ঘূর্ণিঝড় রিমালে পটুয়াখালীতে ৪৭৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত
ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে অন্যান্য অবকাঠামোর পাশাপাশি ৪৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
ক্ষতিগ্রস্ত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এগুলো মেরামত বা সংস্কার করতে প্রায় ২০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
গত ২৬ ও ২৭ মে দুই দিন ধরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল পটুয়াখালীসহ দেশের উপকূলে তাণ্ডব চালায়। প্রবল বাতাসের সঙ্গে ভারী বর্ষণে উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়। জেলায় ৮৪ হাজার ৫০০ পরিবারের ৩ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬ হাজার ৮২টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ এবং ৩১ হাজার ৩৬৪টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ৪৭৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা গেছে। কলাপাড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মেনহাজপুর হাক্কানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফ উজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রবল বাতাসে দুমড়ে-মুচড়ে মাটির সঙ্গে মিশে আছে প্রতিষ্ঠানটি। কিছু অংশের টিনের চালা পুরোটাই উড়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে। এমতাবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। ২৫০ জন শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করে।'
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রবিউল হোসেন বলে, 'ঘূর্ণিঝড়ে স্কুলটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হওয়ায় এখন আমরা লেখাপড়া করতে পারছি না।'
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মো. জলিল বলেন, 'এই স্কুলটি ছাড়া আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব স্কুলটি মেরামত করার জন্য অনুরোধ করছি।'
কলাপাড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মনিরুজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কলাপাড়া উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪টি কলেজ, ১২টি স্কুল ও ২৫টি মাদ্রাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই টিনশেডের ঘর। উপজেলায় প্রায় দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।'
গলাচিপা উপজেলার আমখোলা হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ভেঙে ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু আদালতে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গেলে পার্শ্ববর্তী আমখোলা কলেজের একটি পরিত্যক্ত টিনশেডের ঘরে ক্লাস চালানো হচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড়ে ঘরটির টিনের চালা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।
স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বলে, 'ঝড়ে স্কুলের ক্ষতি হয়েছে, এখন আমাদের লেখাপড়া করতে কষ্ট হচ্ছে।'
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষা আবু জাফর ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটিতে ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী আছে। স্কুল ভবন নির্মাণে ৫ বছর ধরে অচলাবস্থা চলছিল। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সমস্যার সমাধান হয়েছে এবং সম্প্রতি ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন। তবে কলেজের পরিত্যক্ত একটি ভবনে এতদিন ক্লাস চালাতে পারলেও সেটি ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি।'
পটুয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোল্লা বখতিয়ার রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৫৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে কলাপাড়া উপজেলায় ৭৩টি, গলাচিপায় ৬৯টি, রাঙ্গাবালীতে ৩১টি, দশমিনায় ২৭টি, মির্জাগঞ্জে ২১টি, দুমকিতে ১৬টি, বাউফলে ১১টি ও পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ৮টি। এসব বিদ্যালয় সংস্কার করতে সাড়ে ৪ কোটি টাকা প্রয়োজন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।'
ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ২১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে কলাপাড়ায় ৪৯টি, গলাচিপায় ৪২টি, সদর উপজেলায় ৩৪টি, দশমিনায় ২৯টি, বাউফলে ২২টি, মির্জাগঞ্জে ১৬টি, দুমকিতে ৮টি ও রাঙ্গাবালীতে ৭টি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. মজিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কারে প্রায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার প্রয়োজন।'
Comments