পটুয়াখালীতে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ, জনমনে আতঙ্ক

পটুয়াখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় মোট এক হাজার ৮১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্থ। উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে জনদুর্ভোগ ঘটাতে পারে। ছবিটি রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

পটুয়াখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় মোট এক হাজার ৮১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। আসন্ন ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উচ্চ জলোচ্ছ্বাস হলে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে জনদুর্ভোগ ঘটাতে পারে।

কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গৈয়াতলার বেড়িবাঁধটি সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া আন্দারমানিক নদীর পাড়ের নদীর পারের বাঁধটি অনেক স্থান ভেঙে রয়েছে। আবার অনেক স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। জোয়ারের প্লাবনে যেকোনো সময়ে বাঁধটি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বেড়িবাঁধের ওপর ছোট ঝুপরিতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম (৬২)। পেশায় তিনি একজন জেলে।

তিনি জানান, বেড়িবাঁধ এমনিতেই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। ঘূর্ণিঝড় হলে এর প্রভাবে পানি বেড়ে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতে তার শেষ আশ্রয়স্থল বসতঘরটি আবার ভেসে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'সিডরের জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধের সঙ্গে আমার বসতঘরও ভেসে গিয়েছিল। আমার স্ত্রী মিনারা বেগম (৫০) শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ভেসে ভেসে গাছ ধরে কোনোরকমে বেঁচেছিলেন। পরবর্তীতে নতুন করে ভেতরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নতুন বাঁধের ভেতরে আবার নতুন করে আমরা বসতি গড়েছি। কিন্তু সেই বাঁধ আবার ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে।'

আরেক বাসিন্দা মো. হানিফ হাওলাদার (৪৫) জানান, সিডর ও পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের বাঁধ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সেটির অবস্থা নড়বড়ে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস হলেই পানির চাপে বাঁধটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমনকি বাঁধ ভেঙে ভেসে যেতেও পারে।

হানিফের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩৫) বলেন, 'ঝড়-বন্যার খবর পেলেই চার সন্তান লইয়া আতঙ্কে থাকতে হয়। বাঁধ ভাঙলে তাগো ঝুপড়ি ঘরটাও পানিতে ভাসিয়ে নিয়া যাবে।'

এ বিষয়ে নীলগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া বলেন, 'নিম্নচাপের প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে যদি তিন থেকে পাঁচ ফুট পানি বাড়ে তাহলেই ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে অবাধে পানি ভেতরে প্রবেশ করবে। লোনা পানিতে প্লাবিত হবে গৈয়াতলা, সোনাতলা ও মোস্তফাপুর এই তিন গ্রামের বাড়িঘরসহ অন্তত ২০ হাজার একর ফসলী জমি।'

এদিকে গৈয়াতলা এলাকার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভাঙন পয়েন্টে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছে পাউবো।

পাউবো কলাপাড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো, রাকিব হোসেন বলেন, 'কলাপাড়ার নীলগঞ্জের গৈয়াতলা এলাকায় ৭০০ মিটার বেড়িবাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে জিওব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও কলাপাড়ার ধুলাশ্বর এলাকায় ৬০ মিটার, রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তজে ১২০ মিটারসহ দুই উপজেলায় মোট ৬ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।'

পাউবো পটুয়াখালী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো, আরিফ হোসেন বলেন, 'পটুয়াখালীর এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে মির্জাগঞ্জের পিপড়াখালীতে পায়রা নদীর পাড়ে ২ কিলোমিটার, কাকড়াবুনিয়া এলাকায় প্রায় দেড় কিলোমিটারসহ বিভিন্ন অংশে মোট ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।'

দুর্যোগের সময় কোথাও ভাঙন দেখা দিলে ১৬ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Govt relieves Kuet VC, Pro-VC of duties to resolve crisis

A search committee will soon be formed to appoint new candidates to the two posts

3h ago