নাইমার স্কুলের বেতন ও ছেঁড়া ব্যাগের খবর কেউ নেবে না

অলিউর রহমান নয়নের মরদেহ পৌঁছালে প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় করেন। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

একমাত্র বোন নাইমার স্কুলের বেতন বাকি। সেই সঙ্গে স্কুলের ব্যাগটিও ছিঁড়ে গেছে। নাইমার এসব খবর রাখতেন ভাই অলিউর রহমান নয়ন (২০)। কিন্তু, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন তিনি।

নয়নের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের ফটিগুলি গ্রামে। বিএম কনটেইনার ডিপোতে শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।

গত শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে প্রথম ফেসবুক লাইভ করেছিলেন নয়ন। সেখানেই অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। রোববার সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ডে নিহত অলিউর রহমান নয়নের ছোট বোন নাইমা জান্নাত। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা/স্টার

গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় মরদেহ বাড়িতে নেওয়া হয়।

শুক্রবার দুপুরে বিকাশে তিনি আদরের ছোট বোনটির জন্য ১ হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। সোমবার সন্ধ্যায় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাইমা জান্নাত দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথা জানান।

নাইমা বলেন, 'রোববার সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি আমার বড় ভাই মারা গেছেন। কোরবানি ঈদে ভাই আমার জন্য নতুন কাপড় নিয়ে আসবে বলেছিলেন। অথচ আজই তার নিথর দেহ বাড়িতে এলো।'

নয়নের নিহতের সংবাদ পেয়ে ফটিগুলি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারি আর কান্নায় এলাকার বাতাস ভারি হয়ে যায়।

মরদেহ পৌঁছালে প্রতিবেশীরা ভিড় করতে থাকেন বাড়িতে।

সে সময় ওই বাড়িতে গেলে কথা হয় নাইমা জান্নাতের সঙ্গে। সে জানায়, নয়ন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন।

'বড়ভাই আমার সব খবর নিতেন। এখন আমার খবর কেউ নেওয়ার থাকল না। ভাই নতুন ব্যাগ কেনার জন্য টাকা পাঠিয়েছিলেন। যেদিন ব্যাগ কিনতে যাব, সেদিনই শুনলাম তার মৃত্যুর খবর,' কাঁদতে কাঁদতে বলছিল নাইমা।

তাদের বাবা আশিক আলী দিনমজুর।

তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ২ ভাই ও এক বোনের মধ্যে নয়ন সবার বড়। কাজের সন্ধানে বছরখানেক আগে একজনের মাধ্যমে সীতাকুণ্ডে চলে যান তিনি। সেখানে বিএম কনটেইনার ডিপোতে কাজ নেন।

নয়নের প্রতি মাসে বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা। বাড়িতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা পাঠাতেন।

ছেলের মরদেহ দেখে বাবা কেঁদে কেঁদে বলেন, 'আমার পুয়ার (ছেলের) পুড়া মুখ দেখমু জানলে, তারে চাকরিত দিতাম না। আমার পুয়ারে আমি কিলা মাটি দিতাম। তার টেকায় সংসারের অভাব কিছুটা দুর অইছিল। বাকি হুরুতা (সন্তানদের) লইয়া কিলা দিন কাটাইতাম। আমার সব শেষ। আগে সিএনজি চালাত সেটাই ভালা আছিল।'

শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের সময় ডিপোর শ্রমিক অলিউর রহমান নয়ন ঘটনাস্থলের অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ফেসবুকে লাইভ করছিলেন।

কিছু সময় কথা বলছিলেন আবার কিছু সময় আগুন নেভানোর দৃশ্য দেখাচ্ছিলেন। তার লাইভের ৪০ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের মাথায় ডিপোর কনটেইনারগুলোতে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।

এরপর মুঠোফোনের ক্যামেরায় সবকিছু অন্ধকার হয়ে যায়।

কেবল আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিল। ওই বিস্ফোরণে প্রাণ হারান নয়ন। গতকাল সন্ধ্যায় গ্রামের গোরস্তানে তার দাফন হয়।

Comments

The Daily Star  | English
Medicine and healthcare cost rise in Bangladesh

Drugmakers hiring cross-discipline grads amid biomedicine expansion

Bangladesh’s pharmaceutical industry is undergoing a significant transformation, driven by young talent and innovation, according to pharmaceutical professionals. .The industry is shifting from chemical-based medicines to biomedicines, offering fresh graduates unique opportunities to shap

40m ago