মাদারীপুর যাচ্ছেন? ৩ টাকার ডিম চপের স্বাদ নিতে ভুলবেন না

মাদারীপুরের ডিম চপ
ছবি: জাওয়াদ সামি নিয়োগী

মাদারীপুর সদরের বিখ্যাত তিন টাকার ডিমের চপ স্থানীয়দের কাছে দারুণ জনপ্রিয়। সাশ্রয়ী দামে টাটকা ভেজে দেওয়া গরম গরম চপ জেলার স্ট্রিট ফুডকে দিয়েছে নতুন স্বাদ। চমৎকার স্বাদের এই চপ খেতে আপনাকে যেতে হবে শহরের ১০ নম্বর ব্রিজের কাছে। যেখানে রোজ ভিড় করেন শত শত মানুষ।

নতুন কোথাও ভ্রমণের সময় সেখানকার সেরা খাবার বা ঘুরে বেড়ানোর স্থান খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে অনলাইনে রিভিউ বা ভিডিও দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে স্থানীয়দের সহায়তা নেওয়া ভালো। তারা আপনাকে স্থানীয় খাবারের দোকান, পর্যটন স্থানের খোঁজ যেমন দিতে পারবেন, তেমনি সেসব জায়গায় যাওয়ার জন্য কোনটি ভালো সময় সেটিও তারা বলে দিতে পারেন। তাদের সহায়তা নিলে আপনি সত্যিকার অর্থে একটি স্থানের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিকারী খাবার বা স্থানের খোঁজ পাবেন, যা আপনাকে ওভারহাইপড পর্যটন বা রেঁস্তোরার ফাঁদ থেকে বাঁচাবে।

মাদারীপুর সদরে ঘুরতে গিয়ে খোঁজ পেলাম স্থানীয় কাছে ভীষণ জনপ্রিয় তিন টাকার ডিমের চপের খবর, যেটির খোঁজ আপনি অনলাইনে পাবেন না। সদর উপজেলায় যার কাছেই জিজ্ঞেস করেছি, তার কাছেই এই ডিম চপের প্রশংসা শুনেছি। তাই মাদারীপুর বেড়াতে গিয়ে তিন টাকার ডিম চপ খেতে যাওয়া ছিল বাধ্যতামূলক।

জনপ্রিয় এই স্ট্রিটফুড স্টলটির মালিক জাহিদ হাওলাদার। কথা হয় তার সঙ্গে।

মাদারীপুরের ডিম চপ
ছবি: জাওয়াদ সামি নিয়োগী

তিনি বলেন, 'দোকানটি চালু করেছি ১২ বছর হয়ে গেল। আমি এক টাকায় পুরি ও ডিম চপ বিক্রি শুরু করেছিলাম। কিন্তু সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিন টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এখানে যে মানুষদের দেখতে পাচ্ছেন, এরা সবাই আমার নিয়মিত গ্রহক। তারা বারবার আমার দোকানে আসেন কারণ এখানে সাশ্রয়ী দামে খাবার পান।'

তিন টাকার ডিম চপের নিয়মিত গ্রাহক কলেজছাত্র হৃদয়।

তিনি বলেন, 'এটি আমাদের প্রতিদিনকার প্রিয় সন্ধ্যার নাশতা। আমি এখানে বহু বছর ধরে আসছি। যখন প্রথম আসতাম তখন সবকিছুর দাম ছিল দেড় টাকা। যদিও এখন দাম কিছুটা বেড়ে তিন টাকা হয়েছে। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। এখানকার খাবারের স্বাদ এখনও সেরা।'

সবার কাছে প্রশংসা শুনে দোকানটিতে যাওয়ার পর ভেবে নেবেন না যে গিয়েই খাবার পেয়ে যাবেন। দোকানটিতে সবসময়ই ২০ থেকে ৩০ জন গ্রাহক খাবারের অপেক্ষায় থাকেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডিম চপ খেতে গিয়েছেন।

ডিমের চপ তৈরির প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এজন্য সেদ্ধ ডিমকে ছোট ছোট ১০-১২ টুকরোয় কেটে একটি বিশেষ গোলায় ডুবিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিবার এক কড়াইভর্তি ডিমচপ ভাজা শেষ হলে সেগুলো সরাসরি চলে যায় অপেক্ষমান গ্রাহকের প্লেটে।

আমরা গিয়েছিলাম সন্ধ্যায়। সৌভাগ্যবশত ৭টার দিকে ডিম চপের শেষ ব্যাচটির একটি অংশ ভাগে পেয়েছিলাম।

জাহিদ হাওলাদার বলেন, 'এটি আজকের জন্য ডিম চপের শেষ ব্যাচ। তবে আরও কিছুক্ষণ আলুপরি পাওয়া যাবে।'

তিন টাকার ডিম চপ কেবল কম দামের জন্য জনপ্রিয় নয়। চমৎকার স্বাদের এই ডিম চপ আসলে বাংলাদেশের স্ট্রিটফুডের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটা প্রমাণ করে যে, যত্ন করে তৈরি করা হলে ডিম চপের মতো সাধারণ খাবারও একটি সমাজ-সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গভীর সংযোগ তৈরি করতে পারে।

তাই আপনি যদি কখনও মাদারীপুরে যান, এই তিন টাকার ডিম চপের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

এখানে শুধু আপনি সুস্বাদু খাবারের স্বাদই নিতে পারবেন না, সেইসঙ্গে উপভোগ করতে পারবেন স্থানীয়দের উষ্ণতা ও আতিথেয়তা।

দোকানটির অবস্থান নতুন বাস টার্মিনালের কাছে ১০ নম্বর ব্রিজের পাশে। মজার ব্যাপার হলো, দোকানটির কোনো সাইনবোর্ড নেই, কিন্তু সেটি খুঁজে পেতে আপনার একটুও কষ্ট হবে না। এর জন্য গুগল ম্যাপের প্রয়োজন নেই। কেবল যেকোনো স্থানীয়কে জিজ্ঞেস করুন, তিন টাকার ডিম চপের দোকানটি কোথায়? ব্যস তারাই আপনাকে সব চিনিয়ে-বুঝিয়ে দেবেন। দূর থেকে যখন দেখবেন একটি দোকান ঘিরে ভিড়, তখনই বুঝতে পারবেন যে আপনি সঠিক জায়গায় পৌঁছেছেন।

সেখানে আপনি দেখতে পারবেন টিনের ছাউনি দেওয়া একটি দোকান। যার একপাশে দুজন ব্যস্ত হাতে খাবার তৈরি করছেন আর অন্যপাশে একদল মানুষ শীতল পাটির ওপর বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে আর হাসি আনন্দে মেতে আছে। এই দৃশ্যটি কাজ আর অবসরের আনন্দের এক চমৎকার মিশেল, যা জায়গাটির প্রাণবন্ত পরিবেশকেই প্রতিফলিত করে।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

2h ago