‘দেশের সীমিত সম্পদ, সব কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার ও বীজ দেওয়া সম্ভব না’

আমন ধান কাটার পর বোরো ধানের জন্য বীজ ফেলছেন এক কৃষক। ছবিটি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখাল এলকা থেকে তোলা হয়েছে। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে চলতি বছরের দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সিলেট বিভাগের প্রায় সব এলাকার লোকজন। এর মধ্যে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। তাদের কেউ হারিয়েছেন খেতের ফসল, কেউ বীজ আর কেউ বা তার শেষ সঞ্চয়।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পর্যাপ্ত প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন আশ্বাস দেওয়া হলেও, প্রকৃত যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে দাবি কৃষকদের।

এছাড়া প্রণোদনা দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি ও দেরিতে বীজ-সার সরবরাহের ফলে সময়মতো বোরো বীজতলা প্রস্তুত করা যায়নি বলেও অভিযোগ কৃষকদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক বন্যায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় মোট ৩ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১ লাখ ৭০ হাজার, সুনামগঞ্জে ৬৮ হাজার, হবিগঞ্জে ৮২ হাজার ও মৌলভীবাজারে ১৭ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

চলতি বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে গত ১০ নভেম্বর সিলেট বিভাগের ২ লাখ ৪৯ হাজার ৫০০ কৃষকের জন্য বীজ ও সার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এ প্রণোদনার আওতায় ১ লাখ ১০ হাজার কৃষকের জন্য জনপ্রতি ১ বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি উফশী বীজ ও ২০ কেজি সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কৃষকের জন্য জনপ্রতি ১ বিঘা জমির জন্য ২ কেজি হাইব্রিড বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর আগে রবি মৌসুমকে সামনে রেখে গত ২৬ অক্টোবর ৬১ হাজার ৯১০ জন কৃষকের জন্য গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, বাদাম, পেঁয়াজ, মুগডাল ও মসুর ডালের বীজ ও সার বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এছাড়াও ১৭ অক্টোবর বিভাগের ৪ জেলায় ৩৮ হাজার ৬২০টি সবজি বাগান করার লক্ষ্যে কৃষকদের জন্য বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার লেদারবন্দ গ্রামের কৃষক আব্দুজ জহুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের গ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ জন কৃষক আছেন। অথচ প্রণোদনা পেয়েছেন মাত্র ১০ জন। তাছাড়া যারা প্রণোদনা পেয়েছেন তারা মূলত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ মেম্বারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।'

'আমরা যারা প্রণোদনার সার-বীজ পাইনি, আমরা নিজেরা ঋণ করে বীজতলা তৈরি করেছি,' যোগ করেন তিনি।

জেলার ধর্মপাশা উপজেলার মহদীপুর গ্রামের কৃষক লিটন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ৫ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার পেয়েছি। কিন্তু বীজ ও সার পেতে দেরি হচ্ছে দেখে আমি আগেই ঋণ করে বীজতলা প্রস্তুত করে কেনা বীজ বপন করেছিলাম। পরে প্রণোদনার বীজ পাওয়ার পর নতুন করে আরও বীজতলা করেছি।'

বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, একজন কৃষকের জন্য ১ বিঘা জমি চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। অথচ প্রায় সব কৃষকই আরও বেশি জমিতে চাষাবাদ করেন।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের আরও বেশি প্রণোদনা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল।

জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের সীমিত সম্পদ দিয়ে চাইলেই সব কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী সার ও বীজ দেওয়া সম্ভব না। তবে বেশি প্রণোদনা দিতে পারলে অবশ্যই তা বেশি চাষাবাদের জন্য ভালো।'

'তবুও আমরা কৃষকদের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি,' বলেন তিনি।

তালিকায় অনিয়মের বিষয়ে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমাদের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারদের সহায়তায় তালিকা তৈরি করেন। তাই এ তালিকায় স্বজনপ্রীতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।'

'দেরিতে বীজ ও সার বিতরণের বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) দায় আছে' উল্লেখ করে এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, 'তারা (বিএডিসি) দেরিতে বীজ ও সার সরবরাহ করায়, ‍অনেক কৃষক আগেই নিজেরা বীজতলা প্রস্তুত করে ফেলেছেন। অনেকেই এ প্রণোদনায় উপকৃত হননি।'

'ধান বীজ ছাড়াও ভুট্টার বীজও দেরিতে দেওয়া হয়েছিল এবং সূর্যমুখীর বীজ এখনো সরবরাহ করতে পারেনি বিএডিসি,' যোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএডিসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক (বীজ বিতরণ) ওবায়দুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বরাদ্দের ৯৫ শতাংশ বীজ ও সার ইতিমধ্যে বিতরণের জন্য কৃষক পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু এ জন্য ঢালাওভাবে দোষারোপ করা অনুচিত। আমরা ৩৫ শতাংশ লোকবল নিয়ে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।'

Comments

The Daily Star  | English

With Trump’s win, Bangladesh gets more investment queries from China

Chinese entrepreneurs are increasingly inquiring with Bangladeshi businesses over scope for factory relocations, joint ventures and fresh investments, apprehending that the new Trump administration might further hike tariffs on their exports to the US.

12h ago