চীন-তাইওয়ানের তুলনামূলক সামরিক শক্তি

চীন ও তাইওয়ানের সামরিক শক্তি
চীন ও তাইওয়ানের সামরিক শক্তি

চীনের সতর্কবাণী বা হুমকি অবজ্ঞা করে তাইওয়ান সফর অব্যাহত রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।

গত সোমবার শুরু হওয়া ৪ দিনের এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার পেলোসি তাইপে আসেন।

তাইওয়ানকে নিজ দেশের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে চীন। যদিও দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মতোই চলছে।

পেলোসি তাইওয়ান সফরের পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকেই বেইজিং এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। এমনকি, তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের বিষয়টিকেও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না। তাইওয়ানের আকাশ ও নৌ সীমানায় চীনের যুদ্ধবিমান ও রণতরীর মহড়া চলছে নিরন্তর।

সম্প্রতি, বড় আকারের সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছিল তাইওয়ান।

সামরিক শক্তির বিবেচনায় চীনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে তাইওয়ান। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছিলেন, চীন কোনোদিন তাইওয়ানে সশস্ত্র হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে প্রতিরক্ষা সহায়তা দেবে।

আর্মড ফোর্সেস ডট ইউ এর তথ্যসূত্র অনুসারে, চীনের সামরিক বাজেট ২৫২ বিলিয়ন ডলার ও তাইওয়ানের ১৩ বিলিয়ন ডলার। চীনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৭ শতাংশ খরচ হয় সামরিক খাতে। তাইওয়ানের ক্ষেত্রে এটি ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

এ ছাড়াও, চীন ও তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা যথাক্রমে ১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ও ২৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন।

ক্রয় ক্ষমতার দিক দিয়ে তাইওয়ানের চেয়ে অনেক এগিয়ে চীন। ক্রয় ক্ষমতায় বিশ্বে চীনের অবস্থান সবার ওপরে। তাইওয়ান আছে ২১তম স্থানে।

চীন ভূখণ্ডের পরিমাণ যেখানে ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার ৯৬১ বর্গকিলোমিটার সেখানে তাইওয়ানের ভূখণ্ড ৩৫ হাজার ৯৮০ বর্গকিলোমিটার।

গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সর্বশেষ তথ্য মতে, তাইওয়ানে সম্মুখ সারির সেনা আছে ১ লাখ ৭০ হাজার জন। বিপরীতে চীনের আছে অন্তত ২০ লাখ। তাইওয়ানের রিজার্ভ সেনা সদস্যের সংখ্যা ১৫ লাখ এবং চীনের ৫ লাখ ১০ হাজার।

চীনের মোট এয়ারক্রাফটের সংখ্যা ৩ হাজার ২৮৫ ও তাইওয়ানের ৭৪১টি। এর মধ্যে আছে যুদ্ধবিমান, পরিবহন উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টারসহ আরও কয়েক ধরনের উড়োজাহাজ।

চীনের যুদ্ধবিমানের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ও তাইওয়ানে ২৮৮। অ্যাটাক হেলিকপ্টারের সংখ্যা চীনের ২৮১ ও তাইওয়ানের ৯১।

চীনের ৫ হাজার ২৫০টি ট্যাংক আছে। বিপরীতে তাইওয়ানের ট্যাংকের সংখ্যা ১ হাজার ১১০। ট্যাংক শক্তিমত্তার দিক দিয়ে বিশ্বের চতুর্থ শক্তিশালী রাষ্ট্র চীন। তাইওয়ানের অবস্থান ২০-এ।

চীন ও তাইওয়ানের সাঁজোয়া যানের সংখ্যা যথাক্রমে ৩৫ হাজার ও ৩ হাজার ৪৭২।

বিমান হামলা প্রতিরোধ ও দূরপাল্লার আক্রমণ চালানোর জন্য উভয় দেশেরই আছে বেশ কয়েক ধরনের কামান বা আর্টিলারি। তবে এ ক্ষেত্রে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে চীন।

চীন ও তাইওয়ানের মোট আর্টিলারির সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৮৫৪ ও ১ হাজার ৬৬৭।

এ ছাড়াও, চীনের আছে ৩ হাজার ১৬০ মোবাইল রকেট প্রোজেক্টর (বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপক)। বিপরীতে তাইওয়ানের আছে ১১৫টি।

নৌ-সক্ষমতার দিক থেকেও এগিয়ে চীন। দেশটির মোট যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৭৭৭। তাইওয়ানের যুদ্ধজাহাজ আছে ১১৭টি।

চীনের ২টি বিমানবাহী রণতরী থাকলেও তাইওয়ানের এ ধরনের কোনো সামরিক সক্ষমতা নেই। অন্যান্য জাহাজের মধ্যে আছে হেলো ক্যারিয়ার, ডুবোজাহাজ, ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, করভেট ও পেট্রল ভেসেল।

সামরিক সংঘর্ষে লজিসটিক সুবিধা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দিক দিয়েও তাইওয়ানের চেয়ে চীন অনেকাংশ এগিয়ে।

চীনের আছে ৫০৭টি বিমানবন্দর। বিপরীতে তাইওয়ানের বিমানবন্দরের সংখ্যা ৩৭টি।

চীন ও তাইওয়ানের বাণিজ্যিক জাহাজের সংখ্যা যথাক্রমে ৬ হাজার ৬৬২ ও ৪২৯টি। চীনের রয়েছে ২২টি বন্দর ও টার্মিনাল। তাইওয়ানের আছে ৬টি।

পারমাণবিক অস্ত্র

আর্মড ফোর্সেস ডট ইউ এর তথ্য মতে, চীনের প্রায় ২৮০টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড আছে। তবে বিভিন্ন অসমর্থিত ও অনানুষ্ঠানিক সূত্র মতে, চীনের ৩৫০ বা ৪০০টির মতো পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

এ যাবৎ চীন ৪৫ বার পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে।

তাইওয়ানের হাতে এ মুহূর্তে কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র নেই। তবে দেশটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় গোপনে পারমাণবিক গবেষণা ও কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago