চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, পটিয়ায় পেয়ারার বাম্পার ফলন

পেয়ারা
পেয়ারা নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রামের চাষিরা। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

পেয়ারার বাম্পার ফলন হওয়ায় চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলার চাষিরা এখন বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্বাদ ও আকারের জন্য এ অঞ্চলের পেয়ারা বিখ্যাত উল্লেখ করে এই ২ উপজেলার কৃষি অফিস জানিয়েছে, এ অঞ্চলের প্রায় ৮৩০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। প্রতি মৌসুমে কৃষকরা গড়ে ৬ কোটি টাকার পেয়ারা বিক্রি করেন।

পেয়ারা
চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রামে পেয়ারা বাগান। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

সেই এলাকার কৃষকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, পাহাড়ি এলাকায় শত শত বাগানে পেয়ারা চাষ হয়। বেশি বাগান চন্দনাইশে। কৃষকরা বাগানগুলোয় পেয়ারা ছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু ও অন্যান্য ফল চাষ করেন। তবে এলাকাটি সুস্বাদু পেয়ারার জন্য বিখ্যাত।

তারা আরও জানান, পেয়ারার মৌসুমে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় যান। চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রামের পেয়ারা স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক সুভাষ মল্লিক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাটি ও পরিবেশের গুণে এই এলাকার পেয়ারা সুস্বাদু হয়। এই জাতের বীজ অন্য এলাকায় বপন করলেও এতো সুস্বাদু পেয়ারা পাওয়া যায় না।'

পেয়ারা
ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

পেয়ারার মৌসুমে চন্দনাইশের রওশন হাট, বাগিচা হাট, বাদামতল ও দোহাজারী এবং পটিয়ার কমল মুন্সির হাট ও খরানা বাসস্ট্যান্ডসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন।

কৃষকরা প্রতিদিন ভোর থেকে সেখানে পেয়ারার ঝুড়ি নিয়ে বসেন। পেয়ারার বাজারগুলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের জন্য তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পেয়ারা পরিবহন সহজ হয়।

গত সপ্তাহে রওশন হাট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, লাল কাপড়ে পেয়ারা মোড়ানো ঝুড়ি নিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসছেন চাষিরা।

কৃষক জানে আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৮ একর জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। জনপ্রতি ৫০০-৬০০ টাকা মজুরিতে ১০ শ্রমিক বাগানে কাজ করেন।'

পেয়ারা
চন্দনাইশের রওশন হাটে পেয়ারা বাজার। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চলতি মৌসুমের শুরুতে এক জোড়া পেয়ারার ঝুড়ি ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে জানিয়ে আলম আরও বলেন, 'মৌসুমের মাঝামাঝি দাম কমে ১ হাজার ৫০০ টাকা হয়। এখন এক জোড়া ঝুড়ির দাম ১ হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা।'

একটি ঝুড়িতে প্রায় ২৫০ পেয়ারা থাকে বলে তিনি জানান।

কঠোর পরিশ্রম করে বাগানের পরিচর্যা করলে মৌসুমে একর প্রতি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায় বলে মন্তব্য করেন জানে আলম।

'এলাকায় পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য হিমাগার প্রয়োজন' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পেয়ারা পচনশীল হওয়ায় আমরা ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। বাগান থেকে সংগ্রহের পর পেয়ারা দ্রুত বিক্রি করতে হয়।'

চন্দনাইশের কৃষক সগীর আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৩০ একর জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। বাগানে ৪০ শ্রমিক কাজ করেন। চলতি মৌসুমে প্রতিদিন ২০-২৫ জোড়া ঝুড়ি পেয়ারা সংগ্রহ করছি।'

পেয়ারা
ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

পাহাড়ের বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে বিক্রি করতে যেতে একজন শ্রমিককে ৫০০ টাকা দিতে হয় বলে জানান তিনি।

কৃষক নুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আন্তরিকভাবে বাগানে কাজ করলে বিনিয়োগের তুলনায় দ্বিগুণ লাভ করা যায়।'

চন্দনাইশের পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ২ হাজার কৃষকের পেয়ারা ও অন্যান্য ফলের বাগান আছে জানিয়ে নুরুল আলম আরও বলেন, 'মুজাফফরাবাদ থেকে দোহাজারী পর্যন্ত এসব বাগানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ উপজেলার হাশিমপুর ও কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে বাগানের সংখ্যা বেশি।'

স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে এসব বাগানে আসেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি।

পেয়ারা
চন্দনাইশের কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নের কাঞ্চননগর গ্রামে পেয়ারা বাগান। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

চন্দনাইশ উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমরান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিভিন্ন ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে যান।'

দক্ষিণ চট্টগ্রামকে পেয়ারা উৎপাদনকারী এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'উপজেলা কৃষি অফিস সবসময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা কোনো সমস্যা নিয়ে এলে আমরা তা সমাধানের চেষ্টা করি।'

তিনি মনে করেন, জ্যাম-জেলি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা যদি পেয়ারা চাষিদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করেন তাহলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবেন।

চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৭৫০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে এবার পেয়ারার চাষ হয়েছে।

পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট ৮০ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে পেয়ারার চাষ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
International Crimes Tribunal 2 formed

Govt issues gazette notification allowing ICT to try political parties

The new provisions, published in the Bangladesh Gazette, introduce key definitions and enforcement measures that could reshape judicial proceedings under the tribunals

6h ago