ভর্তুকির এক তৃতীয়াংশই বিদ্যুৎখাতে, বেশির ভাগ যাবে ক্যাপাসিটি চার্জে

বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি নেই
প্রতীকী ছবি

২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকির এক তৃতীয়াংশের বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যার বেশির ভাগই যাবে ক্যাপাসিটি চার্জের খরচ বাবদ।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে সরকার বেশ কয়েকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও বাজেটে এই বড় অংকের ভর্তুকি রাখায় এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট এবং চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ৯ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

সব খাত মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ ১ লাখ ৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৩৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে মোট ১ লাখ ৬ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকির মধ্যে বিদ্যুৎ খাত পেয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের আগে বহু বছর এ খাতে ভর্তুকি ছিল ৭ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা।

গত বছর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, ভর্তুকির বেশির ভাগ অর্থ বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ মেটাতে ব্যয় করা হয়।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করুক বা না করুক একটা নির্দিষ্ট ফি তাদের উৎপাদনক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা আছে, যা ক্যাপাসিটি চার্জ নামে পরিচিত।

গবেষণায় বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে এটি ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।

যোগাযোগ করা হলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'ভর্তুকির টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে খরচ করা হয় এটা ঠিক নয়। পিডিবি ভোক্তাদের কাছে যে হারে বিদ্যুৎ বিক্রি করে, তার চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনে। ভর্তুকি হিসেবে আমরা যা পাই সেটি এই ঘাটতি মেটানোর জন্য। এর একটি অংশ হয়তো ক্যাপাসিটি চার্জ।'

তিনি বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাস ও জ্বালানির জন্য পিডিবি অর্থ দেয়। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্থিতিশীল মূল্য এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

'আমরা কেবল বিদ্যুতের দাম সামান্য বাড়িয়েছি এবং আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছি। কিন্তু তারপরও আমরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য বেশি ব্যয় করছি।'

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ক্যাপাসিটি পেমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির বেশি দামের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা তৈরি করছে।

'এমনকি কয়েকবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও, সরকারকে এখনও এই খাতে ভর্তুকি দিতে হবে কারণ পাইপলাইনে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্যও শিগগির ক্যাপাসিটি চার্জ লাগবে,' তিনি বলেন।

তিনি বলেন, এই খাতে ভর্তুকি কমানোর অনেক বিকল্প রয়েছে। যেমন অদক্ষ ও পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিয়ে এবং কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে ক্যাপাসিটি চার্জের বিধান না রেখে। কিন্তু সেদিকে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই।

সরকার আগামী তিন বছরে ভর্তুকি কমাতে বছরে তিন থেকে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুতের দাম ৮ দশমিক ৫ শতাংশ এবং গত বছর তিন বার ৫ শতাংশ করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'বিদ্যুতের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানো হচ্ছে তবে উৎপাদন খরচ দ্রুত বাড়ছে।'

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বলেন, 'ভর্তুকি তুলে নিলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতিও বাড়বে।'

নতুন বাজেটে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৬ হাজার কোটি টাকা।

অন্যান্য ভর্তুকি

জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বিবেচনায়, খাদ্যে ভর্তুকি চলতি বছরের ৬,৯১৬ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭,২৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ভর্তুকি মূল্যে আরও বেশি মানুষ খাদ্য পাবে।

তিনি বলেন, 'আমরা ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) প্রোগ্রামের আওতায় নির্দিষ্ট এলাকায় দোকান করার পরিকল্পনা করছি।'

গত বছর প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে ১৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে এর পরিমাণ ১৭ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।

সরকার প্রণোদনা আকারে রপ্তানি খাতে ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা দেবে।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

16h ago