শীতের সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা চা আর পোড়া রুটির স্বাদ পেতে

মিরপুরে পোড়া রুটি আর মালাই চা
ছবি: আসিয়া আফরিন চৌধুরী

শীত আসে তার নিজস্ব রং, গন্ধ, আর একরাশ স্মৃতি নিয়ে। সকালবেলা কুয়াশা, নরম রোদে ভেজা গাছের পাতা আর ঠান্ডা বাতাস যেন মনের গভীরে কিছু স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। এমন দিনে সন্ধ্যার পর এক কাপ গরম চা হাতে পেলে সবকিছু যেন ঠিক হয়ে যায়। আর যদি সেই চায়ের সঙ্গে মেলে পোড়া রুটির মতো মজাদার কিছু, তবে শীতের সন্ধ্যাটা হয়ে ওঠে একদম পরিপূর্ণ।

মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশেই লাভ রোড, যার এক কোণে, পুরোনো একটি বটগাছের নিচে ছোট্ট একটি নীল ফুড কার্ট, নাম 'মুহূর্ত'। দোকানটার নাম শুনলেই মনে হয়, এখানে প্রতিটি মুহূর্ত যেন কিছু না কিছু বিশেষ করে তোলে। যদিও কার্টটা খুব সাদামাটা। প্রথম দেখায় বিশেষ কিছু মনে হবে না। কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই এর পরিবেশ একেবারে বদলে যায়। চারপাশে ভিড় জমে, গন্ধ ছড়ায় গরম চায়ের। আর বাতাসে মিশে থাকে পোড়া রুটির মিষ্টি ঘ্রাণ।

তিন বন্ধুর প্রচেষ্টায় শুরু হওয়া এই দোকান এখন শুধু মিরপুরের নয়, আশপাশের মানুষের কাছেও বেশ পরিচিত। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। ছুটির দিনে এখানে ভিড় বাড়ে দ্বিগুণ। সবাই একটু চায়ের উষ্ণতা আর রুটির মিষ্টি স্বাদ নিতে ছুটে আসে।

এই ফুড কার্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো মালাই চা আর পোড়া রুটি। মালাই চা! ঘন দুধে তৈরি মালাইয়ের সঙ্গে মিষ্টি চায়ের এমন মিশ্রণ যে প্রথম চুমুকেই মনে হবে শীত যেন শরীর থেকে দূর হয়ে গেছে। পোড়া রুটি বলতেই মনে হতে পারে খুব সাদামাটা কিছু। কিন্তু এই রুটির গল্পটা অন্যরকম। প্রথমে পাউরুটির ওপরে দুধ, মধু আর তাদের সিক্রেট উপাদান দিয়ে মাখিয়ে নেয়া হয়। এরপর সেটাকে চুলায় পুড়িয়ে আনা হয় সোনালি পোড়া রং।রুটির স্বাদেও আসে পরিবর্তন। গরম গরম পোড়া রুটি হাতে পেলে আপনার মনে হবে, গ্রামের কোনো শীতের সকাল ফিরে এসেছে।

এই দোকানে শুধু মালাই চা নয়, সঙ্গে পাওয়া যায় দুধ চা আর রসমালাই চাও। রসমালাই চা যেন মিষ্টির প্রতি মানুষের চিরকালীন ভালোবাসাকে নতুনভাবে তুলে ধরে। প্রতিটি চায়ের দামও বেশ সাশ্রয়ী। দুধ চা ৩০ টাকা, মালাই চা আর রসমালাই চা ৫০ টাকা করে। পোড়া রুটির দাম মাত্র ২০ টাকা। এখানে মিলবে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজাও। মালাই চা, পোড়া রুটি আর তিলের খাজা এই তিনের দাম মাত্র ১০০ টাকা । এমন দাম আর স্বাদের মিশ্রণ, সত্যি বলতে খুব কম জায়গাতেই পাওয়া যায়।

তবে এখানে চা পান করতে গেলে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। সন্ধ্যার পর থেকেই লম্বা লাইন পড়ে যায়। দোকানের তিন বন্ধু অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিদিন ৩৫-৪০ লিটার দুধ আর ২০০টা রুটি বিক্রি করেন। হাসিমুখে সবার অর্ডার নেওয়া, চায়ের স্বাদ ঠিক রাখা - সবকিছু সামলান তারা।

দোকানটার পরিবেশ এমন যে এখানে এসে সময় যেন থেমে যায়। বটগাছের নিচে রাখা টুলে বসে থাকা মানুষগুলোর মুখে শান্তি। চায়ের ধোঁয়া ভেসে ভেসে আসছে, পোড়া রুটির মিষ্টি গন্ধে ভরে উঠছে বাতাস। কেউ বন্ধুর সঙ্গে এসেছেন, কেউ বা পরিবারের সঙ্গে। গল্প চলছে, চায়ের চুমুকে শীতের ক্লান্তি দূর হচ্ছে।

'মুহূর্ত' শুধু একটি ফুড কার্ট নয়, এটি এক টুকরো আনন্দের গল্প। এখানে এলে মনে হবে, খাবার শুধু পেট ভরানোর জন্য নয়, এটি মানুষকে কাছে আনার, একসঙ্গে হাসি ভাগ করে নেওয়ার একটি মাধ্যম। চায়ের প্রতিটি চুমুক আর পোড়া রুটির প্রতিটি কামড়ে আপনি পাবেন এমন এক স্বাদ, যা সহজে ভোলা যাবে না।

যদি শীতের সন্ধ্যায় কখনো ক্লান্ত লাগে, একটু উষ্ণতা বা শান্তি খুঁজতে মন চায়, তবে মিরপুরের লাভ রোডের এই ফুড কার্টে ঢু মেরে আসতে পারেন। এখানে আপনি শুধু চা আর রুটি পাবেন না, পাবেন একরাশ ভালো লাগা আর একটি ছোট্ট আনন্দের মুহূর্ত। এমন মুহূর্ত, যা আপনাকে বারবার এই জায়গায় ফিরে আসার তাগিদ দেবে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Finance adviser sees no impact on tax collection from NBR dissolution

His remarks came a day after the interim government issued an ordinance abolishing the NBR and creating two separate divisions under the finance ministry

3h ago