পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন: জয়ী দলকে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে
অর্থনৈতিক জর্জরিত দেশ পাকিস্তানে গতকাল বৃহস্পতিবার সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২২ আসনের ফল প্রকাশ পেয়েছে।
আজ শুক্রবার পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের সামনে অপেক্ষা করছে বেশ কিছু গুরুতর সমস্যা সমাধানের দায়ভার।
ইন্টারনেট বন্ধ, সহিংসতার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর শুরু হয়েছে ফল ঘোষণা।
এখন পর্যন্ত ২২ আসনের ফল জানিয়েছে পাকিস্তানি গণমাধ্যম ডন।
নয় আসন নিয়ে এগিয়ে আছে নেওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ। ইমরান খানের পিটিআই দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সাতটি ও বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি পেয়েছে পাঁচটি আসন।
আইএমএফের ঋণ
পাকিস্তান গত গ্রীষ্মে কোনো মতে দেউলিয়া হওয়া থেকে নিস্তার পায়। এ ক্ষেত্রে শেষ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থার (আইএমএফ) কাছ থেকে পাওয়া ৩০০ কোটি ডলারের বেলআউট প্যাকেজ বিশেষ কার্যকরী ছিল। তবে মার্চে আইএমএফের এই সহায়তা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এরপর আবারও নতুন করে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রকল্পের বিষয়ে সংস্থাটির সঙ্গে সমঝোতায় যেতে হবে। নতুন সরকারের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে, কারণ কঠোর সংস্কার কার্যক্রমের কারণে দেশের অর্থনীতিতে রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।
তবে নতুন প্রকল্পের সঙ্গে আরও কঠোর শর্ত ও সংস্কারের বাধ্যবাধকতা যুক্ত হতে পারে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দাবি করেছেন, তার দলের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চলছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নেতা নিজেও আছেন কারাবন্দী। এতে তার লাখো সমর্থক-ভক্ত ক্ষুব্ধ।
ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে মোট তিন দফায় তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং আরও বেশ কয়েকটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে সামরিক অবকাঠামোর বিরুদ্ধে হামলার নির্দেশ দেওয়ার একটি অভিযোগ রয়েছে, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
সংশ্লিষ্টদের মতে, অসম্ভব জনপ্রিয় ইমরান যতদিন কারাগারে থাকবেন, ততদিন পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে। দেশে স্থিতিশীল পরিস্থিতি বজায় রাখতে ও বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে এসে অর্থনীতিকে বলিষ্ঠ করতে ইমরানকে মুক্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
জঙ্গিবাদের উত্থান
গত ১৮ মাসে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
২০১৪ সালে বেশিরভাগ জঙ্গি সংগঠন আফগানিস্তানে পালিয়ে গেলেও ২০২১ সালে দেশটিতে তালেবান সরকার ক্ষমতায় ফিরে আসার পর তারা আবারও সংগঠিত হয়েছে। সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। সূত্ররা জানিয়েছেন, এই সংগঠনটি ন্যাটো বাহিনীর ফেলে যাওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালাচ্ছে।
বেলুচিস্তানে উগ্র জাতীয়তাবাদীরাও হামলার সংখ্যা বাড়িয়েছে।
সীমান্তে অস্থিরতা
টিটিপির হামলায় ইসলামাবাদ ও তালেবান গোষ্ঠীর মাঝে নজিরবিহীন টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। ইসলামাবাদ ইতোমধ্যে হাজারো অবৈধ আফগানদের দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এই পরিবারগুলো কয়েক দশক ধরে পাকিস্তানে বসবাস করছিল।
গত মাসে পাকিস্তান ও ইরান একে অপরের ভূখণ্ডে 'জঙ্গি স্থাপনার' ওপর হামলা চালায়। এই পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হলেও আপাতত এ বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে সমাধান করা হয়েছে।
পশ্চিম সীমান্তের এই সমস্যার পাশাপাশি পূর্ব সীমান্তে ভারতের সঙ্গে পুরনো দ্বন্দ্ব আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ তুলেছে, নয়াদিল্লি পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আততায়ী পাঠিয়েছে। এই অভিযোগের জেরে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ভারতেও মে মাসে সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। আবারও ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলে তাদের হিন্দুত্ববাদনির্ভর নির্বাচনী ইশতেহার পাকিস্তানের নতুন সরকারের জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Comments