কীভাবে বুঝবেন আপনার সঙ্গী ‘রেড ফ্ল্যাগ’

রেড ফ্ল্যাগ
ছবি: সংগৃহীত

যত দিন যাচ্ছে, মানবিক সম্পর্কের ব্যাকরণে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন কিছু শব্দ, কিছু ধারণা। এসব বিষয়ের অস্তিত্ব বহু আগে থেকেই আছে, কিন্তু এগুলোর নতুন নতুন নামকরণের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের জীবনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে বহুল প্রচলিত একটি শব্দগুচ্ছ হচ্ছে 'রেড ফ্ল্যাগ'। সবুজ যেভাবে স্বাভাবিকতই ভালো কিছুর জন্য প্রতীকিভাবে ব্যবহার করা হয়, তেমনি লালকে ধরা হয় বিপজ্জনক। রেড ফ্ল্যাগ বলতেও সাধারণত এমন কোনো মানুষ বা আচরণকে বোঝানো হয়, যা কি না অপরের জন্য কোনো না কোনোভাবে বিপজ্জনক। রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কেউ 'রেড ফ্ল্যাগে'র আওতায় পড়েন কি না– সেটি বুঝতে হলে খেয়াল রাখতে হবে কিছু নির্দিষ্ট আচরণ ও বৈশিষ্ট্যের দিকে।  

ঈর্ষার বিস্বাদ

অনেকেই বলে থাকেন, প্রেমের সম্পর্কে ঈর্ষা নাকি একটুখানি নুন ছড়ানো– এতে সম্পর্কের স্বাদ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এও মনে রাখা দরকার যে, যেকোনো তরকারিতেই লবণ বেশি হয় গেলে তা আর মুখে দেওয়ার উপায় থাকে না। সম্পর্কের বহুধাবিভক্ত মাত্রায় যেকোনো একটি যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তবে তা একধরনের অসুস্থ চর্চায় রূপ নেয়। পুরোনো বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময়ও যদি সঙ্গীর ঈর্ষা বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তাকে শুধু প্রেমের লক্ষণ না ভেবে একটু খতিয়ে দেখার দরকার রয়েছে। কারণ ঈর্ষার গতি বেড়ে চললে সম্পর্কে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।

মানসিক শোষণই যখন হাতিয়ার

একে অন্যের সঙ্গে আরামে সময় কাটানোই সম্পর্কের আনন্দ বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু এর মধ্যে কেউ একজন যদি তার সঙ্গীকে দিন দিন বিভিন্নভাবে মানসিক শোষণ করতে থাকেন– তবে সেটি কোনোভাবেই আর সুস্থ সম্পর্কের তালিকায় নাম লেখায় না।

খুব ছোটখাটো বিষয় থেকে এসব শোষণ শুরু হতে পারে। কোনো জিনিস ভুলে যাওয়ার জন্য দোষারোপ, নিজে মিথ্যে বলে অপর পক্ষের ওপর তা চাপিয়ে দেওয়া, সঙ্গীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা– এমন অনেক কিছুই এসব শোষণের অন্তর্ভুক্ত। আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে, কখন খুব হালকা হাস্যরস নিজের অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সময় থাকতে রুখে না দাঁড়ালে এই মানসিক শোষণগুলো একজন ব্যক্তিকে দুর্বল করে দিতে যথেষ্ট। এক সময় শোষণের মাত্রা এতটাই বেশি বেড়ে যায় যে শোষিত ব্যক্তিও ভাবতে শুরু করেন, 'ভুল হয়তো আমারই!'

প্রতিক্রিয়াশীল আচরণ

পদার্থবিজ্ঞানের ভাষ্য হোক বা মনস্তত্ত্বের পাঠশালা, ক্রিয়ার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া আসবেই। কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়া যদি ধারাবাহিকভাবে একের পর এক প্রতিক্রিয়াশীল আচরণে রূপ নেয়, তবে সম্পর্কে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার সুযোগটা আর থাকে না। তখন একজনের আচরণে ভয় পেয়ে অন্য পক্ষ ক্রমশ নিজেকে সবদিক থেকে গুটিয়ে নেন এবং তার সঙ্গীর ইচ্ছা মোতাবেক নিজেকে সেই ছাঁচে ঢালতে থাকেন। এর ফলস্বরূপ সম্পর্ক সুখী তো হয়ই না, বরং অন্য পক্ষের অভিযোগ আকাশ ছুঁতে থাকে। তিনি জেনে যান, তার মাত্রাতিরিক্ত রাগ আর উগ্র বহিঃপ্রকাশ তার জন্য সুবিধাদায়ী। এরকম কোনো লক্ষণ যদি কারো মাঝে থেকে থাকে, তবে শহুরে অভিধানের আলাপে তাকে অবশ্যই রেড ফ্ল্যাগের তকমা দিয়ে দেওয়া যায়।

যোগাযোগজনিত সমস্যা

যোগাযোগ নিঃসন্দেহে সম্পর্কের মূল ভিত্তিগুলোর একটি। কিন্তু সেই যোগাযোগের চেষ্টা ও প্রয়োগ যদি একতরফা হয়, তবে তা ভেবে দেখার বিষয়। কারণ একতরফাভাবে যোগাযোগ সম্ভব হলেও তা স্বাস্থ্যকর নয়। অনেক চেষ্টার পরও দুজনের মধ্যকার যোগাযোগজনিত সমস্যার সমাধান না ঘটলে বুঝে নিতে হবে, এই সম্পর্কে অনেকদিন ধরেই লাল নিশান ঝুলছে– শুধু চিহ্নিত করাটা হয়ে ওঠেনি।

প্রসঙ্গ যখন প্রাক্তন

আপনার সঙ্গী কি আপনার সঙ্গে প্রাক্তনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তুলনা দেন? আপনার সঙ্গীর পছন্দের বিষয় যদি তার প্রাক্তন নিয়ে বিভিন্ন নেতিবাচক কথা বলা হয়, তবে তা দ্বিমুখীভাবে রেড ফ্ল্যাগের সামিল। প্রথমত, তিনি এখনো তার অতীত নিয়ে অনেক বেশি আচ্ছন্ন এবং দ্বিতীয়ত, প্রাক্তনের প্রতি যে সম্মানবোধটুকু তার থাকা দরকার– সেটুকু তার মধ্যে নেই। আজকের বর্তমান সঙ্গীটি যদি কোনোদিন প্রাক্তন হন, তবে তিনি তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একই কাজ করবেন।

অতীত আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেই অতীতের কাছে আমরা বিভিন্নভাবেই ঋণী। কিন্তু বর্তমান সময়ে বসে যদি বারবার সেই অতীতের ব্যবচ্ছেদ করা হয়– তা নিজের ও নিজের সঙ্গী, কারো জন্যই আরামদায়ক নয়।

আপনার সঙ্গী রেড ফ্ল্যাগ কি না, তা বুঝতে হলে আলোচিত এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও বহু নেতিবাচক মাপকাঠিতে তা মাপা সম্ভব। কিন্তু ব্যক্তিকে একইসঙ্গে নিজের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সঙ্গীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিজেও যেন কেউ রেড ফ্ল্যাগে না পরিণত হন এবং রেড ফ্ল্যাগ হওয়া যে আদতে কোনো ধরনের প্রতিযোগিতার বিষয় নয়, সেটিও খেয়াল রাখলে জীবনে সুস্থ সম্পর্কের চর্চা করা সম্ভব হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Is the govt backing the wrongdoers?

BNP acting Chairman Tarique Rahman yesterday questioned whether the government is being lenient on the killers of a scrap trader in front of Mitford hospital due to what he said its silent support for such incidents of mob violence.

4h ago