চূড়ান্ত নয় পিপিপি-মুসলিম লীগ জোট, ইমরানের সামনে এখনো সুযোগ
পাকিস্তানের নির্বাচনের ভোটগ্রহণের পর কেটে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। কিন্তু এখনো দেশটিতে সরকার গঠন নিয়ে কাটেনি অনিশ্চয়তা।
নওয়াজ শরীফের পিএমএল-এন ও বিলাওয়াল ভুট্টোর পিপিপি জোট সরকার ইচ্ছে প্রকাশ করলেও পাঁচ দফা বৈঠকের পরেও তারা একমত হতে পারেনি। অপরদিকে, ইমরান খানের পিটিআইও সরকার গঠনে তৎপর রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন, জিওটিভি ও ট্রিবিউনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নির্বাচনের ফল ও পরবর্তী পরিস্থিতি
পাকিস্তানের ৮ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে কোনো দল সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পান পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন)। তৃতীয় স্থানে আছে পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে ও ইশতেহার চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে পিটিআই। এসব অভিযোগের মধ্যেই দেশটিতে নতুন সরকার গঠনে তৎপর রয়েছে মূল দলগুলো।
পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। বসে নেই পিটিআইও।
ইমরান খান ও পিটিআই পরিস্থিতি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পিটিআইকে (তেহরিক-ই-ইনসাফ) এই নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তবে দলের সদস্যরা স্বতন্ত্র হিসেবে লড়ে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন।
কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ না নেওয়া এবং সামগ্রিকভাবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন না পাওয়ায় তারা সরকার গঠন করতে পারেননি।
তবে এসব বাধা সত্ত্বেও সরকার গঠনের প্রচেষ্টা থামাননি ইমরান।
এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল রোববার অপেক্ষাকৃত ছোট দল সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের (এসআইসি) সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার ঘোষণা দেয় পিটিআই।
পিটিআই চেয়ারম্যান গহর আলী খান গতকাল জানান, এ বিষয়ে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সঙ্গে তার দলের আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে।
চুক্তির অংশ হিসেবে পিটিআই-সমর্থিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের (পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া) নির্বাচিত প্রার্থীরা সুন্নি ইত্তেহাদে যোগ দেবেন।
তবে কয়েকজন বিশ্লেষক বলেছেন, এ পথে জাতীয় পরিষদে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের মাধ্যমে রিজার্ভ আসনগুলো ইমরান খানের প্রার্থীরা পেলেও এই পথ খুব একটা মসৃণ হবে না। চাইলে এই প্রক্রিয়ায় আইনি বাধা আসতে পারে।
অপরদিকে, এখন পর্যন্ত ইমরান খান বলে এসেছেন পিএমএল-এন বা পিপিপির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতায় যাবেন না তিনি।
কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের এক প্রতিবেদন মতে, ইমরান খানের প্রতি বিরূপ মনোভাব থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে তার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে আগ্রহী দেশটির সেনাবাহিনী। অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ নিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন ইমরান। পরবর্তীতে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে।
দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে অসম্ভব জনপ্রিয় ইমরান খানকে বাদ রেখে সরকার গঠন করলে সেটা ভঙ্গুর হতে পারে এবং দেশের উন্নতির পথে বাধার সৃষ্টি পারে—এ বিষয়টি সেনাবাহিনীর বিবেচনায় রয়েছে। ইমরান খান কারাগারে বন্দি থাকলেও তার জনপ্রিয়তা কমবে না, এ বিষয়টিও সেনাবাহিনী মেনে নিয়েছে।
সে ক্ষেত্রে পিটিআইর সঙ্গে পিপিপির জোট বা অন্য কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
পিএমএল-এন ও পিপিপি জোট
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সমর্থিত পিএমএল-এন ও পিপিপির মধ্যে পাঁচ দফা বৈঠকে সরকার গঠন বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। আজ ষষ্ঠবারের মতো দুই দলের নেতারা বৈঠক করবেন।
আলোচনার শুরু থেকে বিলাওয়াল ভুট্টোর দল জানিয়ে এসেছে, জোট সরকারে কোনো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ চান না তারা।
জিও নিউজকে পিপিপির তথ্যসচিব ফয়সাল করিম কুন্দি জানান, তার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভায় কোনো পদ নিতে না চাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়।
তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন, আজকেই পিপিপি ও পিএমএল-এনের মধ্যে সরকার গঠনের সব খুঁটিনাটি চূড়ান্ত হবে।
তবে দলটি অন্যান্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে বলে জানান তিনি।
সোমবার দুই দল তিন ঘণ্টার বৈঠক করে। দিনের পরের অংশে আবারও বসার কথা থাকলে সেই বৈঠকে সময় বদলে আজ মঙ্গলবার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকার গঠনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে খসড়া সুপারিশ এক দিন আগেই তৈরি করা হলেও আজকের বৈঠকে বসার আগে দুই দলের নেতৃবৃন্দ নিজেদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
সূত্ররা জানিয়েছেন, পিএমএল-এন ও পিপিপির কমিটির তৈরি করা এই সুপারিশগুলোকে আজকের বৈঠকের পর আনুষ্ঠানিক লিখিত চুক্তিতে রূপান্তর করা হবে।
Comments