মুরাদপুরে পিস্তল হাতে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আ. লীগ নেতা বাবর

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গত ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলার সময় পিস্তল হাতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া/ স্টার

কোটা সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গত ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিন জন প্রাণ হারান। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে সেদিন অস্ত্র হাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।

একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, তার সরবরাহ করা অস্ত্র দিয়েই চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও চান্দগাঁও এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পিস্তল হাতে নির্দেশনা দেওয়ার পরপরই তার অস্ত্রধারী অনুসারীরা প্রকাশ্যে গুলি ছুড়তে শুরু করেন।

আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার নির্দেশনা দেওয়ার একটি ভিডিও ফুটেজ দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে। বাবরের নির্দেশনা পেয়ে সেদিন শটগান ও অন্যান্য অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে শুরু করেন অন্তত পাঁচজন। সেই ফুটেজে বাবরের সঙ্গে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকেও দেখা যায়। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে সদলবলে গা ঢাকা দিয়েছেন বাবর।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গত ১৬ জুলাই সারা দেশে ছয়জন নিহত হন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুইজন ও রংপুরে একজন প্রাণ হারান। মুরাদপুরে নিহত তিনজন হলেন ফারুক, ওয়াসিম আকরাম ও ফয়সাল আহমেদ।

সূত্র আরও জানায়, যুবলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকাকালে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী হিসেবে পুলিশের তালিকায় বাবরের নাম ওঠে। সেই 'দাগ মুছতে' দ্বাদশ জাতীয় সংসদ 'নির্বাচনে' দলীয় মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে বিতর্কের কারণেই দলের টিকিট পাননি বাবর।

যা ঘটেছিল সেদিন

চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গত ১৬ জুলাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় পিস্তল হাতে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। ১৬ জুলাই দুপুর সাড়ে ৩টায় পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি শুরুর আগেই স্টেশনে অবস্থান নেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা ও পাথর।

দুপুর ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে স্টেশনের দিকে আসতে শুরু করেন। তবে স্টেশনে না গিয়ে তারা মুরাদপুর মোড়ে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে একটি মিছিল মুরাদপুরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করলে শুরু হয় সংঘর্ষ। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং পাথর নিক্ষেপ ও ককটেল বিস্ফোরণ। বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা চলে সংঘর্ষ। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হলে ষোল শহরের দিকে অবস্থান নেন যুবলীগ-ছাত্রলীগ কর্মীরা।

ষোলশহর থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি মিছিল থেকে আন্দোলনকারীদের আবারও ধাওয়া দেওয়া হয়। সেই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। হাফ হাতা সাদা শার্ট, জিন্স প্যান্ট ও বাম হাতে সিলভার কালার ঘড়ি পরেছিলেন তিনি।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ছাত্রদের ধাওয়া খেয়ে মুরাদপুরের 'সাদিয়াস কিচেন' রেস্টুরেন্টের সামনে অবস্থান করছিলেন কমপক্ষে ১০০ নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পাথর ছুড়ছিলেন তারা। পরে পেছন থেকে আরও নেতাকর্মী নিয়ে যোগ দেন বাবর। সে সময় তার ডান হাতে ছিল পিস্তল এবং মাথায় হেলমেট। তার ডান পাশে টি-শার্ট পরে হেলমেট মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন নুরুল আজিম রনি। বাবরকে অস্ত্র হাতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিতে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরে শটগান হাতে মাস্ক পরিহিত যুবলীগ কর্মী দেলোয়ার গুলি ছুড়তে শুরু করেন।

উত্তেজনা বেড়ে গেলে ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্যে থেকে গুলি ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসেন আরেক অস্ত্রধারী যুবলীগ কর্মী ও পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ফিরোজ। তার পরে গুলি ছুড়তে ছুড়তে আসেন দেলোয়ার। পেছনের ছিলেন বাবর।

সূত্র মতে, বাবরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ওমরগনি এমইএস কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাফর উল্লাহর প্রাইভেটকারে আনা হয়েছিল অস্ত্র। গুলি ছোড়ার সময় সেই প্রাইভেটকারের পাশে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি কথা বলছিলেন।

গাড়িতে অস্ত্র সরবরাহের ব্যাপারে গত ১৭ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল দ্য ডেইলি স্টার।

চট্টগ্রামের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পাঁচলাইশ থানা এবং চান্দগাঁও থানার একাধিক মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অন্য থানায় তাদের বিরুদ্ধে গুলি করে আহত করা এবং হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

এত অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অবৈধ অস্ত্রের বিষয়ে পুলিশের সব সময়ই জিরো টলারেন্স। যার নামই আসুক না কেন, প্রমাণ থাকলে তাকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। যৌথ অভিযানে আমরা এই বিষয়গুলো নজরে রাখব।'

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

1h ago