‘বন্যায় সব হারিয়ে অন্যের দেওয়া বনরুটি খেয়ে বেঁচে আছি’

বান্দরবান বন্যা
খাবার না থাকায় প্রতিবেশীর দেওয়া বনরুটি খাচ্ছেন বৃদ্ধা নাগছবি তঞ্চঙ্গ্যা। ছবি: স্টার

ভারী বর্ষণের পর সাঙ্গু নদীর পানি কমে গেছে। বান্দরবানের বানভাসি মানুষেরা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে নিজের ঘরে ওঠার চেষ্টা করছেন। অনেকে উঠে গেছেন, অনেকে ওঠার প্রত্যাশায় ঘর পরিষ্কার করছেন।

বান্দরবান সদর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের রত্নাপুর গ্রামে সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, মাথায় সাদা চুল এক বৃদ্ধ হাতে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে সরাচ্ছেন এবং মাটির ভেতর থেকে কাপড়, আসবাবপত্র বের করছেন। 

পাশে দাঁড়িয়ে আর এক সাদা চুলের বৃদ্ধা এক হাতে এক টুকরো বনরুটি ছিঁড়ে খাচ্ছেন। আর বৃদ্ধের দেওয়া জিনিসগুলো ধরে পলিথিন ঢাকা তাঁবুতে নিয়ে রাখছেন।  

বন্যায় ঘর হারিয়ে অসহায় পয়ে পড়েছেন বান্দরবানের রত্নাপুর গ্রামের বৃদ্ধ নিরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা। ছবি: স্টার

পরিচয় জানতেই দাঁড়িয়ে গেলেন দুজনই। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।

জানা গেল রত্নাপুর গ্রামের বাসিন্দা এই বৃদ্ধ দম্পতি নিরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা (৭৪) ও নাগছবি তঞ্চঙ্গ্যার (৬৫) ঘর মাটির সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে সাম্প্রতিক বন্যায়।

ঘর দেখিয়ে নিরঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা আমাদের বাড়ি। এবারের বন্যায় মাটির ঘরটি বন্যার পানিতে ভেঙে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। এখন কোনো রকম পলিথিন দিয়ে খোলা আকাশের নিচে থাকছি।'  

তিনি বলেন, 'বন্যার পর ৫ কেজি করে ২ বারে ১০ কেজি ত্রাণের চাল পেয়েছি। এই চাল দিয়ে রান্না করে খাবার মতো কিছু নেই। তাই প্রতিবেশীদের দেওয়া বনরুটি খেয়ে আছি।'

'ভেঙে যাওয়া ঘরের মাটি খুঁড়ে পরনের কাপড়, থালা-বাসন খুঁজতেছি বাবা। কাপড় পর্যন্ত পাইনি,' যোগ করেন তিনি। 

বৃদ্ধা নাগছবি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, বন্যার আগে ২ একর জমিতে তারা পেঁপে, আনারস, ধনেপাতা চাষ করেছিলেন। খেতের সব ফসল বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, 'আমরা বেঁচে আছি কেন! পুরোপুরি  নি:স্ব হয়ে বাঁচার চেয়ে মরে গেলে আরও ভাল হতো।'

হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতে শুরু করেন এই বৃদ্ধা।

জানালেন, ছেলে অন্যের গাড়ি চালাত। বন্যার আগে অসুস্থ হয়েছে। এখন সবকিছু মিলিয়ে এত বিপদ থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে জানেন না।

একই এলাকার গোয়াখোলা গ্রামের বাসিন্দা আরেক কৃষক রুস্তম আলী (৫৮) জানান, এলাকায় নিজের ৬ একর জমিতে বিভিন্ন ফল ও সবজিসহ পুকুরে মাছ চাষ করেছিলেন।

বলেন, 'এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়ে আমার সব আবাদ নষ্ট হয়ে গেছে। সব মিলে প্রায় ১৪-১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, জেলা সদর ইউনিয়নের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের রেইচ্ছা খাল এবারের বন্যায় এই খালে সাঙ্গু নদীর পানি ঢুকে প্লাবিত হয়ে ৪ শতাধিক কৃষক পরিবার  ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

তাদের ধান, কলা, পেঁপে, শশা, বেগুন, মরিচসহ মৌসুমি শাক-সবজি, মাছের পুকুর, মাল্টা, লিচু, পেয়ারা বাগান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। 

এলাকাবাসী জানায়, রেইচ্ছা খাল সংলগ্ন থলিপাড়া, সাত কমলপাড়া, লাম্বাঘোনা, রত্নপুর, জিনিঅং পাড়া, পুরাতন ব্রিকফিল্ড মুসলিম পাড়া, দুংখি পাড়া, রোজাপাড়া, গোয়ালিয়া খোলাসহ ৯টি গ্রামের ৮০০ পরিবারের মধ্যে ৪৫০ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় এবারের বন্যায় আমন বীজতলা, রোপা আমন, রোপা আউশ, কলা, পেঁপের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমতলে ২০ হাজার ১২৫ হেক্টরের মধ্যে ৮ হাজার ৮৫৩ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus returns home completing 4-day Japan tour

A flight of Singapore Airlines, carrying the CA landed at Hazrat Shahjalal International Airport at 12:15am on Sunday

2h ago