গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নিতে আজ মিশর যাচ্ছেন হামাস প্রধান
জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে আবারও যুদ্ধবিরতি চালুর বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া আজ মিশরে এসে পৌঁছাবেন।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
গত ১ ডিসেম্বর সাত দিনের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হলে গাজায় হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় ইসরায়েল। যার ফলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যুদ্ধবিরতির চাপ বেড়ে যায়।
অপরদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আবারও যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপিত হতে যাচ্ছে।
আজ বুধবার হামাস সূত্ররা জানিয়েছে, রাতভর হামলায় গাজায় অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
কাতার-ভিত্তিক হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া একটি 'উচ্চ পর্যায়ের' প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 'আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার চুক্তি' চূড়ান্ত করতে মিশরের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান ও অন্যান্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন হানিয়া ও তার দল। এ বিষয়টি এএফপিকে নিশ্চিত করেছে হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক সূত্র।
ইসরায়েলের নেতারা ১২৯ জিম্মিকে মুক্ত করার জন্য বড় আকারের চাপের মুখে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা হামাসের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দেয়।
ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ জানান, তার দেশ 'জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিতে আবারও যুদ্ধে মানবিক বিরতি ও বাড়তি মানবিক ত্রাণ পাঠাতে প্রস্তুত।'
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, তিনি 'জিম্মিদের মুক্ত করতে' তার গোয়েন্দা প্রধানকে দুইবার ইউরোপ সফরে পাঠিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন ইসলামিক জিহাদ একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা দাবি করেছে গাজায় তাদের হাতে দুই জন ইসরায়েলি জিম্মি জীবিত অবস্থায় আটক আছেন। এই ভিডিও প্রকাশের পর জিম্মিদের মুক্ত করার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম একসিওস সোমবার জানায়, ইসরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ প্রধান ডেভিড বারনিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আবদুলরাহমান আল থানি ও মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের (সিআইএ) প্রধান বিল বার্নসের সঙ্গে জিম্মিদের মুক্ত করার কৌশল নির্ধারণ করার জন্য আলোচনা করেছেন।
একসিওস মঙ্গলবার আরও জানায়, ইসরায়েল গাজায় অন্তত এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে প্রায় ৪০ জনের মতো জিম্মিকে হামাসের হাত থেকে মুক্ত করা যায়।
৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে প্রায় এক হাজার ১৪০ মানুষকে হত্যা করে হামাস। তাদের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন। ইসরায়েলের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যে এমনটাই বলা হয়েছে। যদিও এর আগে নিহতের সংখ্যা এক হাজার ২০০ ও জিম্মির সংখ্যা ২৪০ বলা হয়েছিল।
এ ঘটনার পর হামাসকে ধ্বংসের সংকল্পে গাজা উপত্যকায় নির্বিচার বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৬৬৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতা ও যুক্তরাষ্ট্র-মিশরের সহযোগিতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এক সপ্তাহব্যাপী যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়। এতে ২৪০ ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে মুক্তি পান ৮০ ইসরায়েলি জিম্মি।
আজ বুধবার আবারও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করার কথা রয়েছে। এএফপিকে এ বিষয়টি জানিয়েছেন তিন কূটনীতিক সূত্র।
সূত্ররা জানান, সর্বশেষ প্রস্তাবে 'বৈরিতা' স্থগিত করার কথা বলা হয়েছে।
সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে নিরাপত্তা পরিষদের পূর্ণ সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দেয়। যার ফলে ফিলিস্তিন ও মানবিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে।
Comments