আজ কাতারে আবারও শুরু হচ্ছে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা, যোগ দেবে ইসরায়েল

রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের সামনে এবারের রমজানের প্রথম জুম্মা পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স
রাফাহ শহরে ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া মসজিদের সামনে এবারের রমজানের প্রথম জুম্মা পড়ছেন ফিলিস্তিনিরা। ছবি: রয়টার্স

সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে নতুন প্রস্তাব দেয় হামাস। এতে ইসরায়েল অসম্মতি জানানোয় স্থবির হয়ে পড়ে আলোচনা। তবে আজ আবারও মধ্যস্থাতাকারীদের উদ্যোগে কাতারে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে বলে জানা গেছে।

মিশরীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আজ রোববার এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এপি।

রমজান শুরুর পর এবারই প্রথম ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও হামাসের নেতারা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা আশা করেছিলেন রমজানের আগেই ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়ে বাস্তবায়িত হবে। এমন কী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এমন আশ্বাস দেন।

তবে মুসলিমদের পবিত্র এ মাসের প্রথম সপ্তাহ প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখনো থামেনি গাজায় ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলা।

হামাস জানিয়েছে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্ত নেই এমন কোনো চুক্তিতে তারা রাজি নন। এই দাবিকে 'অবাস্তব' বলে নাকচ করেছে ইসরায়েল।

হামাসের সর্বশেষ প্রস্তাবের আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছে এপি।

দুই মিশরীয় কর্মকর্তারা জানান, তিন পর্যায়ের এই প্রস্তাবে পাকাপাকিভাবে যুদ্ধ বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এই দুই কর্মকর্তার একজন আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন এবং অপরজন এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। এই সংবেদনশীল আলোচনার বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম না প্রকাশের শর্তে কথা বলেন এই দুই কর্মকর্তা।

যুদ্ধবিরতির তিন পর্যায়

প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহ যুদ্ধে বিরতি দেবে দুই পক্ষ। এ সময়য় ৩৫ জন ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তি পাবেন, যাদের মধ্যে আছেন অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ ও নারীরা। বিনিময়ে, ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ৩৫০ ফিলিস্তিনি মুক্তি পাবেন।

এ ছাড়া, হামাস আরও অন্তত পাঁচ নারী সেনাকে মুক্তি দেবে। তাদের মুক্তির বিনিময়ে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এ পর্যায়ের অন্যান্য শর্তের মধ্যে আছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গাজার দুইটি মূল সড়ক ছেড়ে যেতে হবে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজায় ফিরে যেতে দিতে হবে এবং এ অঞ্চলে ত্রাণের প্রবাহে কোনো বাধা দেওয়া যাবে না।

কর্মকর্তারা জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে, উভয় পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেবে এবং হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে, আরও কিছু বন্দিকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।

দক্ষিণ গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি ট্যাংক। ছবি: রয়টার্স

তৃতীয় ও শেষ পর্যায়ে হামাসের হাতে থাকা নিহত জিম্মিদের মরদেহ ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিনিময়ে, ইসরায়েল গাজা অবরুদ্ধ করে রাখার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও বাস্তবায়ন করবে এবং শহরটির পুনর্নির্মাণ ও সংস্কারে সহায়তা করবে।

আজ বিকেলে আলোচনা আবারও শুরু হতে পারে। তবে এটি পিছিয়ে সোমবারেও যেতে পারে বলা জানান মিশরীয় কর্মকর্তারা।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী হামাসের প্রস্তাবকে 'অবাস্তব' বলে অভিহিত করলেও কাতারের আলোচনায় যোগ দিতে রাজি হন। তার সরকার স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে বলেছে, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল 'হামাসকে ধ্বংস' করা।

হাজারো মানুষ শনিবার রাতে ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবে জমায়েত হয়ে নেতানিয়াহুর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানিয়েছে। তারা দ্রুত জিম্মিদের মুক্তির জন্য উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স
নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে তেল আবিবে বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় প্রায় ছয় মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৩১ হাজার ৫৩৩ জন মানুষ। নিহতের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭২ হাজার ৮৮৯ জন মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Extortion will no longer be tolerated: DMP chief

He urged rickshaw drivers to provide the names of the extortionists and promised strict action

39m ago