পুলিশের মামলায় আসামি বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের কেউ মৃত, কেউ প্রবাসী

মামলার ১১ নম্বর আসামি লোকমান হোসেনের মৃত্যুসনদ। ছবি: সংগৃহীত

মৌলভীবাজোরের জুড়ীতে মিছিল করার সময় নাশকতা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের আসামি করে যে মামলা করেছে, তাতে মৃত ও বিদেশে অবস্থানকারীদের নাম এসেছে।

গত শুক্রবার জুড়ী থানায় দায়ের করা এই মামলার ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতে জুড়ীতে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, 'জামায়াত-শিবির ও বিএনপির কর্মীরা জনসাধারণের যান চলাচল বন্ধ ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার জন্য উত্তেজিত হয়ে রাস্তায় মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। পুলিশের বাধা অমান্য করে তারা মিছিল শুরু করেন। পরে নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে সরকারি কাজে বাধা দেন।'

অনুসন্ধানে জানা যায়, এজাহারের ১১ নম্বর আসামি লোকমান হোসেন উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামের রুমুজ আলীর ছেলে। লোকমান মারা যান ২০১৭ সালের ৪ আগস্ট।

অন্যদিকে মামলার ছয় নম্বর আসামি করা জায়েদ আহমদ সাত বছর আগে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। তিনি উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মৃত ফয়জুল্লাহর ছেলে।

এদিকে ২৩ নম্বর আসামি ফুলতলা ইউনিয়নের বুরহান উদ্দিন গত ২ বছর ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আছেন।

আরেক আসামি ফুলতলা বাজারের ইব্রাহিম আলীর ছেলে নাঈম উদ্দিন আট বছর আগে প্রথমে কাতার যান। এখন তিনি পর্তুগালে আছেন। নাঈমকে এই মামলার ২৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

এ অবস্থায় মৃত ও প্রবাসীদের নামে মামলার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আসামিদের স্বজন ও স্থানীয়রা।

মামলার ১১ নম্বর আসামি মৃত লোকমান হোসেনের বড় ভাই মাহতাব আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই লোকমান ছয় বছর দুই মাস আগে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। প্রশাসনের কাছে আমার প্রশ্ন, আমার ভাই কবর থেকে উঠে এসে কীভাবে মিছিলে অংশ নিল? মৃত ব্যক্তির নামেই যদি মামলা হয়, তাহলে আমরা যারা জীবিত আছি তাদের ওপর কী ধরনের অত্যাচার চলছে তা একবার আপনারা ভেবে দেখেন।'

লোকমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজাও।

প্রবাসী জায়েদ আহমদের বড় ভাই আব্দুস শুকুরের ভাষ্য, তার ভাই ২০১৮ সাল থেকে প্রবাসে আছেন। তিনি বলেন, 'প্রবাসে থেকেও আমার ভাই কীভাবে মামলার আসামি হলেন তা ভেবে আমাদের অবাক লাগছে। পুলিশের কিন্তু লাগছে না। এমনকি যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, তাদেরও আসামি করা হয়েছে এই মামলায়।'

প্রায় একইরকম অভিমত ব্যক্ত করেন পর্তুগাল প্রবাসী নাঈম আহমেদের বাবা ইব্রাহিম আলী।

পর্তুগাল প্রবাসী নাঈম আহমদের বাবা ইব্রাহিম আলী বলেন, আমার ছেলে প্রায় আট বছর যাবদ প্রবাসে আছে। প্রবাস থেকে কিভাবে মিছিলে অংশ নিল এবং মামলার আসামি তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য অনুসারে মামলার আসামি নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত করে বিষয়টি সংশোধন করা হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
explanations sought from banks for unusual USD rates

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

2h ago