‘রাবার কোম্পানিকে জমি ইজারা দেওয়া পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন’

পাহাড়ের জমির মালিকানা দাবি করে রাবার কোম্পানির ব্যানার। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলায় রাবার কোম্পানির কাছে জমি ইজারা দেওয়ায় পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন।

আজ শুক্রবার 'সংকটে লামার তিন জুমিয়া পাড়া' শীর্ষক এক অনলাইন আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

জাকির হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, 'পাহাড়ে যখন আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের লড়াই চলছিল তখন আমাদের সরকার একটি সমঝোতায় এসেছে। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে ১৯৯৭ সালে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তির যদি বাস্তবায়ন হতো, তাহলে আজকে এই সমস্যার উদ্ভব হতো না।'

তিনি বলেন, 'পাহাড়ের ভূমি কমিশন ও ভূমি বিরোধ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি, যেটা চুক্তি অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়ার কথা ছিল। কাজেই, এখানে রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির একটা সমস্যা আমরা লক্ষ্য করছি।'

'রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে এখনো ঘাটতি আছে। বৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের সম্মান দিন দিন কমে যাচ্ছে। সংখ্যালঘুদের প্রতি আমাদের ঘৃণাসূচক বাক্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, 'রাবার কোম্পানির কাছে জমি ইজারা দেওয়ায় পার্বত্য চুক্তির লঙ্ঘন করা হয়েছে। খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দেয়া, পানিতে বিষ মিশিয়ে দেওয়া এগুলো ক্রিমিনাল অফেন্স। কিন্তু এগুলো যারা করেছে তারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি।'

আলোচনায় অংশ নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজিম তিতিল বলেন, 'সারা বাংলাদেশেই জমিগুলো সাধারণ মানুষের হাতে নেই। জমিগুলো বিভিন্ন করপোরেশন, ক্ষমতাধর এবং উচ্চবিত্তদের কাছে আছে। সাধারণ মানুষকে ছিন্নমূল করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা। তারা যেসব জায়গা বসবাসযোগ্য করেছিলেন, সেসব জায়গাগুলো থেকে তাদের বারবার উচ্ছেদ করা হচ্ছে।'

লামার সরই ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রেন সাই ম্রো বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, 'গত ৬ সেপ্টেম্বর রাবার কোম্পানির লোকজন কলাই ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ করে। এই ঝিরির পানি আশেপাশের ৩টি গ্রামের মানুষ ব্যবহার করত। বিষ প্রয়োগের পর প্রায় ২-৩ সপ্তাহ পর্যন্ত ঝিরির পানি খাওয়ার অযোগ্য ছিল। সে সময় গ্রামবাসীরা শুধু বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর রেং ইয়ুঙ ম্রোর ৩০০ কলাগাছ কেটে ফেলে আবার কোম্পানির লোকজন। ওই জায়গাতেই ২০২১ সালে বিভিন্ন ফলজ গাছ ছিল। কিন্তু সেগুলোও রাবার কোম্পানি কেটে দিয়েছিল।'

মামলা ও নিরাপত্তাহীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের ১৪ জনের নামে মামলা করা হয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা বাড়িতে থাকতে পারছে না। অনেকেই লুকিয়ে আছেন। পুলিশের আটকের ভয়ে গ্রামের মানুষ বাজারে যেতেও ভয় পাচ্ছে।'

অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইপিনিউজের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই অনলাইন আলোচনা সভার সঞ্চালনা করেন 'আদিবাসী যুব ফোরামের' সাংগঠনিক সম্পাদক ম্যাথিউ চিরান।

 

Comments

The Daily Star  | English
Nat’l election likely between January 6, 9

EC suspends registration of AL

The decision was taken at a meeting held at the EC secretariat

8h ago