লেখক-পাঠক সঙ্গে আছেন বলেই আমরা টিকে আছি : দীপঙ্কর দাশ

এখনো যারা বই পড়া ও কেনার জন্য ভালো একটা জায়গা খুঁজেন; তাদের একান্ত ঠিকানা বাতিঘর। প্রায় দেড় যুগে বাতিঘর এখন কেবল বই বিপণন কেন্দ্র নয়, ঢাকা চট্টগ্রামের মানুষের রুচির প্রতীক।

বইয়ের সঙ্গে সময়কে উপভোগ করতে প্রথিতযশা শিল্পী-সাহিত্যিকরা প্রতিদিনই আড্ডা জমান বাতিঘরের কোনো না কোনো শাখায়। অনেকের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন চট্টগ্রামের দীপঙ্কর দাশ। তিনি একসময় অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন।

২০০৯ সালে প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাতিঘর। সারাদেশে বইয়ের দোকানগুলোর মধ্যে অনন্য বাতিঘর। ইতোমধ্যে এই প্রতিষ্ঠান প্রকাশ করেছে প্রায় ৩৫০টি বই। ২০০৫ সালের ১৭ জুন চট্টগ্রাম শহরের চেরাগি পাহাড় মোড়ে সাধারণ একটা ঘরে যাত্রা শুরু হয় বাতিঘরের।

বর্তমানে চট্টগ্রাম, ঢাকা ও সিলেটে বড় পরিসরে এবং ঢাকার শাহবাগ ও বাংলাবাজারে ছোট পরিসরে শাখা রয়েছে বাতিঘরের। রাজশাহী শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোড়ামারায় বাতিঘর প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। সবগুলো শাখায় মোট ৬০ জন কর্মী কাজ করেন। বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবারও ছিল নানা আয়োজন। সে উপলক্ষে কথা হয় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

প্রকাশকরা বলেন, বই চলে না, পাঠক বই পড়ে না। অথচ মেলা শেষে বাংলা একাডেমি জানায় কোটি টাকা বই বিক্রির হিসাব। কারা কেনে?

দীপঙ্কর দাশ: 'বই চলে না' কথাটা আপেক্ষিক। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশে বইয়ের বাজার খুব বড় নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, ভালো বইয়ের পাঠক সব সময় থাকে। পাঠক পড়তে চান। কথা হচ্ছে ভালো বইয়ের খবর কাঙ্ক্ষিত পাঠকের কাছে পৌঁছছে কি না। মেলায় যে কোটি টাকার বই বিক্রির কথা আসছে, সেটা পাঠকই কিনছেন। তবে এটা সত্যি যে, দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে বই বিক্রির পরিমাণ অতি সামান্য। প্রতি বছর বইমেলায় যত মানুষ ঘুরতে যান, তার ১০ ভাগের একভাগও যদি বই কিনতেন তাহলে বইয়ের বাজার আরও বড় হতো।

এমন সংকুচিত বইয়ের বাজারে বা সমাজে বাতিঘরের নতুন নতুন শাখা উদ্বোধন কী বার্তা দেয়?

দীপঙ্কর দাশ: আগামী ২৪ জুন রাজশাহীতে বাতিঘরের নতুন শাখার উদ্বোধন করবেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। অনেকে জানেন, ছোট একটি দোকান থেকে যাত্রা শুরু করে বাতিঘর ১৯ বছরে পা রেখেছে। এতদিন ধরে আমরা মানুষের কাছে বইয়ের খবর পৌঁছে দিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সারাদেশের অসংখ্য লেখক-পাঠক সঙ্গে আছেন বলেই আমরা টিকে আছি। তাদের আগ্রহে বাতিঘর দেশের বড় শহরগুলোতে নতুন বিক্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলতে পেরেছে। আমরা চাই নতুন পাঠক তৈরি হোক। এটা করতে অনেক সময় লাগবে। তবু আমরা কঠিন কাজটি করে যেতে চাই। বই নিয়ে মানুষের কাছে যেতে চাই। বলতে চাই, জ্ঞান ছাড়া মানুষের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

বাতিঘরের ১৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে গতকাল। বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ছবি: বাতিঘর থেকে

সারা বছর বাতিঘর বই প্রকাশ করে। প্রকাশের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয় বাতিঘর?

দীপঙ্কর দাশ: আমরা ভালো বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে চাই। ভালো মানে সব দিক দিয়ে মানসম্পন্ন। নানা বিষয়ে বাছাই করা পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করি। বইয়ের ভাষা, সম্পাদনা, প্রচ্ছদ, কাগজ, ছাপা, বাঁধাই সবকিছুই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বই প্রকাশের পর এর প্রচার এবং বিপণনও নিয়ে আমরা কাজ করি। কারণ, যত ভালো বই-ই প্রকাশ করি না কেন, পাঠকের কাছে না গেলে পুরো পরিশ্রমই ব্যর্থ।

প্রায় পত্রিকায় আসে পাঠকের অভাবে লাইব্রেরি বা পাঠাগার বন্ধ হচ্ছে। ব্যতিক্রম বাতিঘর, সব সময় সরব। কী কারণে হতে পারে?

দীপঙ্কর দাশ: বাতিঘর পাঠকের চাওয়াকে সম্মান করে। আগে বইয়ের দোকানগুলোতে পাঠক কোনো বই কেনার আগে ছুঁয়ে দেখতে পারত না। আমাদের স্টোরগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে পাঠক তাক থেকে নিজে বইটি হাতে নিয়ে উলটেপালটে দেখতে পারেন, বসে কিছু সময় কাটাতে পারেন। পছন্দ হলে কিনবেন। পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী প্রাপ্যতাসাপেক্ষে আমরা বই যোগাড়ও করে দিই। অর্থাৎ বইকেন্দ্রিক যেকোনো সেবা আমরা পাঠককে দিতে প্রস্তুত। এসব কারণে পাঠকের ভালোবাসা পেয়েছে, পাচ্ছে বাতিঘর।

বাতিঘরের নিয়ে একটা অভিযোগ- তারা ভারতের বইকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ নিয়ে কী বলবেন?

দীপঙ্কর দাশ: এটা অমূলক। বাতিঘর বই বিক্রি করে। প্রধানত বাংলা ও ইংরেজি ভাষার বই। যে ধরনের বইয়ে পাঠকের চাহিদা আছে আমরা সে ধরনের বই পাঠকের হাতে দিতে চেষ্টা করি। বইয়ের প্রতিই আমাদের অনুরাগ, কোনো দেশের প্রতি নয়।

বাতিঘর একটা বই প্রকাশ করতে কী কী ধাপ পার করে বা কী পরিকল্পনা থাকে?

দীপঙ্কর দাশ: প্রথমে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত প্যানেলের মতামতের ভিত্তিতে পাণ্ডুলিপি নির্বাচন করি। এরপর পাণ্ডুলিপি যায় সম্পাদকের টেবিলে। সম্পাদকের পরামর্শে লেখক ক্ষেত্রবিশেষে পাণ্ডুলিপিতে সংযোজন-বিয়োজন করেন। তারপর বইয়ের মেকআপ-গেটআপ করে লেখককে দেখতে দিই। এই সময় প্রচ্ছদশিল্পী প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন। বই নির্ভুল হওয়ার জন্য এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রয়োজন অনুযায়ী অন্তত ৪ বার বানান সংশোধনের কাজ হয়। শেষ ধাপে ছাপা এবং বাঁধাই হয়ে বইটির কয়েকটি নমুনা কপি আমাদের হাতে আসে। সংশ্লিষ্ট সবাই ছাপা বইটি উল্টেপাল্টে  দেখে সবকিছু ঠিক থাকলে বইটি পাঠকের হাতে তুলে দিই।

Comments

The Daily Star  | English
rawhide price drops during eid-ul-azha 2025

Rawhide market disappoints again as prices drop below govt-fixed rates

The Ministry of Commerce had increased the price of cowhide in Dhaka by Tk 5-10 per square foot, setting the official rate at Tk 60-65

1h ago