সুদানে টানা ৩ দিনের সংঘাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৭

গত শনিবার দেশটির সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের প্রতি অনুগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক সংগঠন র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) সংঘর্ষ শুরু হয়।
র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) প্রধান হামদান দাগালো (বাঁয়ে) এবং সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ফাইল ছবি: এএফপি
র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) প্রধান হামদান দাগালো (বাঁয়ে) এবং সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান। ফাইল ছবি: এএফপি

টানা ৩ দিন ধরে সুদানে চলছে তীব্র সংঘর্ষ। দেশটির চিকিৎসকদের সংগঠন সুদানিজ ডক্টরস ট্রেড ইউনিয়নের প্রিলিমিনারি কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘর্ষে অন্তত ৯৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

আজ সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, সুদানে সংঘর্ষে ১ হাজার ১২৬ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

গত শনিবার দেশটির সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের প্রতি অনুগত সেনাবাহিনীর সঙ্গে মোহামেদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বাধীন আধা-সামরিক সংগঠন র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘাত মূলত রাজধানী খার্তুমে সীমাবদ্ধ আছে। এখানেই সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর ও প্রেসিডেন্ট ভবন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, আজ ভোরে মর্টার ও কামানের গোলার শব্দ শোনা গেছে। ফজরের নামাজের পর হামলার তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।

খার্তুম বিমানবন্দর ও সুদানের সেনাবাহিনীর ব্যারাকগুলোয় যুদ্ধবিমান হামলার তীব্রতা বেড়েছে বলেও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।

যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার দিয়ে বিমানবন্দরে হামলা চালানো হচ্ছে। আরেকটি ক্লিপে সেনাবাহিনীর জেনারেল কমান্ড ভবনের ভস্মীভূত ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। এই ভবনটিতে গতকাল আগুনে জ্বলছিল।

সপ্তাহান্তে রাজধানী থেকে শত শত মাইল দূরে পোর্ট সুদান ও পশ্চিম দারফুর অঞ্চলেও সংঘর্ষের সংবাদ পাওয়া গেছে।

সরকার নিয়ন্ত্রিত জাতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ আছে। টিভির কর্মীরা সিএনএনকে জানিয়েছেন, টেলিভিশন কেন্দ্রটি এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।

সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশ ও সংস্থাগুলো সতর্ক অবস্থায় আছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির ৩ কর্মকর্তা শনিবারের সংঘাতে প্রাণ হারালে সংস্থাটি সুদানে তাদের কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

দারফুরে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থার অবকাঠামোগুলোয় লুটের ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উড়োজাহাজ খার্তুমে গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গতকাল বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি জানায়, এ ঘটনার কারণে দেশের ভেতর কর্মী ও ত্রাণ আনা-নেওয়ার কাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

গত শনি ও রোববার খার্তুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তীব্র যুদ্ধ হয়। বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজে আগুন লাগে।

গতকাল আরএসএফ প্রধান হামদান দাগালো সিএনএনকে জানান, বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি সরকারি ভবন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে আছে।

এই যুদ্ধে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন দাগালো ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী সুদানের সামরিক নেতা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।

৩ দিনের সংঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে রাজধানী খার্তুম। ছবি: রয়টার্স
৩ দিনের সংঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে রাজধানী খার্তুম। ছবি: রয়টার্স

২০১৯ সালে এই ২ সামরিক নেতা এক হয়ে সুদানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করেন এবং ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সেই অভ্যুত্থানের পর সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতা ভাগ করে নেওয়ার অলিখিত চুক্তি ভেস্তে যায়।

এরপর থেকে বুরহান ও দাগালোর নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে আছে দেশটির কর্তৃত্ব।

সম্প্রতি তাদের মৈত্রীতে ফাটল ধরে। আলোচনার মাধ্যমে আরএসএফকে দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে একীভূত করে দেশে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলছিল। মূলত এ থেকেই ২ সামরিক নেতার মতভেদের শুরু।

সুদানের সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, মতভেদের মূলে আছে ২ বাহিনীর একীভূতকরণের সময়সীমা, ভবিষ্যতে সাবেক আরএসএফ কর্মকর্তাদের একীভূত বাহিনীতে পদমর্যাদা কী হবে, সে নিয়ে উদ্বেগ এবং আরএসএফের সদস্যরা কী সেনাপ্রধানের আওতায় থাকবেন, না কমান্ডার-ইন-চিফের (বুরহান) আওতায় থাকবেন, সে বিষয়ে দ্বিধা।

নতুন করে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতায় বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে যুদ্ধবিরতি, শান্তি ও আলোচনার আহ্বান জানানো হচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লা হামদক সতর্ক করে বলেন, দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে আগাচ্ছে।

গতকাল আফ্রিকার নেতাদের জরুরি বৈঠকে মিশর ও দক্ষিণ সুদান মধ্যস্থতাকারীর দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সুদানে জাতিসংঘের রাজনৈতিক মিশন জানিয়েছে, ২ বিবদমান পক্ষ একটি 'প্রস্তাবে' রাজি হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

7h ago