‘পাহাড় ইজারা দিয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করা হচ্ছে’

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের আগ্রাসন ও আমাদের ভূমি রক্ষার লড়াই’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা। ছবি: স্টার

বান্দরবানে ১ হাজার ৪০৭টি রাবার বাগান ও ৪৬৪টি হর্টিকালচারের জন্য ১ হাজার ৮৭১টি প্লটে ৪৬ হাজার ৯৫২ একর জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বান্দরবানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬০০ একর জমি।বংশ পরম্পরায় এসব জমিতে জুম চাষ করতেন ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী।

পাহাড়ে জমি দখল করতে জুম বাগানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রজের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গোল টেবিল বৈঠক হয়। 'লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজ লিমিটেডের আগ্রাসন ও আমাদের ভূমি রক্ষার লড়াই' শীর্ষক এই বৈঠক আয়োজন করে লামা সরাই ভূমি রক্ষা কমিটি।

বৈঠকে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, লাংকম পাড়া, জয় চন্দ্র পাড়া ও রেংইয়েন পাড়ার ৩৯টি পরিবারের ৪০০ একর জমি দখল করেছে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। রাবার কোম্পানির লোকজন রেংয়েন কার্বারি পাড়ার একমাত্র পানির উৎস্য কলাইয়া ঝিরিতে বিষ দিয়েছে। এতে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানীয় জলের সংকটে পড়েন স্থানীয়রা।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলা, সরকার দলীয় রাজনীতিবিদ, এমপি ও মন্ত্রীদের পাহাড় ইজারা দেওয়া হচ্ছে। তারা পাহাড়ের জমি দখল করে ব্যবসা করছেন। পাহাড়ের সম্পদ সবার কিন্তু এটিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ১০ বছরের মধ্যে রাবার বাগান সৃজন না করলে ইজারা বাতিল করার শর্ত থাকলেও রাবার কোম্পানি এটি ভঙ্গ করে বেইআইনিভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী তাদেরকে সহায়তা করছে। আইন ভঙ্গ করতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা করছে।

তিনি আরও বলেন, ম্রো ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভূমি দখলের ঘটনার জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিযুক্ত করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে গোল রক্ষা করেছেন রুপনা চাকমা, রক্ষণভাগ রক্ষা করেছে আনাই মগিনি। আক্রমণভাগে ঋতুপর্ণা চাকমা। তাদের শিরোপা জয়ে রাষ্ট্রের জন্য সম্মান এসেছে। এ জয় তারা ১৮ কোটি মানুষকে উৎসর্গ করেছে।

তিনি বলেন, তাদেরকে আমরা বলি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। এ 'ক্ষুদ্র' শব্দটি ব্যবহার করে একটি জাতির আত্মসম্মান ও আত্নবিশ্বাসকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাদেরকে রক্ষা করার পরিবর্তে তাদের আত্মসম্মান কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। শিরোপা জয়ের আনন্দে উৎফুল্ল হোন কিন্তু যারা শিরোপা এনে দিয়েছে তাদের জমি রক্ষা করার পরিবর্তে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। তাদের জায়গা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। তার মানে পুরো সরকার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভন্ডামিতে জড়িত। এই রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা, দাতা গোষ্ঠীরা।

অনুষ্ঠানের সভাপতি লামা সরাই ভূমি রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক রংধজন ত্রিপুরা বলেন, জেলা প্রশাসন প্রথাগত ভূমি উত্তরাধিকারকে তোয়াক্কা না করে বেআইনিভাবে পাহাড়ি জমি ইজারা দিয়ে ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ করছে। লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রি ১ হাজার ৬০০ একর জমি লিজ নিলেও বাস্তবে তারা দখল করেছে ৩ হাজার ৫০০ একর।

তিনি আরও বলেন, লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের ইজারা বাতিল করে ম্রো ও ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জমি ফেরত দিতে হবে। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ঝিরিতে বিষ প্র‍য়োগে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, বাংলাদেশ লেখক শিবির সভাপতি হাসবুর রহমান, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব সুশান্ত বড়ুয়া, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম প্রমুখ বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
The Indian media and Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

14h ago