কী আছে মিরপুরের বইপ্রেমীদের এই জমজমাট আড্ডাখানায়

ঋদ্ধি ক্যাফে মিরপুর
ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

ফুল, পাখি ও আলপনায় রাঙানো বাড়িটা আশপাশের বাড়িগুলো থেকে একদমই আলাদা। কিন্তু কেন? কী আছে এর ভেতরে? বলছিলাম ঢাকার মিরপুরের বুক ক্যাফে 'ক্যাফে ঋদ্ধি'র কথা। ঋদ্ধি প্রকাশনের এই বুক ক্যাফেটি বইপ্রেমীদের কাছে স্বর্গের মতো। যান্ত্রিক এই শহরে দুদণ্ড বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বই পড়তে আর কিনতে পারবেন বইপ্রেমীরা। ছুটির দিন কিংবা অবসর সময়ে সুযোগ পেলে ঘুরে আসতে পারেন ঋদ্ধি ক্যাফে থেকে।

 

কী আছে ঋদ্ধি ক্যাফেতে

ক্যাফেতে ঢুকতেই একটা ঝুড়িতে কিছু রুটি রাখা। অসহায় ও ক্ষুধার্তরা চাইলেই সে ঝুড়ি থেকে রুটি নিয়ে খিদে মিটাতে পারবেন। ক্যাফেতে ঢোকার মুখেই ছোট্ট একটা নার্সারি। যেখানে মিলবে বেশ কয়েক পদের ইনডোর প্ল্যান্টস। তিনতলা জুড়ে এই বুক ক্যাফেটি। নিচ তলার পুরোটাই রিডিং স্পেস আর ফুড কর্নার। খুব আহামরি বাহারি সাজ নয়, বরং চেয়ার টেবিল আর চারপাশে বই দিয়েই সাজানো ক্যাফের এই অংশটি। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারবেন।

ঋদ্ধি ক্যাফে মিরপুর
ছবি: আসিয় াআফরিন চৌধুরী

বুক ক্যাফের দ্বিতীয় তলায় লাইব্রেরি ও আর্কাইভ কর্নার। ছিমছম করে থরে থরে সাজানো বই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের জন্য আলাদা দুটি কর্নার রয়েছে। লাইব্রেরিতে আগে বই পড়ার সুযোগ থাকলেও এখন আর সেটা থাকছে না। তবে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে, খানিকটা পড়ে আর নেড়েচেড়ে বই কিনতে পারবেন। ক্যাফেটির আরেকটা আকর্ষণের জায়গা হলো আর্কাইভ। এই আর্কাইভে মিলবে শতবর্ষের পুরোনো বই। অনুমতি সাপেক্ষে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এখানে বসে পড়তে পারবেন বইগুলো।

লাইব্রেরির একটি অংশে রয়েছে কিডস জোন। শিশু উপযোগী রঙিন বইগুলো দিয়ে সাজানো এ অংশটি। বইয়ের রাজ্যে এসে পড়লে শিশুরাও বাধ্য হবে বই হাতে নিতে। শুক্রবার বিকেল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিশুদের গল্প শোনানোর আসর বসে। তিন তলার পুরোটা জুড়ে করা হয়েছে হলরুম বা গ্যালারি। বিভিন্ন এক্সিবিউশন, উৎসব, মেলা আয়োজন করা হয় এখানে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেও দেখা যাবে শিল্পের ছোঁয়া।

যাত্রা শুরুর গল্প

মিরপুরের এই বাড়িটি এক সময় সবাই চিনত গার্মেন্টস কারখানা হিসেবে। ঋদ্ধি বুক ক্যাফের স্বত্বাধিকারী মাহবুবুল হাসান ফয়সাল ২১ বছর আগে ভবনটির ছাদ ভাড়া নিয়ে ম্যাট্রিক্স নামের গার্মেন্টস প্রিন্টিং ফ্যাক্টরি গড়ে তোলেন। পরে বিল্ডিংয়ের পুরোটাই ব্যবসার কাজে ভাড়া নেন। ব্যবসায়ী হলেও নিজের মনের শিল্প সত্তাটাকে ধরে রেখেছেন তিনি।

তারই সংগ্রহে থাকা বইগুলো দিয়ে ঋদ্ধি ক্যাফের যাত্রা শুরু। তারপর বহু মানুষ এখানে বই দিয়েছেন, যা দিয়ে তৈরি হয়েছে আর্কাইভ। এখনও যে কেউ চাইলে এখানে বই দান করতে পারেন। ঋদ্ধি প্রকাশনীর উদ্যোগে করা বলে ক্যাফেটির নাম রাখা হয়েছে ঋদ্ধি বুক ক্যাফে।

ঋদ্ধি ক্যাফে মিরপুর
ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

মাহবুবুল হাসান ফয়সাল বলেন, 'এই ভবন থেকেই আমার ব্যবসার যাত্রা শুরু। ব্যবসা স্থানান্তর করে ভবনের তিনটি ফ্লোর নিজের কাছে রেখে দিই। কারণ একটা সাহিত্য কেন্দ্র খোলার স্বপ্ন অনেকদিন থেকেই। যেখানে মানুষ আড্ডায় মেতে উঠবে, চায়ের কাপে ঝড় তুলবে। আবার বইপ্রেমীরা চাইলে ডুব দিতে পারবে বইয়ের সাগরে।'

ভবিষ্যতে গ্যালারিতে নাট্যমঞ্চ করার ইচ্ছাও আছে তার।

কী পাওয়া যায় ঋদ্ধি ক্যাফেতে

ঋদ্ধি ক্যাফের নিচতলার পুরোটা জুড়েই ক্যাফেটেরিয়া। প্রবেশমুখে কাচ ঢাকা ফুড কেসে সাজিয়ে রাখা স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার। শিঙাড়া, বার্গার, ভেজিটেবল রোল, কাটলেট, চাওমিনের পাশাপাশি শুক্রবারে আয়োজন করা হয় বিশেষ খাবারের। খাবারগুলোতে ঘরোয়া স্বাদটাই বেশি। ক্যাফের স্টাফদের আন্তরিক আচরণ আপনাকে মুগ্ধ করবে।

ফুড কর্নারের দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম জানান, সকালের নাশতায় থাকে রুটি, পরোটা, ডিম, ডাল সবজি। দুপুরে রয়েছে ভারী খাবার আর সেট মেনুর ব্যবস্থা। দামটাও একদম হাতের নাগালে মধ্যেই। আর ক্যাফে যেহেতু, চা-কফি তো রয়েছেই। ফুড কেসের পাশেই সারি সারি কাচের পাত্র ভর্তি ঝাল-টক-মিষ্টি স্বাদের মুখরোচক সব আচার। আচার কেনার আগে চেখে দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে।

দোতলায় রয়েছে লাইব্রেরি। সেখান থেকে বই পছন্দ করে কিনে নিতে পারবেন।

লাইব্রেরির দায়িত্বে থাকা রাজিব মোল্লা জানান, প্রিয় কোনো বইয়ের চাহিদা থাকলেও তা তারা এনে দেওয়ার চেষ্টা তারা করেন। লাইব্রেরির পাশে রয়েছে ছোট একটা স্টেশনারি। বাচ্চাদের জন্য হরেক রকম স্টেশনারি জিনিসপত্র দিয়ে জায়গাটা ঠাসা। সেখানে দাঁড়ালেই কিছু না কিছু পছন্দ হয়েই যাবে আপনার ছোট্ট সোনামনির জন্য।

ঋদ্ধি ক্যাফে মিরপুর
ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

ঋদ্ধি বুক ক্যাফেতে বসার জায়গা বেশ খানিকটা অংশ জুড়েই। কিন্তু টেবিল খালি পাওয়া বেশ মুশকিল, বিশেষ করে বিকেল বেলায়। কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, ছেলেবুড়ো সব মানুষেরই দেখা মেলে এই ক্যাফেতে।

সাহেলা আলম একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। তিনি জানান, সময় পেলেই এখানে চলে আসেন। কাছেই বাসা হওয়ার কারণে এখানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন।

আর্কাইভ রুমে বইয়ে মুখ ডুবিয়ে রাখা সানাউল করিমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য কিছু তথ্য উপাত্ত দরকার। তাই ঘনঘন আসা হচ্ছে এখানে।

ঋদ্ধি বুক ক্যাফের ঠিকানা

মিরপুর ১১ মেট্রো স্টেশনে নেমে পূরবী সিনেমা হলের উল্টোদিকে মেইন রোডের পূর্ব পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের (পুরাতন ভবন) পেছনেই ছিমছাম এই বুক ক্যাফেতে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন আপনিও। এটি সপ্তাহের প্রতিদিনই সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঠিকানা: প্লট-২, রোড নম্বর–৯, ব্লক-ডি, সেকশন–১১, পল্লবী, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬।

 

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

2h ago