সিরাজগঞ্জে বন্যায় তলিয়ে গেছে ১২৫৯৯ হেক্টর জমির ফসল

ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/ স্টার

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াখোলা গ্রামের কৃষক মো. নাসির ভূঁইয়া এ বছর ১০ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। বন্যার শুরুতেই তার জমিতে পানি ঢুকতে শুরু করে। গত কয়েক সপ্তাহে পুরো জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কিছু কিছু পাট গাছের আগা দেখা গেলেও, বেশিরভাগ জায়গায় পুরো গাছ পানির নিচে চলে গেছে। পাট গাছের ওপর দিয়ে চলছে নৌকা।

নাসির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব পাট গাছ পুরোপুরি ডুবে গেছে, সেখান থেকে কোনো ফলন পাওয়া যাবে না। যেসব জায়গায় গাছের ওপরের অংশ পানির ওপর জেগে আছে, সেখান থেকে কিছু পাট পাওয়া যেতে পারে। আমার পুরো আবাদের প্রায় ৮০ ভাগই বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।'

নাসিরের মতো একই রকম দুর্ভোগে পড়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর, চৌহালি, শাহজাদপুর, বেলকুচি ও কাজিপুর এলাকার কৃষকরা। এসব এলাকার অনেক আবাদী জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

বন্যা কবলিত এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ধান, পাট, তিলসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ বছরের বন্যায় ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জের ৫ উপজেলার প্রায় ১২ হাজার ৫৯৯ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। তবে এসব জমির সব ফসলই নষ্ট হবে না বলে মনে করছে না কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

বাবুল কুমার সূত্রধর আরও বলেন 'বন্যার পানি ইতোমধ্যে নামতে শুরু করেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর বোঝা যাবে কতটুকু জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।'

'এরইমধ্যে বন্যায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলো জরিপের পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র জানা যাবে', যোগ করেন তিনি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, টানা ৭ দিন যমুনার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকার পর গতকাল শনিবার থেকে বিপৎসীমার নিচে নেমেছে।

আজ রোববার সকালে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি ১৪ দশমিক ৯২ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে, যা বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচে। একই সময়ে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানি প্রবাহ ১২ দশমিক ৯৮ মিটার, যা বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পানি আরও কয়েকদিন কমবে। কিন্তু তারপর আবারও নদীতে পানি বৃদ্ধি শুরু হতে পারে। নতুন করে বন্যা হওয়ারও আশঙ্কা আছে।'

তবে নদীতে পানি কমলেও বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি ধীরে ধীরে নামায় এখনও ভোগান্তিতে আছে এসব এলাকার মানুষ।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রেহাই চন্দ্রি গ্রামের গৃহবধূ চন্দ্রবানু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত প্রায় ৩ সপ্তাহের বেশি সময় তারা পানিবন্দি। নদীতে দ্রুত পানি কমলেও বন্যা কবলিত এলাকা থেকে পানি খুব ধীরে কমছে।

Comments