ুয়া বলেছেন, পুলিশ কিছু ঘটনায় বাড়াবাড়ি করে। বরগুনার ঘটনাতেও তাই হয়েছে। বিরোধীদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও দাবি আদায়ের কর্মসূচিতে পুলিশ যেন মেনেই অ্যাকশনে যায়।

জেড আই খান পান্না বলেছেন, পুলিশকে বেআইনিভাবে লাঠিচার্জ করতে শেখানো হয়েছে। রাষ্ট্র এর জন্য দায়ী।

সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, 'বরগুনায় পুলিশ যেভাবে লাঠিচার্জ করেছে, তা উচিত হয়নি। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তো পালিয়ে যাচ্ছিল। তারা তো আর পুলিশের ওপর হামলা করেনি। যদি পুলিশের ওপর হামলার কোনো আশঙ্কা থাকতো, তাহলে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে পারতো। তারা ব্রিটিশ আমলের পুলিশ নাকি, যে নিরীহ মানুষের ওপর এভাবে লাঠিচার্জ করবে। তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের অভাব ছিল। তাদের তো এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি।'

বিরোধী দল-মতের কর্মসূচিতে পুলিশ যখন লাঠিচার্জ করে, তখন কি পেশাদারিত্ব বজায় রেখে লাঠিচার্জ করে? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'সবশেষ তেলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা অনেক বেশি উগ্র ছিল। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এ কারণেই তাদের ওপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। সাধারণত শান্ত পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ওপর সহজে লাঠিচার্জ করা হয় না। পুলিশের ওপর হামলা না হলে পুলিশ কখনই লাঠিচার্জ করতে পারে না।'

জেড আই খান পান্না বলেন, 'সরকার দলীয় কারো ওপর লাঠিচার্জ করলে কৈফিয়ত চাওয়া হয়, তখন আইনের ব্যত্যয় ঘটে। কিন্তু, দেখা যায় অন্য কারো ওপর করলে তখন আর আইনের ব্যত্যয় ঘটে না। এভাবে তো আইনের শাসন হয় না। পুলিশকে বেআইনিভাবে লাঠিচার্জ করতে শেখানো হয়েছে।'

'আমরা শাহবাগে দেখি আন্দোলনকারীরা ভাঙচুর করে না, পুলিশকে আঘাত করে না। তারপরেও শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এ অভ্যাস তৈরি করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র দায়ী। কোনো কিছু পক্ষে হলে রাষ্ট্রযন্ত্র বলে সেটা ন্যায়, বিপক্ষে গেলেই বলে অন্যায়। আইনের ব্যাখ্যা সবসময় এক হওয়া উচিত। কিন্তু, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা পরিবর্তন করে', যোগ করেন তিনি।

বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, 'পুলিশ যদি বাড়াবাড়ি করে থাকে, সেটি খারাপ। ছাত্ররা বাড়াবাড়ি করে থাকলে সেটিও খারাপ। পুলিশ যা করেছে, তা অন্যায়। ২ পক্ষের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ফলে গাড়িতে লেগেছে। কিন্তু এই ঘটনায় পুলিশ যেভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পিটিয়েছে, তা অন্যায়, অসভ্যতা।'

অন্য কোনো সংগঠন, ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দল যৌক্তিক দাবি আদায়ে মাঠে নামলে তখনো পুলিশ এভাবে লাঠিচার্জ করে। এই বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা আছেন যারা একেকজন একেকটি রাজনৈতিক দলের ধ্যান-ধারণাকে গুরুত্ব দেন। আবার কেউ কেউ সরকারের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার জন্য উসকানি দিয়ে থাকেন। অনেক পুলিশ আছেন যারা আওয়ামী লীগকে ধারণ করে না, কিন্তু সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য, সরকারের বদনাম তৈরি করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব করে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা কোনো অন্যায়কেই সমর্থন করি না।'

অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করলে তখন আপনার প্রতিক্রিয়া দেখান না কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'অবশ্যই আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাই।'

শাহবাগে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদে যে সমাবেশ করা হয়, সেখানে পুলিশ হামলা চালায়। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের কেউ কি প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে? এর উত্তরে বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ বিভাগের ৮ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উনি সমর্থন করেন। কিন্তু জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ অ্যাকশনে গেলে সেটি ভিন্ন কথা। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বাধা দেবে না। এমনকি কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে গণভবনের সামনে আসলেও সেখানে তিনি তাদের আপ্যায়ন করাবেন এবং তাদের দাবি শুনবেন। তবে কেউ যদি আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করে, সেটি ভিন্ন কথা।'

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব কুমার বড়ুয়া বলেন, 'শোক দিবসে ছাত্রলীগের ওপর এভাবে হামলা করার বিষয়টি ঠিক হয়নি। জাতীয় শোক দিবস আমাদের আবেগের বিষয়, এ কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।'

দাবি আদায়ের জন্য কেউ মাঠে নামলে সেখানেও পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এটা কি ঠিক? জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে জনতাকে সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। তবে অবশ্যই সেটি আইনানুগ উপায়ে হতে হবে।'

পুলিশ যখন বিরোধী দলসহ অন্যান্যদের ওপর এভাবে লাঠিচার্জ করে তখন সরকার দলীয় লোকজনের কাছে থেকে এমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না কেন, জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বলেন, 'গতকালের দিনটা একটু অন্যরকম ছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেক আবেগ কাজ করছে। তাই বরগুনার ঘটনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।'

বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম তারেক রহমান বলেন, 'যারা পুরোপুরি ঘটনা দেখেনি, তারা না জেনেই পুলিশের লাঠিচার্জ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতেই আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Around 100 injured in clash between students in Jatrabari

Scores of people were injured as students of three colleges clashed at Dhaka's Jatrabari today, turning the area into a battlefield

5h ago