পেলোসির সফর: তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান মহড়া

চীনের যুদ্ধবিমান চেংদু জে-২০ স্টেলথ। ফাইল ছবি: রয়টার্স
চীনের যুদ্ধবিমান চেংদু জে-২০ স্টেলথ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরকে ঘিরে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের সঙ্গে অঘোষিত সমুদ্র সীমানায় বেশ কয়েকটি চীনা যুদ্ধ বিমানকে উড়তে দেখা গেছে।

আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ পেলোসির তাইওয়ানে পৌঁছানোর কথা। বেশ কয়েকবার চীন পেলোসির তাইওয়ান যাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে।

গতকাল যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই সফরকে ঘিরে চীনের ক্রমাগত 'সামরিক হুমকি'তে ভীত হওয়ার কিছু নেই।

সূত্র মতে, 'মেডিয়ান লাইন' বা 'মধ্যবর্তী রেখা' হিসেবে পরিচিত এই সমুদ্রপথের কাছাকাছি গতকাল থেকে বেশ কয়েকটি চীনা রণতরীও মোতায়েন আছে।

সূত্র আরও জানায়, আজ সকালে চীনের যুদ্ধবিমানগুলো বারবার মধ্যবর্তী রেখা ছুঁয়ে আবার প্রণালীর ওপর পাশে ফিরে যাচ্ছিল। একে তিনি 'উসকানিমূলক' বলে অভিহিত করেন।

খুব কাছেই তাইওয়ানের যুদ্ধবিমান 'স্ট্যান্ড বাই' অবস্থায় আছে বলেও জানানো হয়েছে।

সাধারণত, কোনো পক্ষের উড়োজাহাজ এই মধ্যবর্তী রেখা অতিক্রম করে না।

এ বিষয়ে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

সূত্রের বরাত দিয়ে তাইওয়ানের কেন্দ্রীয় সংবাদ সংস্থা (সিএনএ) জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধাবস্থার সতর্কতার মাত্রা বাড়িয়েছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএ জানিয়েছে, তাইওয়ানের সামরিক বাহিনী সতর্কতার মাত্রা বোঝাতে 'শান্তির সময়' ও 'যুদ্ধের সময়' নামে ২ ধারা ব্যবহার করে। এ মুহূর্তে 'শান্তির সময়' পরিস্থিতি বজায় রাখা হচ্ছে, তবে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী এটি পরিবর্তন করা হবে।

পেলোসির ভ্রমণ পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানান, পেলোসি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে আগামীকাল বুধবার বৈঠক করবেন। তার অন্যান্য পরিকল্পনাও বুধবারকে ঘিরেই। এমনও হতে পারে, তিনি বুধবার সকালে তাইওয়ানে পৌঁছবেন।

তবে 'সব কিছুই অনিশ্চিত' বলে জানান তিনি।

সূত্রের বরাত দিয়ে তাইওয়ানের সংবাদমাধ্যম লিবার্টি টাইমস জানিয়েছে, পেলোসি ও তার প্রতিনিধি দল আজ স্থানীয় সময় রাত ১০টা ২০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে) তাইওয়ান পৌঁছাবেন।

পেলোসির সফর নিয়ে তাইওয়ানের দৈনিক পত্রিকার শীর্ষ সংবাদ। ছবি: রয়টার্স
পেলোসির সফর নিয়ে তাইওয়ানের দৈনিক পত্রিকার শীর্ষ সংবাদ। ছবি: রয়টার্স

পেলোসি আজ মালয়েশিয়া সফর করছেন। গতকাল সিঙ্গাপুর সফরের মাধ্যমে তার এশিয়া সফর শুরু করেছেন। পেলোসির কার্যালয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানেও যাবেন। তবে তাইওয়ান বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

তাইওয়ানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পেলোসির ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য নেই। হোয়াইট হাউসও পেলোসির তাইওয়ান সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে তারা জানিয়েছে, পেলোসি তাইওয়ান সফরের অধিকার রাখেন।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা মুখপাত্র জন কার্বি গতকাল ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের বলেন, 'বেইজিংয়ের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে তাইওয়ানের কাছাকাছি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, আকাশ বা নৌপথে বড় মহড়া অথবা "তাইওয়ান প্রণালী কোনো আন্তর্জাতিক নৌপথ নয়", এ ধরনের দাবি জানানো।'

মালয়েশিয়ার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন পেলোসি। ছবি: রয়টার্স
মালয়েশিয়ার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করেন পেলোসি। ছবি: রয়টার্স

কার্বি আরও বলেন, 'আমরা টোপ গিলবো না বা কোনো ধরনের সামরিক উসকানির প্রতিক্রিয়া জানাবো না। একই সঙ্গে, আমাদেরকে ভয়ও দেখানো যাবে না।'

গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, পেলোসি তাইওয়ান সফর করলে তা হবে 'চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চরম হস্তক্ষেপ'। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, 'চাইনিজ লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) অলস বসে থাকবে না।'

ঝাও আরও বলেন, 'আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে আবারো বলতে চাই, চীন তার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় দৃঢ় ও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।'

পিএলএ কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে ঝাও বলেন, 'যদি পেলোসি তাইওয়ান যাওয়ার দুঃসাহস দেখান, তাহলে অপেক্ষা করুন এবং দেখুন কী হয়।'

চীনের দৃষ্টিতে তাইওয়ানে মার্কিন কর্মকর্তাদের সফর দ্বীপটির স্বাধীনতাপন্থিদের উৎসাহ যোগাতে পারে। তাইওয়ানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ফোনালাপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনের উচিৎ হবে 'এক চীন' নীতিতে অটল থাকা।

'যারা আগুন নিয়ে খেলে, তারা আগুনে পুড়েই ধ্বংস হয়,' যোগ করেন জিনপিং।

বাইডেন বলেন, 'তাইওয়ান বিষয়ে মার্কিন নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।'

চীন সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে তাইওয়ান দখলে নেওয়ার বিষয়টিকে কখনোই নাকচ করেনি। তাইওয়ান মনে করে, শুধুমাত্র দ্বীপবাসীরাই নির্ধারণ করবে তারা স্বাধীন থাকবে, না কি চীনের অধীনে যাবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

8h ago