বিষণ্ণতার জন্য কি রিলসপ্রেম দায়ী?

রিলস
ছবি: সংগৃহীত

পড়তে বসলে কিংবা কাজ করতে গেলে মিনিট দশেক যেতেই মনোযোগ যায় হাওয়ায় উড়ে। তখন চলে যাই রিলসের দুনিয়া ঘুরতে। একের পর এক রোমান্টিক, কমেডি, হ্যাকস নানা ধরনের ভিডিও স্ক্রল চলতেই থাকে।

কিছুক্ষণ পর ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখা যায় দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে ফাঁকে। বলতে পারবেন, এই লেখাটা পড়ার আগে কোন রিলস দেখেছেন? বা তার আগের রিলসটা মনে আছে? এখানেই তো আসল ফাঁদ!

টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, ফেসবুক, ইউটিউব সব জায়গায় এই শর্ট ভিডিও কনটেন্টের ছড়াছড়ি। বিনোদন নেওয়ার বাহানায় রিলসে ঢুঁ মারার স্বভাবও হয়ে গেছে প্রত্যেকের। অথচ কয়েক সেকেন্ডের এই রিলসগুলোই আপনার কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে, মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে অজান্তে, আপনাকে বিষণ্ণতা উপহার দিচ্ছে, মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে করছে এসব ক্ষতি জানবেন নাকি?

একের পর এক ভিডিও দেখতে থাকলে রিলসের ভেতর মন ডুবে থাকে। গান, নাচ, কৌতুকপূর্ণ এসব রিলস অনেকটা বিনোদনের বুফের মতো। সেখান থেকে যত খুশি বিনোদন নেওয়া যায়, বারণ করার জন্য কেউ থাকে না। ফলে আসক্তিও এড়ানো যায় না। রিলসগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে মনোযোগ অন্যদিকে না সরিয়ে সেগুলো সোয়াইপ করা যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমের স্ক্রলিং ক্যাফেইনের নেশার মতো। অফুরন্ত কনটেন্ট ডোপামিনের ফিডব্যাক লুপ সৃষ্টি করে। যা থেকে মনোযোগ সরানো একেবারেই সহজ নয়। এভাবে আপনার শুধু সময়ই অতিবাহিত হয় না, আপনার কাজের ক্ষমতাও চলে যেতে থাকে আপনার আঙুলের স্পর্শের সঙ্গে সঙ্গে।

রিলস সাড়া পেয়েছে সেগুলো ছোট আকারের হওয়ার কারণে। ভিডিওগুলো একদিকে সংক্ষিপ্ত, চটকদার, তেমনি বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রেও চমৎকার। র‍্যাপিড ফায়ার ফরম্যাটের রিলসগুলো কোনোকিছু মনেই রাখতে দেয় না। আপনি কয়েকটি ভিডিও দেখার পর নিজেই প্রমাণ পাবেন, কোন ভিডিওর পর কোনটি দেখেছেন মনে থাকে কি না। কয়েকটি পারলেও অধিকাংশই আপনার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।

কারণ রিলস প্যাসিভ ভিউকে উৎসাহিত করে, যেখানে কোনো ভিডিও স্থায়ী প্রভাব ফেলে না। রিলস স্বল্পমেয়াদী স্মৃতির মতো ক্ষণস্থায়ী। আর অস্থায়ীত্ব ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয় ভীষণভাবে। উদ্দেশ্য ছাড়া স্ক্রল করতে থাকলে আপনার জ্ঞানীয় ক্ষমতা ও মনোযোগ দুর্বল করে দেবে ব্যাপক হারে।

চারদিকের অনেকেই সময়খেকো রিলসের ফাঁদে পড়ে হা-হুতাশ করছে। যা তারা নিজেরাই হয়তো জানে না। বিরতির জন্য রিলস হলেও আসলে রিলস দেখার সময় থেকে বিরতি নিয়ে কাজ করার অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রায়ই রিলস দেখতে গিয়ে সময় ব্যয় করতে করতে প্রয়োজনীয় কাজের জন্যই হাতে সময় থাকে না। এটিকেই বলা হয় ডিজিটাল বিভ্রান্তি যা আপনার কাজের ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে, আর আপনাকে অসম্পূর্ণ করে তুলছে।

রিলসের ডোপামিন রোলারকোস্টার আপনার মানসিক সুস্থতার ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। স্বল্পস্থায়ী আনন্দের চক্র আরও পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, হতাশার সাগরে নিমজ্জিত করতে পারে। রিলসের ডিজিটাল তৃপ্তি উদ্বেগ, বিষণ্নতা এবং আত্মসম্মানবোধ কমাতেও ভালো কাজ করে।

চলমান ডিজিটাল বিপ্লবকালে নৈতিক উদ্বেগ নিয়ে সমালোচনা করতে গেলেও রিলসের প্রভাব অবহেলা করা যাবে না। গবেষণায় দেখা গেছে, বিতর্কিত বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা, অনৈতিক আচরণের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকা, অনলাইন হয়রানি বা ঘৃণামূলক বক্তব্যের জন্য রিলস আসক্তি দায়ী।  

শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্যের আনন্দময় মুহূর্ত উপভোগ করতে করতে নিজের অবস্থার সঙ্গে অহেতুক তুলনা করছি আমরা। কোনো ট্রেন্ড দেখলে তা অনুকরণ করার প্রতিযোগিতা চলছে সবার মধ্যে। ‍অথচ কারোর জীবনই মসৃণ নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সকলে ইতিবাচকতা তুলে ধরে। মুদ্রার বিপরীত দিকের চিত্র কখনো দেখা যায় না রিলসে। এতে করে অসন্তুষ্টি ও বিষণ্ণতা জাপটে ধরছে বলে বিভিন্ন গবেষণার উপাত্তে উঠে এসেছে।

তবে রিলসের মাধ্যমে একাকিত্ব কাটানোর উপায়, ব্যবসার বিজ্ঞাপন, পণ্যের প্রচার, সচেতনতামূলক তথ্য পাওয়া যায় তা মানতে হবে। তবে এটির বিনিময়ে ইনফ্লুয়েন্সার, ভ্লগারদের কনটেন্ট আমাদের থেকে যে প্রতিদান নিচ্ছে তা বিস্তর বটে। আদান-প্রদানের এই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলার আগেই বাস্তবতা প্রাধান্য দিয়ে চলতে হবে। যতটুকু সম্ভব কাজে ব্যস্ত থেকে রিলসের আসক্তি এড়িয়ে চলতে হবে। মনে রাখবেন, সুন্দর মেকি জীবন নয়, অসুন্দর বাস্তবতাই আমাদের সঙ্গী।

 

Comments

The Daily Star  | English

Polythene ban: A litmus test for will and eco-innovation

Although Bangladesh became the first country in the world to announce a complete ban on the use of polythene bags in 2002, strict enforcement of the much-lauded initiative has only started taking shape recently.

14h ago