লাঠিটিলায় সাফারি পার্ক প্রকল্প অনুমোদনের প্রতিবাদে ১৮ নাগরিকের বিবৃতি

সাফারি পার্ক তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে জরিপের কাজ। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার লাঠিটিলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের ১৮ বিশিষ্ট অধিকারকর্মী ও পরিবেশ সংগঠক।

আজ শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা সরকারকে এ প্রকল্প থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।

বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের পরিবেশ ও মানবাধিকার কর্মীরা এই বন সংরক্ষণে সংশ্লিষ্টদের বারবার আহ্বান জানালেও, তা না শুনে সাফারি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে দেশের পরিবেশ ও বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সরকারের উদাসীনতা প্রকাশ পেয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৩৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকার 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) অনুমোদন দিয়েছে।

পাথারিয়া হিল রিজার্ভের জুরি ফরেস্ট রেঞ্জের অধীনে লাঠিটিলা বিটের ৫ হাজার ৬৩১ একর ভূমিতে এই সাফারি পার্কটি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে বন অধিদপ্তর।

আন্তঃসীমান্ত বনটি ভারতের আসাম প্রদেশের বিস্তীর্ণ বনভূমির সঙ্গে যুক্ত এবং বন আইনের অধীনে ১৯২০ সাল থেকে একটি সংরক্ষিত বন।

জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের মতে, সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলে ২ শতাধিক প্রজাতির বাস। এর মধ্যে আছে সংকটাপন্ন প্যাঙ্গোলিন, বিপন্ন এশীয় হাতি, মেছোবিড়াল, উল্লুক, বিশ্বব্যাপী বিপন্ন চিতাবাঘ।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রাকৃতিক বনকে সুরক্ষা দেওয়া ও দখল হয়ে যাওয়া বনভূমি উদ্ধার যেখানে অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা, সেখানে লাঠিটিলায় দেশের তৃতীয় সাফারি পার্ক নির্মাণ প্রাকৃতিক বন রক্ষায় সরকারের চরম অবহেলার বহিঃপ্রকাশ।

বিবৃতিদাতারা বলেন, এর আগে কক্সবাজারের চকরিয়ায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ১ এবং গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক ২ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই দুই সাফারি পার্ক পরিচালনা নিয়ে বন বিভাগের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্ব অবহেলা ও চরম স্বেচ্ছাচারিতায় একের পর এক বন্যপ্রাণী মৃত্যুতে নাগরিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। দুটি সাফারি পার্ক পরিচালনায় ব্যর্থতা ও পরিবেশের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও লাঠিটিলায় আরেকটি সাফারি পার্ক নির্মাণের চেষ্টা অনভিপ্রেত।

বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু লোকের আর্থিক লাভ ছাড়া এ প্রকল্প দেশের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্রের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এতে আরও বলা হয়, মানুষের মতামত উপেক্ষা করে লাঠিটিলা ধ্বংসের এই প্রকল্প এগিয়ে নিলে তা বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলনে রূপ নিবে।

বিবৃতিদাতারা হলেন-মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুলতানা কামাল, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রধান নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল, সিলেট মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের বেসরকারি উপদেষ্টা এম এস সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মোহাম্মদ খান, আদিবাসী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের ফাদার সমন্বয়ক জোসেফ গোমেজ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মাদ আলী, তরুপল্লবের সাধারণ সম্পাদক মোকারম হোসেন, সুন্দরবন ও উপকুল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আব্দুল করিম কিম ও কুবরাজ আন্তোপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং।

 

Comments

The Daily Star  | English
Tarique Rahman on preventing dictatorship

Election only way to promptly implement state reforms: Tarique

Urging the government not to take too much time in holding polls in the name of reforms, BNP Acting Chairman Tarique Rahman has said election is the only way to promptly implement the state-overhauling proposals by elected representatives

44m ago