‘ভেবেছিলাম গোলাগুলির শব্দে ছেলে ভয় পেয়েছে, পরে দেখি তার শরীরেই ৩ গুলি’

নিহত আকাশ। ছবি: সংগৃহীত

আরাফাত রহমান আকাশ (১৬) গত ছয় মাস আগে ঢাকার চিটাগাং রোডে এসে বাবার সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের ওয়াসেকপুর গ্রামে।

বাবা আকরাম হোসেন চিটাগাং রোডে ভ্যানগাড়িতে ফল বিক্রি করেন। গত ২১ জুলাই সকাল ১১টার দিকে কারফিউ যখন শিথিল ছিল তখন বাবা ও ছেলে নাস্তা করতে হোটেলে যাচ্ছিলেন।

হঠাৎ গোলাগুলির শব্দ পান দুজন। আকরাম তাকিয়ে দেখেন তার ছেলে আকাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। কাছে গিয়ে দেখেন তিনটি গুলি বিদ্ধ হয়েছে আকাশের শরীরে। স্থানীয় দুটি বেসরকারি হাসপাতাল ভর্তি না করায় তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পথে দুপুর দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় সে।

নিহত আকাশের মামা ও ঢাকার চকবাজারের ব্যবসায়ী মো. তোহা হায়দার রিপেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ফল বিক্রেতা বাবাকে ব্যবসায়ে সহযোগিতা করার জন্য ছেলেটা ঢাকায় এসেছিল। বাড়ি ফিরল লাশ হয়ে।'

আজ রোববার দুপুরে কথা হয় নিহত আকাশের বাবা আকরাম, মা লাইলি বেগম ও দশম শ্রেণী পড়ুয়া ছোট বোন ফাহিমা সুলতানার সঙ্গে। 

বাবা আকরাম হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আমার দুই ছেলে এক মেয়ের মধ্যে আকাশ ছিল সবার বড়। আমি চিটাগাং রোডে ফল বিক্রি করি। সংসার চালাতে ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে ছয়মাস আগে আমার কাছে ঢাকায় চলে আসে।'

তিনি বলেন, 'গত ২১ জুলাই সকালে আমি ও আকাশ নাস্তা করতে হোটেলে যাচ্ছিলাম। আমি সামনে, আকাশ আমার ৬-৭ হাত পেছনে। সেসময় হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে। ভেবেছিলাম গুলির শব্দ শুনে আকাশ ভয়ে মাটিতে বসে পড়েছে। কাছে গিয়ে দেখি পরপর তিনটি গুলি এসে বিদ্ধ হয়েছে আকাশের শরীরে।'

'আমি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে করে স্থানীয় দুটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু তারা আকাশকে ভর্তি করেননি। অ্যাম্বুলেন্সে উঠানোর সময় তীব্র ব্যথায় চিৎকার দিয়ে আকাশ বলছিল, "বাবা আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও।" তখন আমিও মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। পরে আমার ভাতিজা পাভেল এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুপুর দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায় আকাশ,' বলেন আকরাম।

তিনি আরও বলেন, 'যাদের গুলিতে আমার নিরপরাধ ছেলেটা মারা গেছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা দাবি জানাই।'

আকাশের মা লাইলি বেগম গত এক সপ্তাহ ধরে নাওয়া-খাওয়া ভুলে সন্তান হারানোর শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। 

আকাশের বোন বলছিল, 'আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka airport receives 2nd bomb threat

Operations at HSIA continue amid heightened security

56m ago