সিলেটে বন্যায় দুর্ভোগ বাড়ছে, আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬ হাজার ২৭১ জন

সুরমায় পানি কমলেও বাড়ছে কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীতে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির গতকালের চিত্র। ছবি: শেখ নাসির/স্টার

গত ৩০ মের পর থেকে সিলেট বিভাগে তিন দফা বন্যার ফলে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে এবং উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বর্ষণে গত সোমবার থেকে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি নেমে যাওয়া বিস্তীর্ণ এলাকা আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফেরা মানুষ আবারও আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে বাড়ছে কুশিয়ারা, মনু ও খোয়াই নদীর পানি। এ ছাড়াও বিপৎসীমার নিচে নেমেছে সারি-গোয়াইন নদী।

তথ্যমতে, আজ বুধবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় বিপৎসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সিলেট নগরীতে দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুশিয়ারা নদীর পানি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার অমলসীদে বিপৎসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার উপরে, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলায় ৪৩ সেন্টিমিটার উপরে, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ৯৯ সেন্টিমিটার উপরে এবং মৌলভীবাজারের শেরপুরে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে উজানে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ায় সিলেটে সারি ও গোয়াইন নদীর পানি একদিনে ১০৮ সেন্টিমিটার কমে দ্রুত নেমে জৈন্তাপুর উপজেলার সারিঘাটে বিপৎসীমার ১১১ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মৌলভীবাজারে মনু নদীর পানি মনু রেলওয়ে ব্রিজে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার এবং মৌলভীবাজার সদরে ৪৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার এবং হবিগঞ্জ সদরে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলার ৮৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের ১৬ হাজার ২৭১ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় আট হাজার ৪০৭ জন, মৌলভীবাজারে ছয় হাজার ৬৪ জন, সুনামগঞ্জে এক হাজার ৩২৫ জন এবং হবিগঞ্জে ৪৯৩ জন।

মানুষ ছাড়াও আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে এক হাজার ৯৬৪টি গবাদিপশু, যার মধ্যে সিলেটে এক হাজার ২০৩টি, মৌলভীবাজারে ৫৪৭টি, সুনামগঞ্জে ১২৩টি ও হবিগঞ্জে ৯১টি।

সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী বলেন, 'চলমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে অতিবৃষ্টির ফলে আবারও বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। প্রশাসন জনদুর্ভোগ লাঘবে আক্রান্ত প্রতিটি পরিবারের কাছে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে।'

সিলেট বিভাগে চলতি বন্যা পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত চার হাজার ২৩৫ টন চাল, এক কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা নগদ, ২৯ হাজার ৮৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৪০ লাখ টাকার শিশু খাদ্য এবং ৪০ লাখ টাকার গোখাদ্য ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ চলছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।

'নতুন করে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আরও ত্রাণ সহায়তা চেয়েছি মন্ত্রণালয়ের কাছে। বন্যা শেষে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে', বলেন তিনি।

Comments