নিকলীর পথে তোতা মিয়ার ৮০ রকম ভর্তার রেস্তোরাঁ

ছবি: মন্জুরুল হক/ স্টার

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কের কাপাসিয়া ফকির মজনু শাহ সেতু পেরিয়ে আঁকাবাঁকা পথ। ১০ কিলোমিটার দূরে টোক বাইপাস গিয়ে দেখা যায়, ৫০টার মতো বাইক। সেখান থেকে একটু এগিয়ে সড়কের বামে ঘুরতেই তোতা মিয়ার রেস্তোরাঁ 'নিরিবিলি'।

এই রেস্তোরাঁতে মেলে নানা স্বাদের ৮০ রকমের ভর্তা। শুধু তাই নয়, এখানে স্বাদ নিতে পারেন ৭০ রকমের তরকারিরও। ঢাকা থেকে নিকলী যাওয়ার পথে লোভনীয় এসব খাবারের খোঁজে অনেকেই ঢুঁ দিয়ে যান এখানে।

শুক্রবারে দারুণ ব্যস্ত থাকেন রেস্তোরাঁটির মালিক তোতা মিয়া। এরমধ্যেই সময় দিলেন তিনি।

জানালেন, তাদের ৮০ রকম ভর্তা আর ৭০ প্রকার তরকারি রান্না হয় গ্রাম থেকে আনা টাটকা সবজি ও শীতলক্ষ্যা,বানার ও ব্রহ্মপুত্র নদের মাছ দিয়ে। মাংস রান্না হয় গেরস্থের পালিত কবুতর, হাঁস, দেশি মুরগির। হাতে বাটা হলুদ-মরিচ দিয়ে লাকড়ির চুলায় রান্না হয়। ফলে খাবারের স্বাদ হয় দারুণ। সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই রেস্তোরাঁ।

 

মেনু

সবজির মধ্যে থাকে কাঁচকলা, ধনেপাতা, টমেটো, ঢ্যাঁড়স, ধুন্দল, শিম, কাঁচা পেঁপে, বেগুন, বরবটি, বাঁধাকপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, ফুলকপি, জালিকুমড়া, কাঁকরোল, ঝিঙা, চিচিঙা।

মাছ থাকে চান্দা, মলা, টেংড়া, রুই, কাতলা, কাঁচকি, চিতল, খলশে, বেলে, আইড়, বাইম, বইটকা, শোল, দেশি ভেটকি, পুঁটি, মাগুর, শিং, চিংড়ি, পাবদা, কই।

মাংসের মধ্যে কবুতর, হাঁস, দেশি মুরগি, গরু, খাসি এসব রান্না হয়। সব মিলিয়েই ৭০ পদের তরকারি ও ৮০টি ভর্তা থাকে।

ছবি: মন্জুরুল হক/ স্টার

এ ছাড়া, থাকে হাতে তৈরি আচার। বরই আচার, জলপাই আচার, মিক্সড আচার, চালতার আচার, তেঁতুল আচার। পাবেন আগুন পানও।

দাম

মাছ-মাংসের তরকারি ১৮০ টাকা এক প্লেট। ১০০ টাকার ভর্তা প্যাকেজে মেলে ১০ প্রকার ভর্তা, ১০০ টাকার সবজি প্যাকেজে মেলে ৮ প্রকার সবজি। ২০০ টাকার ভর্তা প্যাকেজে ২২ প্রকার ভর্তা আর ২০০ টাকার সবজি প্যাকেজে ১৬ প্রকার সবজি পাওয়া যায়। এসব প্যাকেজে ২ থেকে ৫ জন খেতে পারেন। সব প্যাকেজের সঙ্গে আছে ভাত।

রান্না ও পরিবেশ

রেস্তোরাঁর ম্যানেজার দিলরুবা জানান, তার মা, চাচি, বোন, ভাবি, ভাতিজি, প্রতিবেশি সবাই মিলে রান্না করেন। তাই চিরায়ত গ্রামীণ ও ঘরোয়া রান্নার স্বাদ পাওয়া যায় সব খাবারে। রেস্তোরাঁর আকর্ষণ বাহারি সব ভর্তা। নিরিবিলি পরিবেশ বলেই হয়তো নাম 'নিরিবিলি'রেস্তোরাঁ'। একতলা রোস্তারাঁয় কোলাহল নেই। শুক্র ও শনিবার গড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ অতিথি হয়। রান্নার বাবুর্চি ২০ জন, খাবার পরিবেশনের লোক ৮ জন। সবজি কিনে আনা, জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনাকাটায় থাকেন আরও কয়েকজন। সবমিলিয়ে ৩০ জন কাজ করেন এ রেস্তোরাঁয়।

তোতা মিয়ার ভাই মোমতাজ উদ্দিন জানান, ২০০১ সালে টোক বাজারে তোতা মিয়া তার স্ত্রীকে নিয়ে ছোট একটা ঘরে ভাড়ায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন। ৮ বছর পর নিজের বাড়িতে ব্যবসা স্থানান্তর করেন। পরিবারের সদস্য ও এলাকার কয়েকজন নারীকে নিয়ে কাজ করতেন তখন। প্রথম দিকে ২০ প্রকারের ভর্তা বিক্রি হতো। পরে ভর্তার সংখ্যা আর ব্যবসার পরিসর-দুটোই বাড়ে। 

খাওয়ার অভিজ্ঞতা

হৃদয় ও তার সহর্মীরা এসেছেন পাশের জেলা কিশোরগঞ্জ থেকে।

তিনি বলেন, 'অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল খাব। তাই বন্ধুবান্ধবসহ চলে এলাম। এখানকার ভর্তা দারুণ সুস্বাদু।'

তোতা মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে আসা ইয়াছিন বলেন, 'পরিবারের সঙ্গে গাজীপুর শাপলা বিল দেখতে এসেছি। আজ এখানে এসে ভাত খাব আগেই প্ল্যান ছিল।'

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ চাকরি করেন সোহাগ। তিনি এসেছেন সকালের নাশতা করতে। বললেন, '৫ মিশালি খাবার খেয়েছি। আমরা এদিকে এলে এই রেস্তোরাঁয় খেতে আসি।'

রেস্তোরাঁয় সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্টজনের সঙ্গে তোতা মিয়ার ছবি টানানো।

তোতা মিয়া বলেন, 'আবদুল হামিদ স্যার নিজের বাড়িতে (কিশোরগঞ্জের মিঠামইন) আসা-যাওয়ার সময় প্রায়ই এখানে খেয়ে যান। অন্যরাও নিকলী ঘুরতে যাওয়া-আসার পথে ভাত খেয়ে যান। স্মৃতি হিসেবে ছবিগুলো টানিয়ে রেখেছি।'

তোতা মিয়া জানান, বর্ষায় কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে ঘুরতে প্রচুর পর্যটক আসেন। যাওয়া-আসার পথে তার রেস্তোরাঁয় খেয়ে যান তারা। অনেকে নাশতা করে যান। আবার ফেরার পথে দুপুরের খাবার খেয়ে ঢাকা চলে যান।

শীতকালে হাওরের পর্যটক থাকে না। তবুও ঢাকা, সিলেট, নরসিংদী, কুমিল্লাসহ সারাদেশ থেকে পর্যটকরা রেস্তোরাঁয় আসেন। অনেকে টোক বাজারে শুধু খাঁটি দুধের মালাই চা খেতেও আসেন। শখানেক মালাই চায়ের দোকান রয়েছে বাজারে।

  

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

5h ago