লোহিত সাগরে হুতিদের ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বাহিনী গঠন

গত ২০ নভেম্বর লোহিত সাগরে গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গত ২০ নভেম্বর লোহিত সাগরে গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। ফাইল ছবি: রয়টার্স

সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেনের সশস্ত্র হুতি বিদ্রোহিরা লোহিত সাগরে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হামলা চালিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে কয়েকটি দেশ এক যৌথ বাহিনী গঠন করে লোহিত সাগরের দক্ষিণে ও এডেন উপসাগরে নৌ-মহড়া পরিচালনায় সম্মত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বাহরাইন সফরে গিয়ে জানান, বেশ কয়েকটি দেশের সমন্বয়ে একটি 'আন্তর্জাতিক বাহিনী' গঠন করা হবে। তবে অন্যান্য দেশের জাহাজ হুতিদের হামলা প্রতিরোধে কতটুকু ভূমিকা রাখবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। জাহাজের ডেকে হুতিদের সেনা ও আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। জাহাজের ডেকে হুতিদের সেনা ও আকাশে হেলিকপ্টার উড়তে দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অস্টিন বলেন, 'এটি একটি আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ, যার মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ কারণে আমি অপারেশন প্রসপারিটি গার্ডিয়ান গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি। এটি একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা উদ্যোগ'।

এই 'প্রসপারিটি গার্ডিয়ান' (প্রগতিশীল রক্ষাকর্তা) অভিযানে অংশগ্রহণকারী দেশ হিসেবে বাহরাইন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সেশেলস ও স্পেনের নাম উল্লেখ করেন অস্টিন।

গুরুত্বপূর্ণ নৌযানে ও ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে যুক্ত হয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ড সেন্টকম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গতকাল সোমবার লোহিত সাগরে হুতিরা দুইটি বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। রাসায়নিক উপকরণ ও তেলবাহী ট্যাংকার সোয়ান আটলান্টিকে ড্রোন ও জাহাজ-বিধ্বংসী ব্যালিসটিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। প্রায় একই সময়য় পৃথক এক ঘটনায় মালবাহী জাহাজ এমএসসি ক্লারা পানিতে বিস্ফোরণের ঘটনা জানায়।  

তবে উভয় ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

হুতি মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারেয়া সোমবার এই দুই জাহাজে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, জাহাজের ক্রুদের সঙ্গে যোগাযোগের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর তারা ড্রোন ব্যবহার করেন।

হুতি বাহিনীর নতুন সদস্যরা গাজায় যেয়ে ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করবেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স
হুতি বাহিনীর নতুন সদস্যরা গাজায় যেয়ে ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করবেন। ফাইল ছবি: রয়টার্স

হুতিরা ইসরায়েলগামী সব জাহাজকে লক্ষ্য করে হামলা করার অঙ্গীকার করেছে। এ ক্ষেত্রে জাহাজটি কোন দেশের, তা বিবেচনা করা হবে না। ইতোমধ্যে হুতিরা আন্তর্জাতিক নৌ-পরিবহন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসরায়েলি বন্দরের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়ে সতর্ক করেছে।

গত শনিবার হুতিদের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, 'যদি গাজা তার প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও ওষুধ না পায়, তাহলে লোহিত সাগর দিয়ে ইসরায়েলি বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সব জাহাজ, তা সে দেশেরই হোক না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

হুতি পলিটব্যুরো সদস্য মোহাম্মেদ আল-বুখাইতি সোমবার আল জাজিরাকে জানান, যদি লোহিত সাগরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোনো যৌথ বাহিনী মোতায়েন করা হয়, সেটি মোকাবিলা করার মতো শক্তিমত্তা তার সংগঠনের রয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ ফায়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে সোমবার ফোনে কথা বলেন। এ সময় তিনি বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর হুতিদের হামলার নিন্দা জানান।

অপরদিকে গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র বাহিনী হামাসকে নির্মূল করতে উত্তর ও দক্ষিণ গাজায় চলছে এই হামলা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে ১৯ হাজার ৪৫৩ হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার ২৮৬। নিহতদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের যোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা ও ২৪০জনকে জিম্মি করার পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে নির্মূল করে পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের সংকল্প নেন।

গত ২০ নভেম্বর লোহিত সাগরে গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। জাহাজের চারপাশে হুতিদের স্পিডবোট দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স
গত ২০ নভেম্বর লোহিত সাগরে গ্যালাক্সি লিডার কার্গো জাহাজ আটক করে হুতি বিদ্রোহিরা। জাহাজের চারপাশে হুতিদের স্পিডবোট দেখা যাচ্ছে। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় অসংখ্য বেসামরিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ায় সারা বিশ্বে উঠেছে নিন্দার ঝড়। সব মহল থেকে আসছে যুদ্ধবিরতির ডাক।

সোমবার লয়েড অস্টিন বলেন, ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন 'অনমনীয়', তবে তারা তাদের মিত্রকে বলেছে বেসামরিক ব্যক্তিদের সুরক্ষিত রাখতে আরও উদ্যোগ নিতে।

নভেম্বরের শেষে কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এই চুক্তির আওতায় গাজা থেকে ১০০ জিম্মি মুক্তি পায়। অপরদিকে, ইসরায়েলি কারাগারে আটক ২৪০ ফিলিস্তিনি নারী ও তরুণ মুক্তি পান। তবে সাত দিন পার হওয়ার পর আর এই চুক্তি নবায়ন হয়নি এবং পরবর্তী দিনগুলোতে ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা বেড়েছে।

আজ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রধান, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ও কাতারে প্রধানমন্ত্রী জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

সোমবার মার্কিন কর্মকর্তারা এ বিষয়টি জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiyo Party's office set on fire in Khulna

Protesters vandalised the Jatiyo Party office in Khulna's Dakbangla area last evening

1h ago