টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ৫ জন আর বেঁচে নেই: মার্কিন কোস্টগার্ড
আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযান টাইটানের ৫ যাত্রী আর বেঁচে নেই।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার পরিকল্পনাকারী প্রতিষ্ঠান ওশ্যানগেট এক্সপেডিশানস বৃহস্পতিবার রাতে এমন কথাই জানিয়েছে।
নিখোঁজ ডুবোযান টাইটানের উদ্ধার অভিযান পরিচালনাকারী মার্কিন কোস্টগার্ডের কর্মকর্তারাও একই কথা বলেছেন।
ডুবোযান টাইটান পরিচালনাকারী ওশ্যানগেটের এক বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নিখোঁজ টাইটানের ভেতরের ৫ পর্যটককে মৃত বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
'তারা সত্যিকারের পর্যটক ছিলেন যাদের ভেতরে অ্যাডভেঞ্চারের আলাদা একটা স্পিরিট ছিল,' বিবৃতিতে বলা হয়।
ডুবোযান টাইটান গত রোববার সকালে অভিযান শুরু করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, কানাডার কাছে আটলান্টিক মহাসাগরের এক দুর্গম এলাকায় পানির নিচে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে প্রায় ২ ঘণ্টা থাকার কথা ছিল ডু্বোযানটির।
কিন্তু, এ সময়সীমা শেষ হওয়ার খানিক সময় আগে পানির ওপরে থাকা যোগাযোগ রক্ষাকারী জাহাজের সঙ্গে ডুবোযানটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এই অভিযানে টাইটানের যাত্রী ছিলেন, ওশ্যানগেটের ৬১ বছর বয়সী সিইও স্টকটন রাশ, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮), তার ছেলে সুলেমান (১৯) ও ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং (৫৮)। এছাড়া তাদের সঙ্গে ছিলেন ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি ও বিখ্যাত পর্যটক পল-হেনরি নারজিওলেট (৭৭)।
৫ দিন উদ্ধারাভিযান পরিচালনার পর মার্কিন কোস্টগার্ড বৃহস্পতিবার সকালে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে আরেকটি ধ্বংসাবশেষের খোঁজ পায়।
এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন কোস্টগার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল এম জন মাগার বলেন, ধ্বংসাবশেষটি টাইটানের বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে টাইটান ধ্বংসের কারণ কী তা স্পষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ডুবোযানে থাকা ৫ অভিযাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি জানান, টাইটানের ৫টি বড় টুকরো পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার হরাইজন আর্কটিকের একটি আরওভি আটলান্টিকের তলদেশে ওই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়।
পরিচালনা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডুবোযানে ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন মজুত ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তা ফুরিয়ে যাওয়ার কথা।
ইতোমধ্যে জানা গেছে, এই ডুবোযানটিতে বেশ কয়েকবার গুরুতর কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিল এবং এটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনও পায়নি।
ওশ্যানগেট এক্সপিডিশানস নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সাল থেকে টাইটানের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে অভিযান শুরু করে। ২০২০ সালে কারিগরি পরীক্ষায় ডুবোযানের কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়।
টাইটান ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর অশ্যানগেট ঘোষণা দিয়েছিল তারা ডুবোযানটিকে গভীর সমুদ্রে অভিযানের উপযোগী করে তোলার জন্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে কাজ করছে।
টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে অভিযানকে বড় আকারে প্রচার করে ওশ্যানগেট। তারা দাবি করে, যারা এই অভিযানে যাবেন, তারা শুধু পর্যটকই নন, বরং তারা 'নাগরিক বিজ্ঞানী' এবং তারা একটি 'বৈজ্ঞানিক গবেষণায়' অংশ নিচ্ছেন।
টাইটানিক ও টাইটান
১৯১২ সালে তখনকার সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ হিসেবে স্বীকৃত আরএমএস টাইটানিক তার প্রথম যাত্রায় আটলান্টিক মহাসাগরে একটি হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা খায়। জাহাজটি ডুবে যায় এবং ১ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি যাত্রী মারা যান।
জাহাজটির ধ্বংসাবশেষ এখন ভূপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৫০০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস এর কেপ কডের ৯০০ মাইল পূর্বে ও নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেইন্ট জন থেকে ৪০০ মাইল দক্ষিণে অবস্থিত।
১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়।
২০১৮ সালে ওশ্যানগেট টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর জন্য পর্যটকদের বহন করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বজ্রপাতে ডুবোযানের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হয় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে আরও একবার এই অভিযান শুরুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
পরবর্তীতে কার্বন ফাইবার ও টাইটেনিয়াম দিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয় টাইটান। পুনর্নির্মিত টাইটান ৫ জন মানুষকে নিয়ে পানির নিচে ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম ছিল।
Comments