যেসব কাজ করে নিজের অজান্তেই সম্পর্কের ক্ষতি করছেন

সম্পর্কের ক্ষতি
ছবি: সংগৃহীত

একটি সম্পর্কের বিভিন্ন পর্যায় থাকে। অনেকেই বলেন, প্রেমের বা দাম্পত্য সম্পর্কের শুরুতে সব ঠিকঠাক থাকলেও নাকি কিছুদিন পর শুরু হয় অশান্তি। তাই বলে সবার ক্ষেত্রেই যে এমনটা হয়, তা নয়। নিজেরদের মধ্যে বোঝাপড়া, সহযোগিতা, সততা, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সম্পর্ক ভালো রাখতে দুই জনেরই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কখনো কখনো নিজের অজান্তেই সম্পর্কে ফাটল তৈরি করে ফেলে মানুষ। কোন কোন কারণে একটি সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই জানব আজ।

সমস্যা নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া

অনেক সময় দেখা যায় সঙ্গীর সঙ্গে দরকারি বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়। অনেকেই এ ধরনের আলোচনাকে ঝামেলা মনে করে এড়িয়ে যান। কিন্তু এ ধরনের খোলামেলা আলোচনা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো বিষয়ে দুজনের দুই রকম মনোভাব থাকতে পারে এটিই স্বাভাবিক। দীর্ঘদিন কারো সঙ্গে থাকতে গেলে এরকম নানা সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তাই যদি সম্পর্কের শুরুতেই এরকম বিষয় নিয়ে খোলাখুলি  আলোচনা করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না।

রিয়া ও শফিক দম্পতির বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই নানা কারণে ঝগড়া হতে থাকত। প্রথমে খুব তুচ্ছ বিষয়ে মনোমালিন্য হলেও তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতেন না। পুরো বিষয়টি এড়িয়ে চলতেন। ফলে ধীরে ধীরে অনেক সমস্যা মিলে তাদের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে।

যেকোনো সম্পর্কে মনোমালিন্য হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে তা এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সঙ্গীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে একে অপরের ভালো লাগা, খারাপ লাগা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না।

অতীতের ঝগড়া বা দোষ টেনে আনা

দীর্ঘদিনের সম্পর্কে সঙ্গীর ভালো দিকগুলোর কথা ভুলে যায় অনেকেই। সম্পর্কের শুরুর দিকে সঙ্গীর ভালো কাজে প্রশংসার মাত্রা বেশি থাকে। পরে ধীরে ধীরে সেটি কমে যায়। প্রতিদিনের কথোপকথনের অধিকাংশ জুড়ে যদি থাকে অন্যের দোষ বা আগের কোনো ঝগড়া, তাহলে প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হবে ও দূরত্ব বাড়তে থাকবে। আগের ঝগড়ার রেশ ধরে নতুন সমস্যা শুরু হতে পারে। ঝগড়া বা মনোমালিন্যের সময় অতীতের কোনো নেতিবাচক বিষয়ের প্রসঙ্গ বারবার নিয়ে আসলে সমাধান তো হবেই না, উল্টো ঝামেলা বাড়তে থাকবে। তাই এ ধরনের প্রসঙ্গ না এনে সঙ্গীর ভালো দিকগুলো তুলে ধরুন ও ইতিবাচকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন।

সঙ্গীর কাছের মানুষজনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা

প্রত্যেকের জীবনে কিছু মানুষ থাকেন যারা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গী হিসেবে আমাদের উচিত অপরজনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের শ্রদ্ধা করা। সঙ্গীর কাছে অযথা তাদের নিয়ে সমালোচনা আপনাদের সম্পর্ক খারাপ করে দিতে পারে। তাই সঙ্গীকে শ্রদ্ধার পাশাপাশি তার বন্ধু, সহকর্মী এবং পরিবারের মানুষদের শ্রদ্ধা করুন।

গোপন করা

একটি সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যোগাযোগ। সঙ্গীর সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ না করলে অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা সৃষ্টি হয়, যা থেকে বড় আকারের ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন আরেকজনের কাছ থেকে সবকিছুই গোপন করে যাচ্ছেন। প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব গোপনীয়তা প্রয়োজন। কিন্তু যদি আপনার কোনো কিছু গোপন করায় আপনার সঙ্গী মনে আঘাত পান বা ইচ্ছাকৃতভাবেই আপনি সবকিছু গোপন করেন তাহলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে।

বারবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি

অনেক সময় দেখা যায় একটি বিষয় নিয়ে বারবার ঝগড়া হতে থাকে। প্রত্যেকবার সমাধান করা হলেও ঘুরেফিরে বারবার সেই একই সমস্যা হতে থাকে। এটির মূল কারণ হলো সঠিকভাবে সমাধান না করা ও নিজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন না আনা। কোনো সমস্যার গভীরে গিয়ে সেই সমস্যার কারণ ও সমাধান সম্পর্কে সঙ্গীর সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। বারবার যেন সেই ঘটনার পুনারাবৃত্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বারবার এরকম হতে থাকলে এক সম্পর্কে ফাটল ধরবে।

সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়া

প্রতিটি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভালোবাসার সম্পর্ক নয়, প্রতিটি সম্পর্কেই উভয় দিক থেকে শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন। শ্রদ্ধা প্রকাশের নানা মাধ্যম রয়েছে। আপনার সঙ্গীর মতামতকে মর্যাদা দেওয়া, তাকে কোনো কাজে সহযোগিতা করা, প্রশংসা করা এগুলোর মাধ্যমে সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায় যে অনেক পুরুষ নিজেরাই সংসারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। অথবা আরেকজনের অবদানকে স্বীকৃতি দেন না। এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সঙ্গীর প্রতি এরকম আচরণ সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলতে পারে।

একে অন্যকে দোষারোপ করা

অনেকের মধ্যেই নিজের দোষ স্বীকার না করে অন্যকে দোষারোপ করার একটি প্রবণতা দেখা যায়। একটি সম্পর্কে যদি যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে একে অন্যকে দোষ দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায় তাহলে ধীরে ধীরে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বের করতে হবে কী কারণে সমস্যাটি হলো।

 

Comments

The Daily Star  | English
Drug sales growth slows amid high inflation

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

18h ago