নোয়াখালীতে টানা বর্ষণ ও জলাবদ্ধতায় ৪২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮৭৪ জন। ছবি: স্টার

জুলাই মাসের প্রায় পুরোটা ও আগষ্টের প্রথম ১০ দিনের টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীর নয় উপজেলায় ৪২ কোটি ৫২ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এসব ফসলের মধ্যে আছে আমন বীজতলা, রোপা আমন ও আউশ ধান, শরৎকালীন শাক-সবজি এবং গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সীমা রানী দাস।

অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি মৌসুমে নোয়াখালীর নয় উপজেলায় ৬২ হাজার ১২৮ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা, রোপা আমন, আউশ ধান, শরৎকালীন শাক-সবজি ও গ্রীষ্মকালীন তরমুজ মাঠে ছিল। টানা বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় দুই হাজার ৩৬৯ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর আর্থিক মূল্য ৪২ কোটি ৫২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ৪৮ হাজার ৮৭৪ জন।

এর মধ্যে মাঠে আমন বীজতলা ছিল নয় হাজার ৮৩৪ হেক্টর জমিতে। ক্ষতি হয়েছে এক হাজার ২১৯ হেক্টর জমির বীজতলা। ক্ষতির পরিমান ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর মূল্য ১০ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের সংখ্যা ২৯ হাজার ৭১০ জন।

জলাবদ্ধতায় সবেচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমন বীজতলা। ছবি: স্টার

রোপা আমন মাঠে ছিল ১৪ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৩৮৯ হেক্টর জমির ধান। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪ হাজার ৪৭৭ জন।

আউশ ধান মাঠে ছিল ৩২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে। ক্ষতি হয় ১৬৪ হেক্টর জমির ফসল। এর মূল্য এক কোটি ৩৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ২ হাজার ৭৮১ জন।

শরৎকালীন শাক-সবজি চাষ হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে। ক্ষতি হয়েছে ৫৯৬ হেক্টর জমির সবজি। এর আর্থিক মূল্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ১১ হাজার ৯০০ জন।

আর মাঠে থাকা প্রায় ১৯ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন তরমুজের মধ্যে নষ্ট হয়েছে শূণ্য দশমিক ২৮ হেক্টর জমির তরমুজ। এর মূল্য দুই লাখ টাকার বেশি।

নোয়াখালী সদর উপজেলার চর দরবেশ গ্রামের কৃষক আবু সোলেমান (৬৫) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ টাকা কৃষি লোন নিয়ে পাঁচ একর জমিতে রোপা আমন চাষ করেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় সেই ধান পানিতে তলিয়ে পঁচে যায়।

এই কৃষক জানান, গত বছর চার একর জমিতে রোপা আমন চাষ করে ২৮০ মন ধান ঘরে তুলেছেন তিনি। ঋণের টাকা ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে ভালোভাবেই সংসার চলছিল। কিন্তু এবারের ক্ষতি তিন কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা বুঝতে পারছেন না।

এদিকে বৃষ্টির পানিতে ৫৫ কেজি ধানের রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হওয়ার কথা জানা যায় পূর্ব শুল্যকিয়া গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিনের কাছ থেকে। একই এলাকার কৃষক আবুল কাশেমেরও একই দশা। জানালেন, তার আড়াই একর জমির  আউশ ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আবার পাঁচ একর জমিতে আমন রোপনের প্রস্তুতি ছিল তার। কিন্তু বীজতলা পঁচে যাওয়ায় চড়া দামে চারা কিনে তা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদের পর্যবেক্ষণ হলো, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি চলাচলের জন্য এখানে যে খালগুলো আছে সেগুলোতে দখল ও জাল পেতে রাখার কারণে পানি নিষ্কাসনে ব্যাঘাত ঘটেছে। যে কারণে এমন জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান হারুনুর রশিদ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মীরা রানী দাস বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের অর্থ ও বীজ দিয়ে সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

Comments

The Daily Star  | English

The ceasefire that couldn't heal: Reflections from a survivor

I can’t forget the days in Gaza’s hospitals—the sight of dismembered children and the cries from phosphorus burns.

5h ago