গাজার হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির ও অন্যান্য স্থাপনায় হামলা অব্যাহত, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৯০
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় নেই তেমন অগ্রগতি। এদিকে কমছে না ইসরায়েলি হামলার তীব্রতা। জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে এক দিনের ব্যবধানে নিহত হয়েছেন ৯০ ফিলিস্তিনি।
আজ সোমবার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা, গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, রোববার ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার বেশ কয়েকটি জায়গায় দিনভর হামলা চালায়। উত্তরের এক শরণার্থী শিবির ও দক্ষিণের এক হাসপাতালে হামলা চালানো হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রয়টার্সকে জানান, রোববার উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে দিনভর হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
অ্জাআজ সোমবার গাজার কেন্দ্রে অবস্থিত নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১০ জনই একই পরিবারের সদস্য।
আল জাজিরার সাংবাদিকরা রাতভর হামলার অল্প সময় পর নুসেইরাতে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের বেঁচে যাওয়া সদস্যদের সাক্ষাৎকার নেন।
ভিডিওতে দেখা যায় এক বয়স্ক ব্যক্তি ও একজন তরুণ আল জাজিরাকে জানাচ্ছেন, আবু গারকুদ পরিবারের সদস্যরা তাদের নিজেদের বাসায় বসে ছিলেন। সে সময় কোনো সতর্কবাণী ছাড়াই তাদের বাড়ির ওপর বোমাবর্ষণ করা হয়।
তরুণ জানান, নিহতদের মধ্যে তার আপন ভাই ও কম বয়েসী ভাতিজারা ছিলেন।
হামাস আকসা রেডিও জানায়, শেহাব পরিবারের বাসস্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে ২৪ জন নিহত হন।
গাজার কেন্দ্রে দেইর আল-বালাহ এলাকায় ১২ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন। দক্ষিণের রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বিমানহামলায় একই বাড়ির চার সদস্য নিহত হন।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে ইসরায়েলি ট্যাংকের গোলা আঘাত হানলে ১৩ বছর বয়সী মেয়ে দিনা আবু মেহসেন নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা এই তথ্য জানান।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে। জিম্মি হন প্রায় ২৪০ জন। এ ঘটনার পর থেকে গাজা উপত্যকায় নিরবচ্ছিন্ন স্থল ও বিমানহামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। মাঝে কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধে সাত দিন বিরতি থাকলেও এর মেয়াদ শেষে আরও তীব্র হয়েছে ইসরায়েলি হামলা। উত্তর গাজার পাশাপাশি দক্ষিণ গাজাতেও এখন চলছে সশস্ত্র অভিযান।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় প্রায় ১৯ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানান, ২৭ অক্টোবর থেকে স্থল অভিযান শুরুর পর তারা ১২১ জন সেনা হারিয়েছেন। সেদিন থেকেই ট্যাংক ও পদাতিক সেনা নিয়ে ইসরায়েল গাজার নগর এলাকা ও শরণার্থী শিবিরগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়া কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মেদ বিন আবদুলরাহমান আল থানির সঙ্গে শুক্রবার গভীর রাতে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেন।
কাতারের পাশাপাশি অপর মধ্যস্থতাকারী দেশ মিশরের নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সূত্র রোববার জানান, ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই নতুন করে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করতে আগ্রহী। তবে এটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে, তা নিয়ে উভয় পক্ষে দ্বিমত রয়েছে।
Comments