‘কিকো’ ও তার বন্ধুরা যেভাবে আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠল

কুকুর
ছবি: অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার রাস্তায়, পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে এমনকি খবরের কাগজের ছবিতেও গোলাপি কলার বেল্ট পরা বাদামী রঙের একটা কুকুরকে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শামিল হতে। পুরো উত্তাল সময়টা তাদের সঙ্গে থেকেছে কুকুরটি। এভাবেই এই আন্দোলনে 'কিকো' হয়ে উঠেছে শহরের সবার প্রিয় মাসকট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিমের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাবরিনা সাবরিন বলেন, 'আমাদের বিপ্লবী কিকো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরেই থাকে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিম সবসময় কিকো এবং তার বন্ধুদের খেয়াল রাখি। তাকে প্রায়ই লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড বোর্ডে দেখা গেছে, বিশেষ করে এই আন্দোলনের সময়, যখন সে আন্দোলনে বাকিদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: অ্যানিম্যাল েওয়েলফেয়ার টিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজেও সাহায্য করতে দেখা গেছে কিকোকে।

ছাত্রদের আন্দোলনের সময় ক্যাম্পাসের কুকুরগুলো জড়ো হয়েছে, এমনকি নিজেদের এলাকার বাইরে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সঙ্গ দিয়েছে। জায়গা পরিবর্তনের কারণে অনেক সময় তারা খাবার পায়নি এবং কাউকে কাউকে আহত অবস্থায়ও পাওয়া গেছে। কিকো অবশ্য শাহবাগ থানার পাশে আরেকটি থাকার জায়গাও পেয়েছে। সেখানে কিছু পুলিশ কর্মকর্তা তাকে খাবার দিয়েছেন।

অন্যদিকে টিএসসির সবার প্রিয় কুকুর অভ্রর গল্পটা কিছুটা ভিন্ন। মিছিলে যোগ দিয়ে টিএসসি থেকে সেগুনবাগিচায় গিয়ে আর ফিরতে পারেনি অভ্র। পরে আমাদের টিমের একজন সদস্য তাকে আতঙ্কিত অবস্থায় পেয়েছিল সেখানে।'

সাবরিনা সাবরিন আরও বলেন, 'আমাদের ওয়েলফেয়ার টিম থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল ক্যাম্পাসের কুকুরগুলোকে কোনো মিছিলে না নিয়ে যেতে। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের ভীষণ ভালবাসেন। তারা ভালোবেসে তাদের নাম দিয়েছেন অভ্র, কিকো, সুন্দরী, পেরো, স্কুবি, পাবলো, ফক্সি ইত্যাদি। সেই ভালোবাসা থেকেই অনেকে তাদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন কুকুরগুলোকে। আদর করে তাদের রুটি, বিস্কুট খাইয়েছেন। কুকুরগুলো ধীরে ধীরে তাদের প্রতিদিনের ক্যাম্পাস জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে।

এনিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিম
ছবি: অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এই হাসিখুশি কুকুরগুলো সাধারণ শিক্ষার্থী আর ওয়েলফেয়ার ভলেন্টিয়ারদের পার্থক্য বোঝে না। ওয়েলফেয়ারটির ভলেন্টিয়াররা নিয়মিত তাদের খাবার দেন, কেউ অসুস্থ হলে বা আহত হলে তাদের দেখাশোনা করেন এবং তাদের যেকোনো বিপদ থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন।'

সাবরিনা সাবরিন বলেন, 'আমরা তাদের ভেজা খাবার দিয়ে থাকি। এর মধ্যে থাকে ৪ কেজি ভাত, মুরগির মাংস এবং সমপরিমাণ মুরগির বিভিন্ন অংশ, আলু এবং মিষ্টিকুমড়া। এই খাবারের জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়। যেদিন এই খাবার দেওয়া হয় না, সেদিন বিস্কুটের মত শুকনো খাবার দেওয়া হয়।'

 তাদের খাবারের পেছনে মাসিক ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় বলে জানান সাবরিনা।

ওয়েলফেয়ার টিমের জন্য তাদের চিকিৎসার খরচটি অতি ব্যয়বহুল হয়ে যায়। পিপল ফর অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার (PAW) এবং অভয়ারণ্য- বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন অসুস্থ প্রাণীদের সেবা দেওয়া, স্পে ও নিউটার বিষয়ে তাদের সাহায্য করে থাকে। তবে কোনো কারণে তাদের হাসপাতালে নিতে হলে খরচ অনেক বেড়ে যায়।

আন্দোলনে কুকুর
ছবি: অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার টিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবরিনা সাবরিন বলেন, 'আমরা অসুস্থ ও আহত প্রাণী যেমন কুকুর, বিড়াল ও পাখিদের সেবা দিয়ে থাকি। বর্তমানে আমাদের ক্যাম্পাসে দুটি প্যারালাইজড বিড়াল আছে, ক্যাম্পাসের আশপাশে যদি তাদের জন্য একটি শেল্টার রুম থাকত তাহলে আমাদের শেল্টার ফি ও অপারেশনের পরের খরচ কমে আসত। আমাদের অনেক শিক্ষক ডোনেশনের ক্ষেত্রে সাহায্য করেন। এ ছাড়া বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীরাও অনেক সাহায্য করেন। শহরের সব প্রাণীপ্রেমীদের ভালোবাসা ও সহযোগিতার কারণে ১০ বছর ধরে আমরা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি।'

অনুবাদ করেছেন সৈয়দা সুবাহ আলম

Comments

The Daily Star  | English
US tariffs impact on Bangladesh economy

Can Bangladesh ride out the wave of US tariffs?

Trump's announcement sent businesses scrambling. Orders froze. Buyers demanded discounts. Stock markets plummeted.

12h ago