রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে ম্রোদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

লামা উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের লামা উপজেলায় দুর্গম লাংকম ম্রো পাড়ায় পাহাড়িদের জুমের বাগান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একটি রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার এই আগুনে প্রায় একশ একর জুমের ধান, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন বাগান পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ জমি দখলের জন্য লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পাহাড়ে আগুন দেয়। তবে কোম্পানিটির কর্মকর্তারা আগুন দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা শুধু পাহাড় পরিষ্কার করেছেন।

ম্রো পাড়ার কারবারি লাংকম ম্রো দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লামা রাবার কোম্পানি আমাদের অনেক কষ্টের জুমের বাগান পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমরা কি এই দেশের নাগরিক নই? কেন আমাদের উপর এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে?'

পাহাড়ের জমির মালিকানা দাবি করে ব্যানার লাগিয়েছে রাবার কোম্পানি। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, জুমের বাগের আগুন এক পর্যায়ে আমাদের পাড়ার খুব কাছে চলে আসে। চালে উঠে খাবার পানি ছিটিয়ে আগুনের হাত থেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই রবার কোম্পানির হাত থেকে রক্ষা পেতে গত ২০ মার্চ বান্দরবান জেলা প্রশাসনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলাম। পার্বত্য মন্ত্রীর পায়ে ধরে নিরাপত্তা চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউ আমাদের সাহায্য করেনি। এই কোম্পানি আমাদের প্রায় ৩০০ একর জুমের জায়গা দখল করে নিয়েছে। প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে।'

ওই পাড়ার আরেক বাসিন্দা মটি ত্রিপুর ডেইলি স্টারকে বলেন, পাড়ার লোকজন গতকাল সারাদিন কিছু খায়নি। সবাই খুব আতঙ্কে আছেন।

এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, 'জুমের বাগানে আগুন লাগানোর ঘটনা শুনে আমাদের এসি ল্যান্ড, ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ সদস্যরা সেখানে যান। পাড়ার আশপাশে পানির কোনো উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কষ্টসাধ্য ছিল।'

পাহাড়ে আগুনে ম্রোদের জুমের ধান খেত, আনারসসহ বিভিন্ন বাগান পুড়ে গেছে। ছবি: সংগৃহীত

'ঘটনার পরপরই আমি লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে কথা বলি। তারা আগুন লাগানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন', বলেন মোস্তফা জাবেদ।

লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালক কামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কারো জুমের যায়গায় আগুন লাগাইনি। তবে আমরা সেখানে আমাদের জায়গা পরিষ্কার করেছিলাম।'

ওই জমির মালিকানা দাবি করে তিনি বলেন, 'একসময় সেখানে আমাদের রাবার বাগান ছিল। ১৯৯৪-৯৫ এবং ১৯৯৬ সালে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা ৬৪ জন রাবার প্রকল্পের জন্য ১৬০০ একর জায়গা লিজ নিয়েছিলাম।'

গত ২০ মার্চ দ্য ডেইলি স্টারে 'আমাদের পাড়াগুলো রক্ষা করুন' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ২৪ জন নাগরিক পাহাড়িদের জমি দখলের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেন।

তারা অবিলম্বে জুমের বাগান, পাহাড় এবং ভূমি দখলের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে ভূমিদস্যুদের গ্রেপ্তার এবং পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের দখলসত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

5h ago