নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন ছিল না ঝুঁকিপূর্ণ ডুবোযান টাইটানের

আটলান্টিক মহাসাগরের তলায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যটকদের দেখাতে ডুব দিয়েছিল যে ডুবোযান, সেই টাইটানের খোঁজ এখনও মেলেনি। ইতোমধ্যে জানা গেছে, এই ডুবোযানটিতে বেশ কয়েকবার গুরুতর কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছিল এবং এটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনও পায়নি।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল মঙ্গলবার জানায়, ডুবোযান টাইটান একবার বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বড় আকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এছাড়াও এটি নির্মাণের পর গভীর সাগরের চাপ সামলানোর সক্ষমতা না থাকায় একে আবারো গোঁড়া থেকে নির্মাণ করা হয়।

ওশ্যানগেট এক্সপিডিশানস নামের প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সাল থেকে টাইটানের মাধ্যমে গভীর সমুদ্রে অভিযান শুরু করেছে। গত রোববার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ হাজার ৫০০ ফুট নিচে নিখোঁজ হয় এই ডুবোযান।

২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর জন্য পর্যটকদের বহন করার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বজ্রপাতে ডুবোযানের ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হয় ওশ্যানগেট। ২০১৯ সালে আরও একবার এই অভিযান শুরুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। কানাডার নৌচলাচল আইন মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে সেবার যাত্রা বন্ধ হয়।

২০২০ সালে কারিগরি পরীক্ষায় ডুবোযানের কিছু ত্রুটি চিহ্নিত হয়। জানা যায়, এতে 'সাইক্লিক ফ্যাটিগ' সমস্যা রয়েছে, যার ফলে এটি পানির ৩ হাজার মিটারের নিচে যাওয়ার সক্ষমতা হারায়। স্বভাবতই, এই ডুবোযান নিয়ে আরও অনেক গভীরে থাকা টাইটানিকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।

পরবর্তীতে কার্বন ফাইবার ও টাইটেনিয়াম দিয়ে নতুন করে নির্মাণ করা হয় টাইটান। পুনর্নির্মিত টাইটান ৫ জন মানুষকে নিয়ে পানির নিচে ৪ হাজার মিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম ছিল।

টাইটান ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর অশ্যানগেট ঘোষণা দিয়েছিল তারা ডুবোযানটিকে গভীর সমুদ্রে অভিযানের উপযোগী করে তোলার জন্য মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার সঙ্গে কাজ করছে।

ধারণা করা হয়েছিল রোববার টাইটানের সর্বশেষ যাত্রার আগে এর সকল যান্ত্রিক ত্রুটি সারিয়ে ফেলা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ ডুবোযানের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি।

অনুমোদনহীন, পরীক্ষামূলক ডুবোযান

স্টকটোন রাশ ২০০৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন। তিনিও নিখোঁজ ৫ যাত্রীর অন্যতম।

রোববারের যাত্রা ছিল টাইটানের তৃতীয় অভিযান। ওশ্যানগেট ঘোষণা দিয়েছিল, এ বছরই তারা ৬টি অভিযানের আয়োজন করবেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ওশ্যানগেট প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক ও মেক্সিকো উপসাগরে সমুদ্রের গভীরে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি পর্যটনের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নেওয়ার বিষয়টির ওপরও জোর দেয়।

ওশ্যানগেটের ওয়েবসাইটের দাবি অনুযায়ী, তারা ১৪টি অভিযান ও ২০০ বার গভীর সমুদ্রে যাওয়ার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।

এ মুহূর্তে প্রতিষ্ঠানটির ৩টি ডুবোযান রয়েছে, যার প্রতিটি ৫ জন করে যাত্রী বহনে সক্ষম।

টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপে অভিযানকে বড় আকারে প্রচার করে ওশ্যানগেট। তারা দাবি করে, যারা এই অভিযানে যাবেন, তারা শুধু পর্যটকই নন, বরং তারা 'নাগরিক বিজ্ঞানী' এবং তারা একটি 'বৈজ্ঞানিক গবেষণায়' অংশ নিচ্ছেন।

ওশ্যানগেট তাদের ওয়েবসাইট ও অন্যান্য প্রচারণায় নিজেদেরকে এ ধরনের অভিযানের বিশেষজ্ঞ ও দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হিসেবে দাবি করে। তা সত্ত্বেও, টাইটানের প্রত্যেক যাত্রিকে একটি মুচলেকায় সাক্ষর করতে হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, 'এই পরীক্ষামূলক যানটি কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন বা স্বীকৃতি পায়নি এবং এ অভিযানে শারীরিক আঘাত, মানসিক অসুস্থতা বা মৃত্যুও ঘটতে পারে।'

ডুবোযানের নানা সীমাবদ্ধতা

গভীর সমুদ্রে বিপদজনক অভিযান পরিচালনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদেরকে দাবি করলেও টাইটানের নিয়ন্ত্রণ করা হয় একটি প্লেস্টেশন কনসোলের গেমিং কন্ট্রোলার দিয়ে এবং এতে শুধু একটিই জানালা রয়েছে।

যাত্রীদের কোনো বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না এবং এই অভিযানে অংশ নিতে তাদের কোনো বিশেষ অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন হয় না। আড়াই লাখ ডলারের টিকিট কাটার পাশাপাশি শুধু ১০ ফুট লম্বা মই বেয়ে ওঠা-নামার সক্ষমতা ও চেয়ারের ওপর দাঁড়াতে পারলেই এই অভিযানে অংশ নেওয়া যায়।

এই ২২ ফুট লম্বা ডুবোযানে কোনো জিপিএস ব্যবস্থা নেই। এটি ইলন মাস্কের স্টারলিংকের মাধ্যমে সমুদ্রপৃষ্ঠে অবস্থানকারী মাদার শিপ 'পোলার প্রিন্সের' সঙ্গে যোগাযোগ করে।

১৫ মিনিট পর পর টাইটান পোলার প্রিন্সকে নিজের অবস্থান জানায়। যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ওপর দিয়ে ভেসে থাকার সময় সর্বশেষ টাইটানের অবস্থান জানানোর বার্তাটি আসে।

সিবিএস নিউজের এক সংবাদদাতা গত বছর ওশ্যানগেটের এক অভিযানে অংশ নেন।

তিনি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনায় বলেন, 'আমি খেয়াল না করে পারিনি, ডুবোযানের অনেক কিছুই জোড়াতালি দিয়ে বানানো মনে হয়েছিল।'

তিনি আরও জানান, মনে হয়েছে, অনেক যন্ত্র ও উপকরণ তারা সুপার মলের শেলফ থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।

'তারা একটি প্লেস্টেশন ভিডিও গেম কন্ট্রোলার দিয়ে ডুবোযানটি চালাচ্ছিলেন', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Tanvir takes five as Tigers clinch 2nd Sri Lanka ODI

Bangladesh captain Mehidy Hasan Miraz has won the toss and opted to bat first in the second ODI against Sri Lanka, looking to keep the three-match series alive with a win at the R Premadasa Stadium today. 

14h ago